মাওলানা মুহাম্মদ খুরশিদুল ইসলাম ত্রিশালী>
মহান আল্লাহ এ পৃথিবীকে টিকিয়ে রেখেছেন ভালোবাসার এক নিদর্শন হিসেবে৷ আর তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিজীব মানব সৃষ্টির মাধ্যমে৷
আল্লাহ তায়ালা স্বামী স্ত্রীর মাধ্যমেই সৃষ্টির ধারা অব্যহত রেখেছেন। আর এ পৃথিবী ততই সুন্দর হতে থাকবে, যতটা সুন্দর হবে এ পৃথিবীর দাম্পত্য জীবন। আর এ দাম্পত্য জীবন সুখী করতে দু’জনের ভালোবাসা ও বোঝাপরার গুরুত্ব অনেক বেশি।
কারণ দু’জন একে পরের আবরণ স্বরুপ। একে অপরকে যতটা সুখী রাখবে, পৃথিবী ততটাই সুন্দর হবে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন, তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক।
আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও ৷ সুরা বাকারা ১২৩।
আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ‘ভবিষ্যতের জন্য কিছু কর' বলতে সন্তান-সন্ততির জন্য প্রচেষ্টা চালানো বুঝানো হয়েছে। আর এ সন্তান-সন্তুতির মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী টিকিয়ে রেখেছেন। আর যতদিন তিনি চান এ পৃথিবী টিকে থাকবে।
আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি যদি কাউকে অন্য কোন লোকের প্রতি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম তাহলে অবশ্যই স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম। ইবনু মাজাহ (১৮৫৩)। জামে আত-তিরমিজি-১১৫৯।
মুআয ইবনু জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন পৃথিবীতে কোন স্ত্রীলোক যখনই তার স্বামীকে কষ্ট দেয় তখনই (জান্নাতের) বিস্তৃত চক্ষুবিশিষ্ট হুরদের মধ্যে তার (ভাবী) স্ত্রী বলে, হে অভাগিনী! তাকে কষ্ট দিও না।
তোমাকে আল্লাহ তা'আলা যেন ধ্বংস করে দেন! তোমার নিকট তো তিনি কিছু সময়ের মেহমান মাত্র। শীঘ্রই তোমার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি আমাদের নিকট চলে আসবেন। ইবনু মাজাহ (২০৪১)। জামে আত-তিরমিজি-১১৭৪।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন কোন লোক তার স্ত্রীকে নিজ প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে ডাকলে সে যেন সাথে সাথে তার নিকট আসে, এমনকি সে চুলার উপর রান্না-বান্নার কাজে ব্যস্ত থাকলেও। মিশকাত (৩২৫৭), তিরমিজি-১১৬০।
উম্মু সালামা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে কোন নারী তার স্বামীকে খুশী রেখে মারা যায় সে জান্নাতে যাবে। ইবনে মাজাহ(১৮৫৪)। তিরমিজি-১১৬১।
স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার বিষয়ে আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলমান হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। যেসব লোক নিজেদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম তারাই তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম। তিরমিজি-১১৬২।
সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস রহ. হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন।
তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও।
তোমাদের নিকট তারা বন্দীর মত। তাছাড়া তোমাদের আর কোন অধিকার নেই তাদের উপর, কিন্তু তারা যদি সুস্পষ্ট চরিত্রহীনতায় লিপ্ত হয় (তবে ভিন্ন কথা)। তারা যদি তাই করে তাহলে তাদের বিছনাকে আলাদা করে দাও এবং সামান্য প্রহার কর, মারাত্মক প্রহার নয়।
যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তাহলে তাদেরকে নির্যাতনের অজুহাত খুঁজতে যেও না। জেনে রাখ! তোমাদের যেমন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি অধিকার আছে, তাদেরও তোমাদের প্রতি ঠিক সেরকমই অধিকার আছে। তাদের প্রতি তোমাদের অধিকার এই যে, তোমরা যাদেরকে পছন্দ কর না তারা যেন সেসব লোককে দিয়ে তোমাদের বিছানা পদদলিত না করায় এবং যেসব লোককে তোমরা মন্দ বলে জান তাদেরকে যেন অন্দর মহলে ঢুকার অনুমতি না দেয়।
জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। তিরমিজি-১১৬৩।
এ ছাড়াও স্ত্রী তার স্বামীর সন্তানাদিদের দেখা-শুনা করা, স্বামীর জান-মালের হেফাজত করা, স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করা, স্বামীর সাথে হাঁসি মুখে কথা বলা, সব সময় স্বামীকে খুশী রাখা, স্বামীর সকল বৈধ আদেশ মেনে চলা,আসা-জাওয়ার সময় সালাম দেওয়া , স্বামীর আত্মীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করা৷
স্ত্রীর সকল কাজে সহযোগিতা করা, বিনা কারনে রাগ না করা, স্ত্রীর সাথে নরম শুরে কথা বলা, স্ত্রীকে হাদিয়া দেওয়া, স্ত্রীর আত্মীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করা, স্ত্রীকে দীনের মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা দেওয়া,আসা- জাওয়ার সময় সালাম দেওয়া৷
আল্লাহ আমাদেরকে বিষয়গুলো বোঝে, আমল করে জান্নাতি পরিবার গঠন করার তাওফিক দান করুন,আমিন ৷
-এটি