শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


'আদালত আমাদের আর্জি নেননি, শুনেছেন অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে আদালতের আদেশে অসন্তুষ্ট বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তারা বলছেন, বারবার জামিন শুনানি এগিয়ে আনার আর্জি জানালেও আদালত তাদের কথা আমলে নেননি। বরং অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা শুনেছেন।

বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার মেডিকেল প্রতিবেদন দাখিলের জন‌্য এবং পরবর্তী শুনানির জন‌্য আগামী ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।

এসময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এ আদেশ মানি না বলে জোরে চিৎকার করতে থাকেন। এর প্রতিবাদ জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতিসহ ৬ বিচারপতির বেঞ্চ কোনো লিখিত আদেশ না দিয়ে এজলাস কক্ষ ত‌্যাগ করেন।

খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি এগিয়ে আনার দাবিতে বিএনপিপন্থী শতাধিক আইনজীবী আপিল বিভাগে এখনও অবস্থান করছেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, আইনজীবীরা আদালতের আদেশে সন্তুষ্ট না। এজন্য তারা আদালতে অবস্থান করছেন। আমরা সিনিয়ররা বললেও জুনিয়র আইনজীবীরা শুনছেন না।

তিনি বলেন, যতক্ষণ আইনজীবীরা আছেন, ততক্ষণ থাকব। বারবার শুনানি এগিয়ে আনার আর্জি জানালেও আদালত তা আমলে নেননি। বরং অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা শুনেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। আদালতে বিএনপির আইজীবীদের হট্টগোলের প্রতিবাদে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

মাহবুবে আলম বলেন, আজ বিএনপির আইনজীবীরা আদালতে যা করল তা আমার জীবনে কখনো দেখিনি। এটি আদালত অবমাননার সামিল। জনসভায় যেরকম হট্টগোল হয় আদালতে সেরকম হইচই শুরু করেন বিএনপির আইনজীবীরা। এটি নজিরবিহীন, এমনটি মেনে নেয়া যায় না।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বাইরের আন্দোলনকে এজলাসে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা, যেটি কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বিশৃঙ্খলায় আদালত তার কার্যক্রম চালাতে পারেননি। আমি প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ করব ভবিষ্যতে এরকম বিশৃংখ্যলা করলে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়।

শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের বরাতে আদালতকে জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাকি আছে, সেগুলো করতে সময় লাগবে। খালেদা জিয়ার মেডিকেল প্রতিবেদন এবং শুনানির জন্য দুই সপ্তাহ সময় প্রার্থনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আদালত আগামী ১১ ডিসেম্বর মেডিকেল প্রতিবেদন দাখিল এবং শুনানির জন্য ১২ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দেন।

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনসহ অন্যরা আজকের মধ্যেই শুনানি করার দাবি জানান। এ সময় দুপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে চরম উচ্চবাচ্য শুরু হয়।

জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ, আগে তার জামিন দেন, প্রয়োজনে শুনানি পরে হোক। তিনি খালেদা জিয়ার অন্তর্বর্তী জামিন প্রার্থনা করেন। এর বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

তখন আদালত জানান আগামী বৃহস্পতিবার শুনানি হবে। এর পর বিএনপির আইনজীবীরা কোর্টে হট্টগোল শুরু করেন। কয়েক মিনিট ধরে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলার পর আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতিসহ ছয় বিচারপতি এজলাস ছেড়ে খাসকামরায় চলে যান। এ সময় আদালতে উপস্থিত বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা শেইম শেইম বলে চিৎকার করতে থাকেন।

কোর্ট উঠে চলে গেলেও আইনজীবীরা কেউ কারও জায়গা ছাড়েননি, যে যার জায়গায় বসে আছেন। তারা জামিন শুনানি না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান নেয়ার কথা বলছেন। দু’পক্ষের আইনজীবীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে বন্ধ রয়েছে বিচারিক কাজ।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। আর খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সগীর হোসেন, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ বিএনপির শতাধিক আইনজীবী।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ