মাওলানা মনযূরুল হক । ।
আপনি আরেকটি বিয়ে করতে যাচ্ছেন। কেননা, বছর পার হয়ে গেলেও আপনার স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভাবলেন বউ বন্ধা। জেনে স্ত্রী বললেন— এটা তুমি কিভাবে করতে পার? তুমি কি আমায় ভালোবাসো না?
আপনি যুক্তি দিলেন— ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। আমি তো নিঃসন্তান থাকতে পারি না।
—যদি দ্বিতীয় স্ত্রীও সন্তান দিতে না পারে? তৃতীয় এবং চতুর্থ জনের না হয়? তুমি তো ইসলামের নামে না-ইনসাফি করছ।
আপনি ক্ষেপে গেলেন— কী বলতে চাও তুমি? আমার কোনও ত্রুটি আছে?
—তোমাকে বহুবার ডাক্তার দেখাতে বলেছি আমি। তোমার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্ত্রীও যদি সন্তান না দেয়, কেবল তখনই কি তুমি বুঝবে যে, সমস্যাটা তোমার ছিল; স্ত্রীর নয়? তুমি কাউকে ভালোবাসতে পারবে না।
এবার হয়তো রেগে আপনি স্ত্রীকে মারধরও করবেন। আপনার কাছে এমন নাশেজা স্ত্রীকে প্রহার করাও ইসলামে বৈধ।
ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমোদন দেয়, এর মানে এটা নয় যে, এভাবে সন্তান জন্মানোর নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। আসলে আপনি ইসলাম বোঝেন নি, ভালোবাসাও না। এ-জন্যেই বিয়ের আগে প্রেমের দিকে কিংবা বিয়েপূর্ব দীর্ঘ মেলামেশার ঝুঁকছে তরুণরা। তারা দেখতে চায় তার জীবনসঙ্গীে আদতে কেমন হবে।
আমার বিয়ের সময় বলা হলো, মেয়ের বাড়িতে ভোজসভা করা যাবে না—যেহেতু শরীয়তসম্মত নয়। আমি প্রস্তাব দিলাম, অলিমাটা ঘটা করে হোক। তখন কথা উঠল খরচাপাতি নিয়ে। বললাম— আপনারা যেই ভোজ সুন্নাত সেটাও সুন্দর করে করবেন না, আবার সমাজ-প্রচলিত অনুষ্ঠানও ছেড়ে দেবেন ইসলামের দোহাই দিয়ে, এভাবে তো ইসলামের বদনাম হবে। মানুষ বলবে, আদতে আমরা সুবিধাবাদি।
মাওলানা মনযূরুল হকের বই পড়তে ক্লিক করুন
আমার এক মামার বিয়ের সময় উপহার দেওয়া নিয়ে তুমুল আপত্তি উঠল দীনদার ঘরানা থেকে। তাদের যুক্তি হলো—আত্মীয়দের হাদিয়া দিতে হলে বিয়ের সময় কেনো, সারা বছর দেওয়া যায়। বললাম— কিন্তু আপনারা সারা বছরে কখনও তাদের খোঁজ নেন নি, কিছু দেনও নি; এমনকি বিয়ের খরচ যোগাতেও কোনও হেল্প করেন নি। তো আত্মীতারক্ষার সুন্নাতও পালন করেন নি, আবার বছরে একদিন এসে কিছু দেবেন তা-ও অবৈধ বলছেন; মানুষ তো আপনাদের দীনদারি দেখে ভয় পাবে এবং সামাজিক অনুষ্ঠাকে আপনাদের বয়কট করবে।
এটাই চলছে। দীনদাররা সামাজিক ট্রেন্ডকে বদলাতে চাইছে, দীনের সুহুলতের অজুহাত দিয়ে—দীনের সুন্নাত প্রচলনের মাধ্যমে নয়। আসলে তারা দীনকে ‘ব্যবহার’ করছে। এ-কারণে দীন থেকে সরে যাচ্ছে মানুষ এবং ‘কাফির’কে গ্রহণ করছে।
(লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেওয়া)
আরএম/