মোস্তফা ওয়াদুদ: জিকির মোমেনের হৃদয়ে খোরাক যোগায়। জিকিরের মাধ্যমে মিলে আত্মার প্রশান্তি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় জিকির করতেন। তার উম্মতদেরও জিকিরের জন্য বলে গিয়েছেন। জিকির অনেকভাবে করা যায়। আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ এটাও জিকের। সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এগুলো জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ‘ইল্লাল্লাহ’ এর কি জিকির করা যাবে? বিষয়টি প্রশ্ন করেছেন মাওলানা মামুনুল হকের কাছে এক ভাই। প্রতিদিনের ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা পর্ব-২৮’ এ মাওলানা মামুনুল হক দিয়েছেন তার জবাব। ‘ইল্লাল্লাহ’ জিকির করা যাবে কি যাবে না? কি জবাব দিলেন মামুনুল হক? চলুন জেনে আসি!
তিনি বলেন, এক ভাই আমাকে প্রশ্ন করেছেন যে, ইল্লাল্লাহ জিকির করা যাবে কিনা? প্রশ্নে তিনি বলেন, কেউ বলেন ইল্লাল্লাহ জিকির করা জায়েজ, আবার অনেকে বলেন ইল্লাল্লাহ জিকির করা জায়েজ নেই-এমতাবস্থায় আমি দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি? এর সমাধান দিবেন কি?
উত্তরে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ইল্লাল্লাহ জিকির জায়েজ নাকি নাজায়েজ এর মূলত দুটি দিক রয়েছে। একটি দিক হলো আরবে ভাষাগত দিক।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এটি হলো একটি পূর্ণ বাক্য। যার অর্থ, এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ বা মাবুদ নেই। এটি হলো কালিমায়ে তাওহীদ। এখন যদি কালিমায়ে তাওহীদ এর পূর্ণ অংশের একটি অংশ বিশেষকে মনে মনে রেখে বাকি অংশকে মুখে উচ্চারণ করা হয় তাহলে আরবি ভাষার রীতি অনুযায়ী এটির সুযোগ বা অবকাশ রয়েছে। সুতরাং কেউ যদি মনে মনে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ রেখে শুধু ইল্লাল্লাহর জিকির মুখে মুখে করতে থাকে তাহলে অর্থের কোন বিকৃতি এখানে ঘটছে না।
সুতরাং একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে দুইবার ইল্লাল্লাহ বলতে পারে। আবার দুইবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে দশবার ইল্লাল্লাহ বলতে পারে। কিন্তু ‘ইল্লাল্লাহ’ যখন বলবে তখনো মনের মাঝে ‘লা ইলাহার’ এর যে অর্থ সেটা তার মনের মাঝে জাগরুক রেখে ‘ইল্লাল্লাহ’ মুখে উচ্চারণ করতে হবে। এতে ভাষাগত দিক থেকে অর্থের কোনো পরিবর্তন হবে না বা বিকৃতি ঘটার আশঙ্কা নেই।
বরং হাদিসের মাঝে ও আরবি ভাষায় এর বিভিন্ন ব্যবহার আমরা পেয়ে থাকি। হাদিসের মাঝে আছে, হজরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু ‘ইল্লাল্লাহ’ জিকির করেছেন। এবং এর আগে পূর্বের অংশটুকুকে বাক্যে উল্লেখ করেননি। সুতরাং সে হিসাবে শুধু লা-ইলাহা কে উহ্য রেখে ইল্লাল্লাহ মুখে উচ্চারণ করতে ভাষাগত দিক থেকে কোন সমস্যা নেই। এটি হলো ভাষাগত দিক থেকে।
দ্বিতীয় বিষয় হলো এটি একটি জিকির ও ওয়াজিফা হিসাবে।
যেহেতু শুধু ইল্লাল্লাহ জিকির কোরআন ও হাদিসে সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমানিত নেই, এজন্য এটাকে কোন বিশেষ ইবাদত হিসেবে করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি মনে করে ইল্লাল্লাহ বললে বিশেষ কোনো সাওয়াব হবে। বিশেষ কোন সাওয়াবের আশায় বা বিশেষ কোন সাওয়াবের প্রত্যাশায় শুধু ইল্লাল্লাহ জিকির করার কোন সুযোগ নেই। কারণ এটি কোন কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে বা হাদিসের মাধ্যমে বর্ণিত নেই।
তবে হা এটি যদি নির্দিষ্ট কোন সাওয়াবের প্রত্যাশা ছাড়া শুধু আল্লাহ তায়ালার মহাব্বত জাগ্রত করার নিমিত্তে (শুধুমাত্র ওই যে অর্থ ‘এক আল্লাহ এক আল্লাহ’ (ইল্লাল্লাহ এর অর্থ হল এক আল্লাহ এক আল্লাহ)। যদি কোন আল্লাহওয়ালা বুজুর্গ তরিকতের কোন আলেম দেখেন যে ইল্লাল্লাহ জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর মহব্বত সৃষ্টি হয়, তাহলে সেটি একটি কৌশল হিসেবে ও হেকমতে আমাল হিসাবে এটির সুযোগ থাকতে পারে। তবে শুধু ইবাদত হিসেবে ইল্লাল্লাহ কে এবাদত মনে করে বা ইবাদত হিসেবে গণ্য করা যাবে না।
এখন প্রশ্ন হল আপনি যে উত্তর জানতে চেয়েছেন। যে দুই ধরনের বক্তব্য ইসলামী স্কলারগণ দিয়ে থাকেন বা আপনারা পেয়েছেন তাহলে এর সমাধান কি? সমাধান হল, যেহেতু এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে আপনি যদি এটি করতে না চান তাহলে করবেন না।আপনাকে এটা করতে তো কেউ বাধ্য করেনি বা ইল্লাল্লাহ জিকির করতেই হবে এমনটা কেউ বলেনি। সুতরাং যদি আপনার মনে কোন সংশয় থেকে থাকে তাহলে আপনি ইল্লাল্লাহ বলবেন না বা ইল্লাল্লাহ এর জিকির করবেন না। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পুরোটাই বলবেন। তবে এটি বলা যেহেতু ভাষাগত দিক থেকে কোন নিষিদ্ধতা নেই অথবা এটিকে যদি কেউ নির্দিষ্ট এবাদত এর ফরমেট হিসেবে পালন না করে, তাহলে সেটি কেউ করলে করতে পারে তার সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
সুতরাং এটি হলো উত্তম সমাধান। যে কেউ যদি এটা করতে না চায় তাহলে করবেনা। আবার কেউ যদি এটা করে তাহলে ভাষাগত দিক থেকে এটা করার অবকাশ রয়েছে হেকমাতে আমলি হিসাবে এটি করার অবকাশ রয়েছে। কাজেই এই বিষয়ে বিতর্ক এড়িয়ে চলা চাই।
এমডব্লিউ/