ঈদের নামায একটু আগেই হয় মাদরাসার মসজিদে। কারণ বহুদূর দুরান্তে যেতে হবে ছাত্রদের। কালেকশনের এলাকায় পৌঁছতে হবে লোকজন ঈদের জামাত পড়ার সাথে সাথেই।
ঢাকার গলি পথে হাঁটছিলাম দু’জন। হাপাতে হাপাতে আসলো একজন পৌড় লোক ।
হুজুর তাড়াতাড়ি চলেন। যাক বাবা বাঁচা গেল। সাহেব হয়তো এতক্ষণে রেগেই আছেন।
হুজুর তাড়াতাড়ি চলেন না।
বললাম- এতো তাড়া দিচ্ছেন কেন চাচা? যাচ্ছি তো। কি হয়েছে আপনার বলুন তো।
আর বইলেন না, আধা ঘন্টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি। কোন হুজুর পাচ্ছি না। সাহেব বড় বড় তিনটি গরু কুরবানি দিবেন। ওগুলো যবেহ করতে হবে আপনাদের। গেলাম, যবেহও করলাম।
চিন্তা করুন তো, চামড়া কালেকশনের উদ্দেশ্যে যদি বের না হতাম তাহলে এতো টাকার কুরবানি উনি কিভাবে আদায় করতেন? অনেকে তো আবার চামড়ার সঠিক হকদার না জেনে কসাইকে বিনিময় হিসেবে চামড়া দিয়ে দেন। যা কুরবানি সঠিক হওয়ার অন্তরায়।
ইসলামি শিক্ষার এতো অভাব যে সমাজে, সেখানে কুরবানির মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সঠিকভাবে আদায় করাতে চামড়ার জন্য হলেও ঈদের দিন আলেম উলামা ও ছাত্ররা সাধারণ পাবলিকের কাছে যাওয়া কি প্রয়োজন নয়?
এদিকে যদি মাদরাসার গরিব ছাত্রদের চামড়া বা তার মূল্য দান করে, তবে সে দ্বিগুণ সাওয়াবের অধিকারী হচ্ছে। একে তো গরিবকে দান করা হচ্ছে, দ্বিতীয়ত আল্লাহর রাস্তায় থাকা লোকের সহযোগিতা হচ্ছে।
এ বিষয়কে মাথায় রেখেই মাদরাসাকেন্দ্রিক চামড়া কালেকশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে গরিব ও এতিম ছাত্রদের কিছু সহযোগিতার সাথে সাথে কওমের বড় সহযোগিতাও হয়। কেননা, এই মাদরাসাসমূহ কওমি মাদরাসা, মানে কওমের তরে নিবেদিত।
কওমের স্বার্থকেই প্রথমে দেখা হয় এখনে। তাই চামড়া কালেকশনকে এই মাদরাসা সমূহের আয়ের উৎস ভাবা মারত্মক বোকামি হবে। কারণ, চামড়ার টাকা শুধু মাত্র গরিব ছাত্রদের পেছনে খরচ করা হয়। আর মাদরাসায় কেবল গরিব ছাত্ররাই পড়ে না।
তাছাড়া একটি মাদরাসার বার্ষিক ব্যয় প্রায় কোটি টাকারও বেশি হয়। আর চামড়ার বাজারে ধস নামার পর থেকে এই খাতে দু লাখ টাকাও আয় হয় না। যেখানে কোটি টাকার ব্যয় সংকুলান হয়, সেখানে দু’লাখ না হলেও যে চলবে তার হিসেব ক্যালকুলেশন করে বের করতে হবে না।
প্রশ্ন হয় তাহলে সব ছাত্রদের বাধ্যতামূলক কালেকশনে রাখা হয় কেন? জবাব হচ্ছে আদর্শ মানুষ করে গড়ে তোলার জন্যে। কেননা এই মাদরাসাসমূহ আদর্শ মানুষ তৈরির কারখানা। আর প্রকৃত মানুষ সেই, যে পরোপকারে সুখী হয়।
ব্যবসার হিসাব নিকাশ এখন হাতের মুঠোয়- ক্লিক
চামড়া কালেকশনের দ্বারা গরিবের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য সবাই মেহনত করেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করে। এটাই প্রকৃত আনন্দ। নিজেকে পরের তরে বিলিয়ে দেয়াই আদর্শ মানুষের গুণ তা হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া হয় এখান থেকে।
কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়, ইদানীং তথাকথিত বস্তুবাদীদের সুরে সুর মিলিয়ে কিছু ইসলামিস্টও এই কাজকে ভিক্ষা প্রথার সাথে তুলনা করতে দেখা যাচ্ছে। যা চিন্তার দৈন্যতা আর মানষিক বিকারগ্রস্থতার পরিচয়ক।
গরিবের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য হাত পাতা যদি আপনাদের কাছে হেয় মনে হয়, তবে আপনি চিন্তার প্রতিবন্ধী। আপনি আমাদের এ মহান কাজ নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। আপনার মাথা ভাল ফিকিরের আবাসস্থল নয়। আমদের চামড়া নিয়ে আমাদের করে ভাবতে দিন। দেখুন কিভাবে ‘চামড়া ও আমরা’ জড়িত।
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
-আরএম/