আওয়ার ইসলাম: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, পূর্ণ নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বাড়ি-ঘর ও সহায়-সম্পদ ফেরত এবং স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েই মিয়ানমার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত নিতে হবে।
আজ (২৩ আগস্ট) শুক্রবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, পাশাপাশি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের মধ্যস্ততা ও উপস্থিতি এবং ফিরে যাওয়ার পরও রোহিঙ্গাদের সাথে কেমন আচরণ করা হচ্ছে, সেই তদারকির সুযোগ থাকতে হবে। এসব দাবি পুরণে মিয়ানমারের কোন তালবাহানা, গড়িমসি ও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশ সরকারকে এবিষয়ে মিয়ানমারের উপর চাপ তৈরিতে জোরালো ক‚টনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে।
আল্লামা কাসেমী বলেছেন, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বৈধ নাগরিক। তারা পূর্ব পুরুষ থেকে মিয়ানমারে বসবাস করে আসছে। তাদের ষড়যন্ত্র করে সম্পূর্ণ অন্যায় ও জুলুমের শিকারে পরিণত করে দেশছাড়া করা হয়েছে। বাংলাদেশ মানবতার জায়গা থেকে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ অসহায় রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার নজির স্থাপন করেছে। রোহিঙ্গাদের স্থায়ী আবাসভূমি মিয়ানমার। দীর্ঘদিন এই বিশাল জনগোষ্ঠীর ভার বহনের সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই।
জমিয়ত মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে দীর্ঘ দিন ধরে মিয়ানমার ছলচাতুরি ও প্রতারণা করে আসছে। রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত নেয়ার কথা বললেও তাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোন সমাধানে আসছে না। যেই ভীতিকর ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশ থেকে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা বাড়ি-ঘর ও সহায়-সম্পদ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, সেই ভীতিকর পরিস্থিতি দূর করার মতো বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ তো তৈরি করতে হবে।
আল্লামা কাসেমী আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের আস্থাশীল হওয়ার মতো পরিবেশ নিশ্চিত করা ছাড়া বার বার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়াটা হতাশাজনক। এতে করে মিয়ানমারের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ক‚টনীতিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। কারণ, নির্লজ্জ মিথ্যাচারিতায় পটু মিয়ানমার এই সুযোগ নিয়ে বলতে পারে- ‘আমরা বার বার রোহিঙ্গাদের ফেরত আনতে চেয়েছি, কিন্তু বাংলাদেশ পাঠাচ্ছে না’। কারণ, অতীতে মিয়ানমারের কাছ থেকে এরকম কথা শোনা গেছে।
জমিয়ত মহাসচিব রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল উদ্যোগের অভাব এবং মিয়ানমারের উপর চাপ তৈরিতে নমনীয় নীতির প্রশ্ন তুলে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের ভারে জর্জরিত বাংলাদেশের গায়ে তারা আদুরে হাত বুলায়, উপদেশ দেয়, প্রশংসা করে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থেীদের জন্য মায়াকান্নাও করে।
কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য অপরিহার্য বিষয়, যথা- ‘পূর্ণ নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বাড়ি-ঘর ও সহায়-সম্পদ ফেরত এবং স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার দেয়ার নিশ্চয়তা’-এর মতো মৌলিক দাবি আদায়ে মিয়ানমারের উপর জোরালো চাপ তৈরি করে না। মূলত রোহিঙ্গাদেরকে পুঁজি করে বিশ্বমোড়লরা গুটি চালার কাজটাই করছে হয়তো। কার্যকর সমাধানে তারা কতটা আন্তরিক, এই নিয়ে জোর সন্দেহ রয়েছে।
আরএম/