কাউসার লাবীব।।
সাব-এডিটর
একাদশ শতাব্দীর জ্ঞানের সরোবর ইমাম আবু হামিদ গাজালি।তিনি ছিলেন মূর্খ পিতার সন্তান। শিক্ষার আলো ছুঁতে না পারায় গাজালির পিতা মুহাম্মদ গাজালি সবসময় আফসোস করতেন। সেই আফসোসের অবসান করতে তার প্রিয় দুই সন্তান আবু হামিদ গাজালি ও আহমাদ গাজালিকে একজন সূফিসাদকের হাতে তুলে দেন।
ইমাম গাজালি ও তার ছোট ভাই সেই বুযর্গের কাছে লেখাপড়া শিখতে থাকেন। অবশেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর প্রিয় উস্তাদ তাদের ভর্তি করে দেন অন্য একটি মাদরাসায়।গাজালি ওই মাদরাসায় আহমদ রাজকানির কাছে ইলমে ফিকহের প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি ইলম অন্বেষণে দেশ-বিদেশ সফর শুরু করেন। এবং সানিধ্যপ্রাপ্ত উস্তাদদের জ্ঞান ফোয়ারা থেকে নিজেকে তৃপ্ত করেন। তার অভ্যাস ছিল, ক্লাসে তিনি যা শুনতেন সব নোট করে রাখতেন। এভাবে তার নোটখাতা ধীরে ধীরে বিশাল রূপ ধারণ করে।
বিশাল এ নোটখাতার বোঝা নিয়ে তিনি শিক্ষা সমাপ্তির পর নিজ এলাকায় ফিরছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে মরুভূমির মধ্য পথে তাদের কাফেলাকে ডাকাত দল ঘিরে ধরে।একএক করে সবার সবকিছু নেয়ার পর ডাকাত সর্দার তার বিশাল গাট্টি দেখে নিজেই তার কাছে আসে। হেচকা টানে গাট্টি নিয়ে খুলে তো সে রেগেমেগে আগুন। একী! এতে তো শুধু খাতা আর খাতা।
সর্দার ইমাম গাজালিকে জিজ্ঞেস করল, এগুলো কী? তিনি বললেন, এগুলো আমার নোটখাতা। আমার উস্তাদদের কাছ থেকে যা ইলম অর্জন করেছি, সব এখানে লিখে রেখেছি। এগুলো আমার স্বপ্ন। আমার প্রত্যাশার আধার।আমার ভবিষ্যতের ভেলা।দয়া করে এগুলো ফিরিয়ে দিন।
ডাকাত সর্দার তার এ কথা শুনে তো হেসে খুন। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে রসিকতা ভরে বললো, আরে! তুমি তো দেখি ইলমের সাগর! তাহলে তোমার ইলমের সাগরের চাবি কি এ ঠুনকো খাতা আর এ বিশাল গাট্টি? আমি যদি তোমার এ গাট্টি নিয়ে যাই তাহলে তোমার সাগর শুকিয়ে যাবে নাকি তাকে ভরে তোলার জন্য অন্যকোনো মাধ্যম রেখেছো? আমার মতো এক সাধারণ মানুষ যদি তোমার বিদ্যার এ বিশাল সাগর শুকিয়ে দিতে পারে তাহলে তুমি কেমন বিদ্যান! ধরো তোমার ইলমের গাট্টি।
ডাকাতদল তাকে গাট্টি সমেত ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি বাড়ি ফিরে এলেও তার কানে বারবার সর্দারের কথাগুলো বাজছিল। অবশেষে একথাগুলো তার জীবনে নতুনে এক বাঁক তৈরি করল।তিনি তার অর্জিত ইলম শুধু খাতায় সীমাবদ্ধ রাখলেন না।মুখস্থ শুরু করলেন। অসাধারণ মেধার অধিকারী গাজালি অল্পদিনেই সব মুখস্থ করে নিলেন। এরপর তিনি শুরু করলেন অন্যান্য কিতাব মুখস্থ।তার সময়ের ধর্মীয়, সাইন্স, যু্ক্তিশাস্ত্র ও দর্শনের যতো কিতাব ছিল প্রায় সব মুখস্থ করে নিলেন তিনি। এসব যখন মুখস্থ করা শেষ হলো তখন তার বয়স মাত্র সাতাশ বছর। আরর এ সাতাশ বছর বয়সেই তিনি তার সময়ের সব আলেম-ওলামাকে পেছনে ফেলে নিজেকে পৌঁছান শীর্ষস্থানে। অনন্য হয়ে ওঠেন আপন প্রতিভায়।
একজন ডাকাতের কথার প্রভাব এভাবেই তাকে গাজালি থেকে ইমাম গাজালিতে পরিণত করে ছিল। যে ইমাম গাজালি আজো ইতিহাসের পাতা চমকে দেন, ইলম কাননে নেতৃত্ব প্রধান করেন, নিয়ন্ত্রণ করেন লাখো জ্ঞানীর মন ও মস্তিষ্ক।
-কেএল