আওয়ার ইসলাম: ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের বিরুদ্ধে পরিবহন শ্রমিক নেতা ও সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) নিসচার যুগ্ম মহাসচিব লিটন এরশাদ স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি, ইলিয়াস কাঞ্চন সম্পর্কে শাজাহান খান জঘন্যতম মিথ্যাচার করেছেন। তার মিথ্যাচারে আমরা বিস্মিত, হতবাক এবং এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিচ্ছি শাজাহান খানকে। এই সময়ের মধ্যে তার বক্তব্যের তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। নতুবা আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, সমাজের একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, জাতীয় পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সম্মানিত মানুষের বিরুদ্ধে শাজাহান খান এমন মিথ্যাচার শুধুমাত্র নিজের দুর্বলতা ঢাকার জন্যই করেছেন। তিনি এই মানহানিকর কথা বলেছেন জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য।
‘একটি কথা না বললেই নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যুগোপযোগী সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিলেন তখন কী করে শাজাহান খান সরকারে থেকে এই আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন? সেই প্রশ্ন আমরা জাতির কাছে রাখছি।
‘আমরা মনে করি, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-কে বাধাগ্রস্ত করতে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে শাজাহান খান অবান্তর এসব প্রশ্নের অবতারণা করছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এদেশের মানুষ এসবের যোগ্য জবাব দেবে।
‘সেইসঙ্গে উল্টো প্রশ্ন রাখছি, পরিবহন সেক্টরে বছরে বিভিন্ন খাতের নামে যে টাকা উত্তোলন (চাঁদা আদায়) করা হয় সেই টাকার কত অংশ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়েছে। কয়টা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে শ্রমিকদের দক্ষ করার জন্য। কয়টি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য। কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য। কয়টি আবাসন পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে শ্রমিকদের আবাসনের জন্য। তাদের জীবনমান উন্নয়নে এই টাকার কত অংশ ব্যয় করা হয়?’
‘তিনি (শাজাহান খান) প্রশ্ন করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই কতজন দক্ষ চালক তৈরি করেছেন? এই প্রশ্নের জবাবে জাতিকে জানাচ্ছি, আমাদের সীমিত ক্ষমতায় চালকদের দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ, বিনা ফি-তে দরিদ্র এসএসসি পাস বেকার শ্রেণিকে চালক প্রশিক্ষণ দিয়ে লাইসেন্স পাইয়ে কর্মক্ষম করার উদ্যোগ চলমান রয়েছে। আমরা মনে করি, আমরা পথ দেখাতে পারি এবং সেই পথেই আছি।
‘অতীতেও এই শাজাহান খান দেশে নানান ঘটনার জন্ম দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। গত বছর রাজধানীতে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার সংবাদ শোনার পরেও এই নৌমন্ত্রীর মুখের হাসি দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। তিনি দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে নিছক ঘটনা ভেবে হেলাফেলায় গুরুত্বহীন বক্তব্য দিয়ে দেশবাসীর মর্মমূলে আঘাত করেছেন। তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণেই আজ সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বারবার বাধার সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। শাজাহান খান কী কারণে কী উদ্দেশ্যে বারবার এমন লাগামহীন বক্তব্য দিয়ে সমাজে একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেন তা আমাদের বোধগম্য নয়’।
‘আগেও এই শাজাহান খান শ্রমিকদের উসকে দিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের কুশপুত্তলিকায় আগুন জ্বালিয়েছিলেন। এরপর গোটা দেশজুড়ে প্রতিবাদে-বিক্ষোভে সবাই ফেটে পড়লে তিনি ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন। সেইসঙ্গে বলছি এবারও রাস্তায় ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবি পোড়ানো ও অসম্মান করার প্রতিবাদে দেশবাসী ঘৃণাভরে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমাদের আস্থার জায়গা এই দেশবাসী’।
‘আবারও আমরা তার (শাজাহান খান) দেয়া আজকের বক্তব্যের পক্ষে দেশবাসীকে প্রমাণ দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি এবং এমন কাজের জন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে এই মিথ্যা ও জঘন্যতম বক্তব্যের প্রতিবাদে রাজপথে নামতে বাধ্য হবে নিসচা কর্মী ও ভক্ত সমাজ।’
উল্লেখ্য, রোববার নারায়ণগঞ্জে ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আয়োজনে ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারে (ডিটিসি) এক অনুষ্ঠানে শাজাহান খান বলেন, ইলিয়াস কাঞ্চন কোথা থেকে কত টাকা পান, কী উদ্দেশ্যে পান, সেখান থেকে কত টাকা নিজে নেন, পুত্রের নামে নেন, পুত্রবধূর নামে নেন সেই হিসেবটা আমি জনসম্মুখে তুলে ধরবো।’ এ সময় তিনি ইলিয়াস কাঞ্চনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন।
-এএ