নাজমুল হক
ময়মনসিংহের (ত্রিশাল) থেকে>
রাত সাড়ে ১১টা। মোবাইল ফোনে মেয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয় বাবার। সে সময় মেয়ের চিৎকারের শব্দ শুনতে পান তিনি। ঘটনাটি ঘটে গত রোববার। বাবা এসে মেয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন নদীরপাড়ে। হাতের মেহেদির রং মুছে যাওয়ার আগেই মেয়ে সেলিনার শরীরে এলোপাথাড়ি কোপানোর দাগ ও বাম হাত বিচ্ছিন্ন হওয়া লাশ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বাবা আলামিন। স্বামী শরীফকে মারাত্বক আহত অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা।
ঘটনাটি ঘটেছে রোববার রাত ১২টার দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের হরিরামপুর ইউনিয়নের রায়েরগ্রাম এলাকায়। ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে পুলিশ, ডিবি, সিআইডির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে রহস্যজনক এই হত্যাকাণ্ডের কারণ এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুইমাস আগে উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের রায়েরগ্রামের আলামিনের মেয়ে সেলিনা আক্তার (২০) এর বিয়ে হয় আপন মামা রুহুল আমিনের ছেলে শরীফের সঙ্গে। দুজনের বাড়ি একই গ্রামে হলেও পৈতৃক ভিটায় শরীফদের কোন ঘর নেই। দিনমজুর শরীফ কখনো রাজযোগালী, কখনো মাটি কাটার কাজ করেন। বিয়ের পরও একেক সময় একেক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন ওই দম্পত্তি।
রবিবার দিনভর মাটি কাটার কাজ শেষে সন্ধ্যার পর বউকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে রায়েরগ্রাম মির্ধা বাজার সংলগ্ন তার হাফিজা খালার বাড়ি থেকে বের হয় শরীফ। ওইদিন বেশ কয়েকবার বাবা-মার সঙ্গে কথা বলে সেলিনা। তবে রাত সাড়ে ১১টার দিকে যখন মোবাইল ফোনে বাবার সঙ্গে মেয়ের কথা হচ্ছিল তখন ওই নব দম্পত্তির মধ্যে ঝগড়া চলছিল। হঠাৎ মেয়ের চিৎকারের শব্দ শুনতে পান বাবা। ওটাই ছিল বাবা-মেয়ের মধ্যে শেষ কথা।
এরপর রাতেই শরীফের পরিবারের লোকজন সেলিনার মা-বাবাকে ফোন জানায়, শরীফ গুরুতর আহত, গলা ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন, অজ্ঞান অবস্থায় বাড়ির উঠোনে এসে পড়েছিল। তাকে নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া হচ্ছে। তবে কি ঘটনা ঘটেছে তা জানাতে পারেনি তারা।
খবর পেয়ে মেয়ের জামাই শরীফকে দেখতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান সেলিনার বাবা-মা। হাসপাতালে অবস্থানকালে রাত পোহাতেই জানতে পারেন তাদের আদরের মেয়ে সেলিনার নিথর দেহ পড়ে আছে সুতিয়া নদীরপাড় ঘেঁষা স্থানীয় নুরুল হকের একটি অনাবাদী জমিতে। মরদেহের কাছে মা-বাবা ছুটে গিয়ে, মেয়ের শরীরে এলোপাথাড়ি কোপের দাগ ও বাম হাত বিচ্ছিন্ন আবস্থায় দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যান বাবা, বিষয়টি তদন্ত করবেন বলে জানিয়েছেন ত্রিশাল থানা পুলিশ!
-এটি