মোহাম্মদ ইমরান
ঐশী দিক থেকে রাসূল সা. শ্রেষ্ঠত্ব সর্বজন স্বীকৃত। রাসূল সা. এর ঐশী শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব বর্ণনা করে সবাই। যুগ, দর্শন যুগোপযোগী ও বিশ্বায়নের যুগে শুধুমাত্র অলৌলিক শ্রেষ্ঠত্ব মানুষের মনে ধর্মকে হালকা করে ফেলে।বাস্তবতা থেকে দূরে মনে করে ধর্মকে। যেমন রাসূল সা. জন্ম, মু'জেজা, মেরাজ ইত্যাদি।
মানুষ হিসেবে তাওহীদের দৃষ্টিকোণ থেকে মানবিকভাবে রাসূল সা. এর পরিচয় অপরিহার্য দাবী। কারণ যুগ বিশ্বায়নের যুগ, স্বচোখে দেখে ও অনুধাবিত বিষয়ে এখন মানুষের বিশ্বাস জন্মে। প্রাচীনযুগে যা কিছু মানুষ অলৌকিক মনে করত বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় আজ তা দু'চোখের সামনে ঝলমল করছে।
তাই একতরফা অলৌলিকতা ধর্মকে অতিপ্রাকৃত করে তুলে। বুদ্ধিজীবীরা ধর্মকে পূজনীয় মনে করে কখনো বাস্তবিক জীবনে তার প্রয়োগিক দিক বা ইসলাম ধর্ম হিসেবে রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক দিক থেকে ব্যাখ্যা করতে নারাজ। মনে করে ধর্ম হলো আধ্যাত্মিক প্রশান্তির অভিব্যক্তি। সমাজিক জীবনে দখলদারিত্ব নেই তার।
রাসূল সা. মানবীয় পরিচয় তাওহীদিবাদি ধর্ম ইসলাম যে মানবপ্রকৃতি ও সার্বজনীন ধর্ম। বিশ্বদরবারে সুস্পষ্ট হবে তা। ঐশী ধর্ম অতিপ্রাকৃত কোন বিষয় নয় বরং সূষ্টার পক্ষ হতে মানবিক এক জীবনব্যবস্থা। ইসলামের এ মৌল বিশ্বাস। এ দাবী নিয়ে পৃথিবীতে তার অবতরণ।
পৃথিবীর বিজ্ঞান ও দর্শনের চেয়ে ইসলাম যে মানুষ্য স্বভাবের অনুকূলে। বোধহয় এ ধারনা আরো পরিস্ফুট হবে জনমনে। আজকাল নবী-রাসূল বলতে বাঙালী মানসিকতায় অতিপ্রাকৃত ও অলৌলিকিক বিষয়াদি কে বুঝে। যেমন লালন প্রকৃতি, পীর-ফকীর, দরবেশদের ক্ষেত্রে ধারণা করে তারা। অনেক যৌক্তিকতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা মুক্তিচিন্তার দাবীদারও সূফীবাদি ইসলামের বিজয় কেতন উড়ানোর স্লোগান দেন।
অথচ ইসলাম -ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, যুগের বির্বতন ও সংস্কার কোনোটাকে অস্বীকার করে না। ধর্ম হিসেবে সর্বজীনীনতার নৈতিক গুণে ইসলাম ভূষিত।
তবে ফরহাদ মাজহার জাতীয় সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীরা ধর্ম, মানবনতা, বাঙালী জাতি ও সাংস্কৃতিক ইত্যাদি তর্কে ইসলামকে ভাববাদি চিন্তাধারার আনুকূল্যে মনে করেন। এবং সাধারণ বাঙালী জনগণের পরম ধর্মীয় শ্রদ্ধার ফলে সমাজের অতিপ্রাকৃত হিসেবে ধর্মকে চেনেন ও বুঝেন ।
অথচ মানবিক ধর্মের আত্মপরিচয় হয় নবী-রাসূল দিয়ে। শুধু স্রষ্টাতত্ত্ব দিয়ে গন্ধিজী ও আকবরের দীনে এলাহি প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা মনে করে সবধর্মের মূল কথা হল স্রষ্টায় বিশ্বাস নবী-রাসুলের কারণে ধর্মের ভিন্নতা। তাই রাসুলকে সরিয়ে শুধু খোদায়ী বিশ্বাসের ওপর ধর্মের ভিত্তি কায়েম করেন তারা, বা করতে চান।
মাঝেমধ্যে অনেকে বলে থাকে সবার আগে আমি মানুষ পরে আমার ধর্ম। এটা পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে যৌক্তিক হলেও ইসলামের ক্ষেত্রে একেবারে নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হবে। কারণ ধর্মের প্রলেপে সব ক্ষেত্রে ইসলামেকে সে ক্যাটাগরিতে গুলিয়ে ফেলা সমচীন নয়।
আল্লাহর রাসূল সা. আসার পর অন্যান্য ধর্ম থেকে ইসলাম পৃথক হয়ে গেছে অন্যান্য ধর্মের বিধান রহিত হয়ে গেছে ঐশীবিধান মতে। তাই অন্যান্য ধর্ম থেকে ইসলাম স্বতন্ত্র জীবনব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
মানবতার জবাবে বলতে গেলে নির্বুদ্ধিতার ঘোরে নিমজ্জিত বুদ্ধির প্রোলেপে ল্যাপটানো গর্দভদের বলবো
ইসলাম কি কখনো মানবতাকে অস্বীকার করেছে। ইসলামের শ্বাশত বিধানের কোন বিধান অমানবিক কি অমানবিক? যে কারণে ধর্মের ওপরে রাখতে হবে মানবতাকে?
মানুষ ও ধর্মের বিভাজন অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, ইসলামের ক্ষেত্রে নয়।
লেখক : তরুণ আলেম ও শিক্ষার্থী
আরএম/