কাউসার লাবীব।।
সাব-এডিটর
ইমাম আযম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইলমের নগরী কুফায়। তার আসল নাম নুমান বিন সাবেত। ধার্মিক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করায় তার মেধা ও মননে ইসলামের আলো নিয়েই তিনি বেড়ে উঠেন। অসাধারণ মেধাশক্তির অধিকারী ইমাম আযম যখন বেড়ে উঠছিলেন, তখন তাঁর সমাজে ছিল নাস্তিক, মুরতাদ ও ফেরাকে বাতেলার ব্যাপক প্রভাব। তারা যুক্তিবিদ্যা ও তর্কবিদ্যার মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করছিল। কুরআন ও হাদিসগ্রন্থকে বানিয়ে ফেলেছিল নিছক কিছু গদ্য ও পদ্যের বই।
এবিষয়টি কিশোর নুমান বিন সাবেতকে বেশ ভাবিয়ে তোলে। সবকিছু পর্যবেক্ষণের পর তিনি বুঝতে পারে, ‘তাদেরকে দমন করতে হলে যুক্তি ও তর্কবিদ্যা দিয়েই করতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সাহাবি পরশ পাওয়া ইমাম আযম ধীরে ধীরে নিজেকে তর্ক ও যু্ক্তিবিদ্যায় পারদর্শী করতে লাগলেন।
ভাগ্য ও মেধা তাঁকে সঙ্গ দিল। অল্পদিনেই তিনি হয়ে গেলেন এ বিদ্যার পুরোধা। যু্ক্তিবিদ্যার কোনো পণ্ডিতের নাম নিতে হলে তাঁর নামই নিতে হতো। উপমা দেওয়া হতো তাঁকে দিয়েই।তিনি যখন হাঁটতেন, লোকেরা তাঁকে ইশারা করে বলতো ‘এইতো যুক্তিবিদ্যার ইমাম যাচ্ছে’।
যুক্তিবিদ্যার পণ্ডিত নামধারী নাস্তিক মুরতাদরা তার নাম শুনলেই আঁতক উঠতো। কেননা তিনি তাঁর যুক্তির তরবারীতে তাদের সব অকেজু দাবিগুলো কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলছিলেন। তাদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে দিনরাত এককরে ফেলেছিলেন তিনি। নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন তর্কবিদ্যার আলোকে ইসলামকে কালোথাবা থেকে মুক্ত রাখতে।
তর্ক ও যুক্তিবিদ্যায় নিজের পারঙ্গমতা বিষয়ে আলোচনে করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু মুনাযারা ও বাহাসের উদ্দেশ্যে আমাকে বিশবারেরও বেশি কুফা থেকে বসরায় যেতে হয়েছে। কোন কোন সময় পূর্ণ একবছর, আবার কোন কোন সময় একবছরের কিছুকম সেখানে থাকতে হয়েছে। ওই সময়টাতে ইলমে কালাম বা তর্কবিদ্যাই ছিল আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। একেই দীন ও শরিয়তের মৌলিক জ্ঞান বলে মনে করতাম।’
কিন্তু ইমাম আযম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ এ বিদ্যা থেকে অনেককিছু ভেবে মুখ ফিরিয়ে নেন।মনোযোগ দেন ফিকহ ও হাদিস শাস্ত্রে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তর্কবিদ্যাকে সঙ্গ দিয়ে দীর্ঘ সময় চলার পর হঠাৎ একটি বিষয় আমাকে আলোড়িত করে। আমি ভাবি, ‘সাহবাযে কেরাম আমাদের তুলনায় দীন ও শরিয়তের ব্যাপারে অধিক ইলম ও অভিজ্ঞতার অধিকারী ছিলেন। তথাপিও তারা তর্কবিতর্ক এবং বাহাস মুবাহাসায় লিপ্ত হন নি। বরং দীন নিয়ে তর্কবিতর্ককে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারা তো শরিয়তের ফিকহি মাসায়েল ও আহকামের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। তারা সদা ব্যস্ত থাকতেন ইলমের মজলিশ নিয়ে। চর্চা ও গবেষণা করতেন ইসলামের গভীরতা নিয়ে। এসব কথা ভেবে আামি ইলমে কালাম বা তর্কবিদ্যা বাদ দিয়ে ফিকহ ও হাদিস শাস্ত্রে মনোযোগী হই। খুঁজতে থাকি এ ইলমের অমীয় সুধা।’
এরপর তিনি সে যুগের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ফকিহ হাম্মাদ রহিমাহুল্লাহর ইলমি হালকায় শরিক হয়ে ইলমে হাদিস ও ইলমে ফিকহ অর্জনে আত্মনিয়োগ করেন। হযরত হাম্মাদ রহিমাহুল্লাহ এ দরস পেয়েছিলেন মহান সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরম্পরায়। কেননা , হাম্মাদ রহিমাহুল্লাহ ইবারাহিম নাখয়ি থেকে, তিনি আলকামা থেকে আর আলকামা হযরত ইবনে মাসউদ থেকে ইলমে হাদিস ও ইলমে ফিকাহ শিক্ষা লাভ করেন।
ইমাম আযম দীর্ঘ আঠারো বছর হযরত হাম্মাদের কাছে পড়ালেখা করেন। এরপর হাম্মাদ রহ. ইন্তেকাল করলে সর্বসম্মতিক্রমে এ ইলমি মজলিসের দায়িত্ব পান ইমাম আযম রহিমাহুল্লাহ। ইমাম আযমের পরশে এ মজলিশ থেকেই বেড়ে ওঠেন যুগের অন্যতম সেরা ফকিহ ও হাদিস বিশারদগণ।
-কেএল