নানা সময় নানা ইস্যু নিয়ে মাঠে নামে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আবার এক ইস্যুর নিচে আরেকটি ইস্যু চাপা পড়ে যায় খুব সহজে। সম্প্রতি ফ্রান্সে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবমাননায় একটি জোরদার আন্দোলন করে দলটি। কিন্তু বিপুলসংখ্যক জনসমাগমের এই আন্দোলন সময়ের ব্যবধানে এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। নতুন করে যোগ হয়েছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বসানোর ইস্যু। এটি বেশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এই ইস্যুতে যোগ হচ্ছে নতুন প্রত্যাশা। হাজারো প্রত্যাশার নতুন এই আন্দোলন সফল করতে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে দলটি? নতুন কোনো রোডম্যাপ যোগ হচ্ছে কি এবার? এছাড়া সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের যে কমিটি হয়েছে এসব ব্যাপারে জানতে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের মুখোমুখি হয়েছে আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম। তার সঙ্গে কথা বলেছেন, সাব-এডিটর কাউসার লাবীব।
আওয়ার ইসলাম: ফ্রান্স ইস্যুতে আপনাদের জোরদার একটি আন্দোলন লক্ষ করা গেছে। কিন্তু কিছুদিন হয় আপনারা এ বিষয়ে অনেকটা চুপ। এই ইস্যুর আন্দোলন কী এখানেই শেষ?
গাজী আতাউর রহমান: আপাতত এ বিষয়ে সামনে আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। আসলে আমাদের আন্দোলন তো ফ্রান্স সরকারকে হটানোর জন্য না। আমরা আন্দোলন করেছি ইমানের তাগিদে। আমাদের যতুটুকু সামর্থ্য ছিল ততটুকু করেছি। এরচেয়ে বেশি আর আমাদের কী-ইবা করার আছে।
আওয়ার ইসলাম: সময়ের প্রয়োজনে শুরু হওয়া আন্দোলনগুলো নির্দিষ্ট একটি সময় যাওয়ার পর ঝিমিয়ে পড়ে। কিংবা একটি ইস্যু আরেকটি ইস্যুকে ঢেকে দেয়। এর কারণ কী?
গাজী আতাউর রহমান: বিষয়টাই তো এরকম। সময় যাবে নতুন ইস্যু আসবে নতুন আন্দোলন হবে। আমাদের হাতে তো এই ক্ষমতা নেই যে, আমরা ঘটে যাওয়া অপরাধের বিচার করবো। যাদের হাতে ক্ষমতা আছে, দেখা যায় তারাই এসব অপরাধের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তারাই অপরাধীদের আশ্রয় দিচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে আমরা তো আর আইন হাতে তুলে নিতে পারি না। কিন্তু ইস্যু পরিবর্তনের এই স্রোতে তো অনেক অপরাধই ঢাকা পড়ে যায়। ছাড়া পায় অপরাধী। বাংলাদেশে কেউ অপরাধ করলে, তার জন্য তাৎক্ষণিক বিচার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ‘এ কোর্ট থেকে ওই কোর্ট’ করে করে দেখা যায় দশ পনের বছর পার করাও সম্ভব। এ অবস্থায় এমন তো হবেই।
আওয়ার ইসলাম: যাত্রাবাড়ীতে প্রস্তাবিত ভাস্কর্য নিয়ে আপনাদের আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থা কী? সামনে নতুন কোনো পদক্ষেপ কী আছে?
গাজী আতাউর রহমান: এটা শুধু আমাদের কোনো দলীয় আন্দোলন ছিল না। এটা ছিল তৌহিদি জনতার আন্দোলন। সর্বশেষ অবস্থা যদি বলি, আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি যেন এমূর্তি বসানো না হয়। দৌড়ঝাঁপ করছি। আমাদের নতুন পদক্ষেপ কী হবে তা নির্ভর করছে সরকারের আগামী পদক্ষেপের ওপর। সরকারের পদক্ষেপ অনুযায়ী আমরা নতুন পদক্ষেপ নেবো।
আওয়ার ইসলাম: দেশে ইতঃপূর্বে বঙ্গবন্ধুর অনেক ভাস্কর্য বসানো হয়েছে। কিন্তু সেগুলো নিয়ে তো আপনাদের এমন আন্দোলন করতে দেখা যায়নি। এটি নিয়ে এভাবে আন্দোলনের কারণ কী? বঙ্গবন্ধুর এ মূর্তি নিয়ে আামাদের জোরদার আন্দোলনের কারণ কয়েকটি।
গাজী আতাউর রহমান: প্রথমত যেখানে এই মূর্তিটি বসানো হচ্ছে তার দুপাশে দুটি মসজিদ। একটি মসজিদের তো একেবারে মেহরাব ঘেষে বসানো হচ্ছে মূর্তিটি। মানুষ এই মূর্তি দেখে নামাজ পড়তে যাবে। নামাজ থেকে বের হয়ে মূর্তি দেখবে। মুসলমানের দেশে এবিষয়গুলো আমরা মানতে পারছি না। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের ইতিহাসে পদ্মা সেতু অনেক বড় এক অর্জন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। এমন অসামান্য অবদান পদ্মা সেতুর মাথায় একটি মূর্তি বসানোর বিষয়টি আমরা মানতে পারি না। তৃতীয়ত অন্যান্য মূর্তি বা ভাস্কর্য নিয়ে আমরা আন্দোলন করিনি। কেননা সেগুলো এমন ঢাকঢোল পিটিয়ে আলাদাভাবে সরকারি বাজেট করে বিদেশ থেকে আমদানি করে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে করা হয়নি। তাদের আয়োজন যেহেতু জমকালো তাই আমাদের আন্দোলনও জোরদার।
আওয়ার ইসলাম: চট্টগ্রামে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমাবেশে আসা কিছু হিন্দু যুবক ‘জয় শ্রীরাম’ শ্লোগান দিয়ে হেফাজতে ইসলাম ও চরমোনাই পীরের সমর্থকদের ‘ধরে ধরে জবাই করার’ শ্লোগান দেয়। এ বিষয়ে আপনাদের প্রতিক্রিয়া কী?
গাজী আতাউর রহমান: এটা কিছু উগ্রপন্থী হিন্দু যুবকের কাজ। তারা পরিকল্পিতভাবে এটা করে। এটার সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির কোনো সম্পর্ক ছিল না। যারা এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল, তারা বিষয়টির জন্য আমাদের অফিসে এসে ক্ষমা চেয়েছেন এবং ওই যুবকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আমরা এটা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করিনি।
আওয়ার ইসলাম: সরকার দলীয় একজন উপমন্ত্রী আপনাদের ঘাড় মটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। বিষয়টিকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?
গাজী আতাউর রহমান: একজন মন্ত্রী এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলতে পারেন না। এটা অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি। আমরা ছোটবেলায় শুনেছি, ‘ভূতপ্রেত, দেও-দানব মানুষের ঘাড় মটকায়’। তাহলে কি আমরা বলবো তিনি দেও-দানব হয়ে গেছেন? এ দানবীয় শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা কিন্তু ভালো ফল বয়ে আনবে না।
আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির ভবিষ্যৎ আপনি কেমন দেখছেন?
গাজী আতাউর রহমান: বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো। কেননা বাংলাদেশের মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরেও অন্য কোনো ধর্মালম্বীদের সঙ্গে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করেন না। তারা খুবই সহনশীল। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে। তা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। বাংলাদেশের জনগণ তা সুষ্ঠুভাবে সমাধান করছে এবং করবে।
আওয়ার ইসলাম: সম্প্রতি হেফাজতের নতুন কমিটি ঘোষণা হলো। এই কমিটি নিয়ে আপনারা কতটুকু সন্তুষ্ট? কমিটি সম্পর্কে আপনাদের অভিমত কী?
গাজী আতাউর রহমান: হেফাজত নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমরা হেফাজত নিয়ে ভাবি না। আমাদের সংগঠন ও আন্দোলন কীভাবে সমৃদ্ধ করা যায় সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। আসলে বর্তমানে হেফাজত একটা ব্র্যান্ড হয়ে গেছে। রাজনৈতিকভাবে কিছু জনসমর্থনহীন নেতা সে দলটাকে নিজেদের স্বার্থের জন্য ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করছে নিরীহ কিছু মাদরাসা ছা্ত্রদের, যারা অবুঝ। যদি এটা নাই হতো তাহলে তারা কেন সাংগঠনিকভাবে এখনো ৫ মের শহীদদের কোনো তালিকা প্রকাশ করছে না? তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে না? শহীদদের বিচার চেয়ে কেন কোনো আন্দোলন করছে না? আসলে হেফাজত এখনো সেই পুরোনো বিতর্কের জায়গাতেই রয়ে গেছে।
আওয়ার ইসলাম: স্যোশাল মিডিয়ায় আপনাদের কিছু সমর্থক আপনাদের আমিরকে হেফাজতের কমিটিতে না রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এবিষয়ে কী বলবেন?
গাজী আতাউর রহমান: এটা হয়তো আমাদের কিছু অতি উৎসাহী সমর্থক করছেন। এর সঙ্গে সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। হেফাজতের পদ না পাওয়ায় আমাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা আগেই বলেছি আমরা আমাদের দল নিয়েই ব্যস্ত।