শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ২৮ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাড়িতে বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল নাহিদ মানবতার জন্য আপনিও আসুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে: শায়খ আহমাদুল্লাহ ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার: বিএনপি মাদরাসাছাত্রদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কাজ করছে এনসিপি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর এখন সশস্ত্র ল’ড়াই ফরজ: মুফতি তাকি উসমানি ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান শায়খে চরমোনাই’র নড়াইলে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলায় আ. লীগের ৪৮ নেতাকর্মী কারাগারে বিনা খরচে আরও কর্মী নেবে জাপান, সমঝোতা স্মারক সই সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সেই বিতর্কিত ব্যক্তি আটক জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল, নাম নির্ধারণ

রোদন করে হাদিসের কিতাব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ মারুফ ।।

হঠাৎ তিনি কেঁদে ওঠলেন বিকট শব্দে, 'আল্লাহ'...! আমার ভেতরটা চুপসে গেলো! কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম, কি হলো, কিছু হয়ে গেলো না তো আবার হুজুরেরㅡ এভাবে কেঁদে ওঠলেন যে!

দুহাত প্রসারিত অবনমিত মস্তকখানা উপরে উঠাই, কৌতূহলে চেয়ে দেখিㅡ নাহ, তিনি ঠিকই আছেন। কেবল 'রাব্বানা যালাম-না-আন-ফুসানা' নিজের উপর জুলুম করেছি আল্লাহㅡ কথাটি বলে লজ্জিত হয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন শিশুর মতো! যেনো তিনি দু-পায়ে জড়িয়ে ধরে আল্লাহকে বলছেন, অপরাধ করেছি, ক্ষমা করবা না! বলোㅡ।

আমি তাকে দেখে তার এভাবে 'আল্লাহ' বলে কেঁদে উঠতে দেখে নিজেও কেঁদে ফেলি, চোখ বেয়ে গড়াতে থাকে অশ্রু; টপটপ করে। এই ঘটনা জামেয়া রাহমানিয়ার খতমে বুখারীর সময় দুআর মাঝে, এই প্রথম আমি হুজুরের দুআ দেখি আর বিস্মিত হইㅡ তাদের দুআ কতোটা জীবন্ত! কতোটা নিবিষ্টমনে তারা আল্লাহকে ডাকেন!

এরপর তিনি মালিবাগ জামিয়ার মুহতামিম পদে অনুরুদ্ধ হন, আসেন মালিবাগে। তখন কাছ থেকে দেখি। বারবার তাকাই। তার দুআয় শামেল হই। তার কান্নাকাটি দেখে আমার ছোট্ট বুকের জমিনও ভিজে ওঠে, আমি এক অপার্থিব মোহে আচ্ছন্ন হই।

দুই.

আমি যেতাম, কথা বলে এটা-ওটা এগিয়ে দিয়ে চলে আসতাম, কখনও খেদমতের সুযোগ হয় নি। সেদিন বৃহস্পতিবার ছিলো। দুহাজার সতেরোর হবে, মালিবাগ জামিয়ার দস্তারবন্দীরুমের পাশে হুজুরের বাসায় যাই ইশার ক্ষানিকটা পর। তখন নিয়মিত যারা হুজুরের গা-মালিশ করে দিতেন তাদের একজন অনুপস্থিত। আমি তখন বলি আজকে তাহলে আমি থাকি তার স্থলে। হুজুর বলেন, আইচ্ছা, তুমি তাহলে পায়ের গোড়ায় যাও! আমি যাই।

তিন-চারজন মিলে ঘুমানোর আগে গায়ে সরিষার তেল মালিশ করে দেয়া লাগত। একজন মাথায়, হাতে আরেকজন, আর দুই পায়ে অপর দুইজন। মাথায় যিনি বসতেন তার সদা তটস্থ থাকতে হতো, এবং যিনি নিয়মিত বসতেন তার হাত ছাড়া হুজুরের আরাম হতো না, তাই শিয়রে বসতে হতো অভিজ্ঞ কারোর।

আমি তো প্রথম বসেছি এই আজকে, তেমন সুবিধা করে উঠতে পারছি না তাই। ব্যাপারটা ধরে ফেলে হুজুর শিখিয়ে দিলেন হাতে বোতল থেকে তেল ঢেলে এভাবে, গুড়ালিতে মালতে থাকো! আমি তাই করতে সচেষ্ট হলাম।

তখন দেখলাম, তিনি ঘুমের দুআ পড়ে কিছুক্ষণ নিরব থেকে হঠাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লার জিকিরে মগ্ন হয়ে গেলেন। জিকির করতে করতে মুখে মিঠে কোনো চোষ্য-বস্তুর মতো 'আল্লাহ' নামটা খেতে লাগলেন! কী তৃপ্তিভরে জপতে লাগলেন মালিকের নাম! এ-নাম মুখে রেখেই টুপ করে ঘুমিয়ে পড়লেন হঠাৎ, আমরা বুঝতে পারলাম হুজুর নিদ্রায় গিয়েছেন, আম্তে-আস্তে সরে আসলাম সবাই। বেডরুম ছেড়ে। আল্লাহর অলি ঘুমোতে লাগলেন।

তিন. 

সেই ঘুম থেকে তিনি তো জাগ্রত হয়েছিলেন সে-দিন। কিন্তু আজকের এই ঘুমে! তিনি কি আর জাগবেন না?

আহা!

হাদিসের কিতাবের প্রতিটি পৃষ্ঠা রোদন করছে, কেঁদে কেঁদে বলছে, আল্লাহ তোমার এই বান্দাকে মাফ করে দাও! তিনি যেমন আমাদেরকে যত্ন নিয়েছিলেন, তুমিও তাকে যত্ন নিয়োㅡ জান্নাতে, তোমার মেহমানখানায়...

(লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেওয়া)

আরএম/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ