শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ২৮ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাড়িতে বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল নাহিদ মানবতার জন্য আপনিও আসুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে: শায়খ আহমাদুল্লাহ ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার: বিএনপি মাদরাসাছাত্রদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কাজ করছে এনসিপি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর এখন সশস্ত্র ল’ড়াই ফরজ: মুফতি তাকি উসমানি ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান শায়খে চরমোনাই’র নড়াইলে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলায় আ. লীগের ৪৮ নেতাকর্মী কারাগারে বিনা খরচে আরও কর্মী নেবে জাপান, সমঝোতা স্মারক সই সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সেই বিতর্কিত ব্যক্তি আটক জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল, নাম নির্ধারণ

সেই ভিডিওটি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলী হাসান তৈয়ব ।।

তাঁর ছাত্র হবার সৌভাগ্য আমার হয় নি, কিন্তু এও কম কি যে তাঁকে দেখেছি। বহুবার এখানে-ওখানে নানা উপলক্ষে তাঁর কাছে যাবার, পাশে বসার এমনকি দোয়া চাইবার সৌভাগ্য হয়েছে। নূরানি অবয়ব আর হাসিমুখ দেখে মুগ্ধ হতে পেরেছি। আত্মবিস্মৃতি, আত্মবিকৃতি আর আত্মা বিক্রির এ যুগে আক্ষরিক অর্থেই তিনি ছিলেন বাকিয়্যাতুস সালাফ বা পুণ্যবান পূর্বসুরীদের অবশিষ্টজন। এমন সালাফ পাওয়াও যে জমিনবাসীর কত বড় কপাল তা তো ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে উম্মাহর সামনে।

এখন তো সবাই প্রতিযোগিতা করছে ক্ষমতাবানদের তোষণ আর সুযোগ সন্ধানে। উম্মাহর ফিকির আর খাশয়াতে খালেকের শক্তিতে সুবিধাকে লাথি মারার লোক কই? দুর্জয়কে জয়ের সৈনিক কই? দুর্জনকে সুজন ও স্বজন বানাবার প্রত্যয় কই? এমন রাতের আবেদ আর দিনের কর্মবীরদের তালিকা ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। নিবু নিবু এই প্রদীপগুলোরই একজন তিনি।

উস্তাযে মুহতারাম শাইখুল হাদিস (রহ.) চলে যাবার পর তিনিই ছিলেন সহিহ বুখারির অন্যতম প্রধান মশালবাহী। এর আগে যখন সাহসী ও মুখলিস নেতৃত্বের শূন্যতায় মনে পড়ত খতিব উবাইদুল হক রহিমাহুমুল্লাহকে, তখনও হাহাকার কমে যেত তাঁকে দেখলে। সৌন্দর্যের দীপ্তি আর ব্যক্তিত্বের বিভায় তিনি যে ছিলেন তাঁর মতোই। তারপর মুরুব্বি সংকটে ভোগা জাতি যখন সর্বজনাব আহমাদ শফি হাফিজাহুল্লাহর পর তাকেই প্রধান মুরুব্বি ধরে নিয়ে অগ্রসরমান, তখন তিনিই চলে গেলেন তাঁকে রেখে। এই আসগর আলী হসপিটালে তিনিও ভর্তি হয়েছিলেন আরও মুমূর্ষু হয়ে। কিন্তু তিনি ফিরলেও অপ্রত্যাশিতভাবে ফিরলেন না আল্লামা আশরাফ আলী রহিমাহুমুল্লাহ। রব্বানিয়ানা নেতৃত্বের শূন্যতা আরও দীর্ঘ করে তিনিও চলে গেলেন।

ইংরেজি বছরের এই শেষ দিনে আমার জন্ম হয়েছিল। কিন্তু আমার আনন্দের এ দিনে প্রথম আঘাত পেয়েছিলাম সেই তারুণ্যে আমার স্বপ্নপুরুষ আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রহিমাহুল্লাহর মৃত্যুতে। শায়খের মৃত্যুতে এদিন যোগ হলো আরেক আঘাত। জানি না ভবিষ্যতে এই দিন আরও কত আঘাত নিয়ে ফিরে আসবে। (আল্লাহুল মুসতাআন)

হাজার হাজার আলেম তৈরি, মালিবাগের মতো একটি জামিয়ার পরিচালনা, বেফাকুল মাদারিস ও হাইয়াতুল উলয়ার নেতৃত্ব ছাড়াও উল্লেখ করার মতো আরও অনেক দিক আছে তাঁর। কিন্তু যে দিকটি উল্লেখ করে লেখা শেষ করব, সেটি এ যুগে সবচেয়ে বেশি দরকারি অথচ সবচেয়ে বিরল।

এই মরযে মৌতেই আসগর আলীতে কদিন আগে তাঁকে দেখতে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি ভক্তি গদগদ না হয়ে বা নমঃ নমঃ না করে একজন সত্যিকার রব্বানি আলেমের ভূমিকা দেখান। খাদেমকে বলেন মন্ত্রীকে মেহমানদারি করতে। তারপর পরিষ্কার তাকে বলে দেন, আলেমদের কাজ আমিরদের পথ দেখানো। হক-বাতিল চেনানো আর দায়িত্ব মনে করিয়ে দেওয়া। আমি হয়তো থাকব না, এই বিদায়বেলায় আবার মনে করিয়ে দিয়ে যাচ্ছি, মিথ্যানবী দাবিদার কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে কাফের ঘোষণা করা আপনাদের দায়িত্ব।

সেদিন শায়খের এই ভূমিকা আর কথার ভিডিও দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। একইসঙ্গে আনন্দ-বেদনার অশ্রু এসেছিল। তাঁকে হারাবার বেদনা আর একজন মেরুদণ্ডী মুত্তাকি আলেমের ভূমিকা দেখার আনন্দ।

যখনই দেখেছি, যবানে তাঁর যিকির ছিল। ছোটদের প্রতি তাঁর স্নেহ-আশকারার মতো এই বুড়ো বয়সেও বড়দের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ছিল দেখার মতো। উম্মাহর কল্যাণচিন্তায় বিভোর ছিলেন বলেই অশীতিপর পর বয়সেও ছুটে যেতেন এত জায়গায়। এই অকৃতজ্ঞ আর গুণীদের অবমূল্যায়নকারী জাতি তাঁকে দীর্ঘদিন মিস করবে। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আর তাঁকে স্থান দিন ফিরদাউসে মাহবুবদের মিলনমেলায়।- (লেখকের ফেসবুক থেকে নেওয়া )

আরএম/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ