মুজতাহিদুল ইসলাম।।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরত-পূর্ব মক্কি জীবনের কথা। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একত্ববাদের দাওয়াত গ্রহণ না করে প্রচÐ নিন্দাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেছিল মক্কার মুশরিকরা। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নানা অপবাদ আরোপ করে মহান আল্লাহর দেওয়া দাওয়াতের শাশ^ত কর্মসূচিকে বন্ধ করে দেওয়ার হীন চেষ্টায় ওরা মেতে ওঠে।
সীমাহীন শারীরিক-মানসিক কষ্ট দিয়ে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র দেহমন ক্ষত-বিক্ষত করে তোলে। চতুর্দিক থেকে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে রুখে দেওয়ার চেষ্টায় বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনি নবি দুশমনরা।
তারা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাহাড়সম ধন-সম্পদ আর পরম আয়েশি জীবনের লোভ দেখিয়েছে। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সকল লোভনীয় প্রস্তাব কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করলেনÑ তারা যদি আমাদের এক হাতে সূর্য অপর হাতে চন্দ্রও এনে দেয়, তবুও আমি আমার মহান রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত দায়িত্ব পালনে পিছপা হবো না।
নবিজী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আটকাতে ব্যর্থ হয়ে তারা দু’জাহানের সর্দার মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কখনো যাদুগর, কখনো উন্মাদ বলে সম্বোধন করেছে। কখনো দয়ার নবীর পবিত্র শরীরে থুথু নিক্ষেপ করেছে। কখনো মহান প্রভুর কুদরতি পায়ে সেজদারত অবস্থায় পিঠের উপর উটের দূর্গন্ধযুক্ত নাড়িভুড়ি রেখে দিয়েছে। তাদের চাওয়া ছিলো একটাই, আল্লাহর একত্ববাদের এই দাওয়াত বন্ধ হোক। কিন্তু নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাহাড়সম বাধার প্রাচীর পেরিয়ে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত নিয়ে সামনে এগুচ্ছিলেন দূর্বার গতিতে।
দিনদিন তাঁর সত্যের দাওয়াত কবুল করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছিলেন বহু সৌভাগ্যবান নারী-পুরুষ। দিন দিন ভারি হচ্ছিলো মুহাম্মদি কাফেলা । ইসলামের এ বিজয়যাত্রা দেখে মুশরিকদের জ¦লন প্রচণ্ড রূপ ধারণ করে। তারা অনুভব করে তাদের পায়ের নিচের মাটি ক্রমেই সরে যাচ্ছে। দিশোহারা হয়ে প্রিয় নবিজিকে বয়কট করল তারা। খানা-পিনা বন্ধ করে দিল। খাবার না পেয়ে গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সীমাহীন কষ্ট-দূর্দশা সহ্য করে কেটে গেলো দীর্ঘ তিনটি বছর। এক সময় বয়কট শেষ হলো। আবারও শুরু হলো দাওয়াতি মিশন। নব উদ্যমে, দূর্বার গতিতে। ব্যর্থ হলো কাফেরের দল। শুন্য থলে হাতে নিয়ে ঘরে ফিরতে হলো তাদের।
ইতোমধ্যে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই ছেলেরও ইন্তেকাল হয়ে গেলো। আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুঃখে কাফেরগোষ্ঠির খুশির আর অন্ত রইল না। তারা ভাবলো মুহাম্মদের সন্তানদের মৃত্যু হয়েছে, মুহাম্মদের নাম নেওয়ার মতো, মুহাম্মদের ধর্মমত দুনিয়াতে টিকিয়ে রাখার মতো আর কেউ রইল না। তারা এই খুশিতে মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্বংশ বলে গালি দিতে লাগল। কিন্তু বিশ^জাহানের অধিকর্তা মহামহিম আল্লাহ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে ওদের জবাব দিলেন। নাযিল করলেন পূর্ণ একটি সুরা। সুরা কাউসার। মহান আল্লাহর দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা, ‘আপনার শত্রæরাই নির্বংশ’। (সুরা কাউসার: ৩)
কাফেররা মনে করেছিলো নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর তাঁর নাম নেওয়ার মতো পৃথিবীতে কেউ থাকবে না। কিন্তু মহান আল্লাহ আল কুরআনে ঘোষণা করলেনÑ ‘আমি আপনার জন্য আপনার স্মরণকে করেছি সমুন্নত’। যার ফলে দেড় হাজার বছর পরেও আজকের পৃথিবীর ২০০ কোটি মুমিনের হৃদয়ের মনিকোঠায় ভাস্বর হয়ে আছে প্রিয় নবীর পবিত্র নাম।
প্রিয় নবীর ভালোবাসায় নিজের জান কোরবান করে দেওয়ার মতো মুমিনের সংখ্যা আজকের পৃথিবীতেও অসংখ্য-অগনিত। পৃথিবীর দিকে দিকে নিত্যদিন লক্ষ-কোটি বার পরম ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করা হয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মোবারক নাম। আযান, একামত, খুতবা, কালিমা, আত্তাহিয়্যাতু ইত্যাদির মধ্যে আল্লাহর নামের পরেই উচ্চারিত হয় প্রিয় নবির নাম। আল্লাহ যেখানেই বান্দাদের নিজ আনুগত্যের আদেশ দিয়েছেন, সেখানেই সাথে সাথে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্যেরও তাকীদ করেছেন।
কাফেররা চেয়েছিল নবুওয়াতের এই আলো নিভিয়ে দিতে। কিন্তু মহান রবের ইচ্ছা এই আলোয় গোটা বিশ^কে আলোকিত করা। আর আল্লাহর ইচ্ছাই চূড়ান্ত। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেনÑ ওরা নিজেদের মুখ দিয়ে আল্লাহর আলোকে নির্বাপিত করে দিতে চায় অথচ আল্লাহ তো তার আলোকে পূর্ণাঙ্গতায় পৌঁছাবেনই যদিও কাফেরদের অপছন্দ হয়। (সুরা সাফ: ৮, সুরা তওবা: ৩২)
মুহাম্মদী চেতনা আমাদের হৃদয়ে, মন-মননে। মুহাম্মদী প্রেম আমাদের অন্তরে অন্তরে। মুহাম্মদী আদর্শে আমরা মুক্তির দিশা খুঁজি। মুহাম্মদী পথই আমাদের পথ। তাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম কেউ মুছে দিতে চাইলে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে তার নাম-নিশানা মুছে দেওয়া হবে। এটাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শধারী প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ের বজ্র হুংকার। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
শিক্ষার্থী: ফতোয়া বিভাগ, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া
-এটি