বেলায়েত হুসাইন: মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদেরকে তার ইবাদত করার হুকুম করেছেন। আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে সম্পর্ক সৃষ্টির সূচনা মূলত ইবাদতকে কেন্দ্র করেই। আর মধুর এই সম্পর্ক টিকেও থাকে ইবাদতের মাধ্যমে। ফরজ ইবাদতের বাইরে পবিত্র এ সম্পর্ক আরো মজবুত করতে বেশি বেশি নফল ইবাদতের বিকল্প নেই।
নির্দিষ্ট কোন সময়ের সঙ্গে নফল ইবাদতের কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর কৃপা ও অনুগ্রহে স্বতন্ত্র কিছু দিন, ক্ষণ এবং মাস নির্ধারণ করে দিয়েছেন-যে সময়গুলোতে সাধারণ নফল ইবাদতও অনেক সাওয়াব এবং নেকি লাভের উপায় হয়। রবের সঙ্গে বান্দার নৈকট্য লাভ করতে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হয়ে ওঠে। সাথেসাথে এ সময়ের নফল ইবাদত স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে থাকা নির্মল সম্পর্ককে গভীর থেকে গভীরতর করে তোলে।
জুম্মা, শবেকদর, শবেবরাত এবং পবিত্র রমজান মাসের সঙ্গে হজের মাসগুলিও নফল ইবাদতের উপযুক্ত সময়। বিশেষ করে জিলহজ মাসের প্রথম দশদিন কোরআন ও সুন্নাহ অনুসারে খুবই ফজিলতপূর্ণ এবং স্বতন্ত্র মর্যাদা রাখে।
জিলহজের প্রথম দশক সম্পর্কে মহানবী স. বলেছেন, দুনিয়ায় সবচে ফজিলতপূর্ণ দিনগুলো হলো জিলহজের প্রথম দশদিন। (সহীহ আল-জামেঃহাদীস নং ১১৩৩) হাদীস শরীফে এও আছে, জিলহজের প্রথম দশদিন নফল ইবাদতে অতিবাহিত করা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা থেকেও উত্তম। (বুখারী দ্বিতীয় খন্ড,হাদিস নং :৪৫৭)
তাছাড়া আমাদের পূর্ববর্তী আলেমগণ এই দশকে বেশিবেশি নফল ইবাদত করতে উদ্বুদ্ধ করে গেছেন।
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান পবিত্র হজ এই মাসের শুরুর দশকেই মহান আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। জিলহজের নয় তারিখ তথা আরাফাহর দিন অনেক বেশি সাওয়াব লাভের অসিলা বা মাধ্যম, এই দিনে রোজা রাখলে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর বান্দার গোনাহ মাফ করে দেন।
আরাফাহর দিনে স্বয়ং আল্লাহর রসূল সা. রোজা রাখতেন এবং সবাইকে রোজা রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। ( সুনানে নাসাঈ চতুর্থ খন্ড,হাদিস নং ২০৫)
ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পবিত্র ঈদুল আজহা এবং কুরবানি এই জিলহজ মাসের দশ তারিখেই অনুষ্ঠিত হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন,তুমি তোমার রবের জন্য সালাত আদায় করো এবং কুরবানি করো। (সূরা কাওসার,আয়াত : ২)
মোটকথা, মর্যাদায়,ফজিলতে এবং সাওয়াব লাভের ক্ষেত্রে জিলহজের প্রথম দশদিন অনন্য ও অতুলনীয়। এই দিনগুলোতে পবিত্র কুরআন এবং হাদিস শরীফে বান্দাদেরকে অনেক ইবাদতের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে-স্বল্প সময়ে যা অনেক বেশি সাওয়াব অর্জনের মাধ্যম হয়।
এই দিনগুলোতে সর্বাবস্থায় তাসবীহ-তাহলীল,হামদ-শুকর, আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা এবং বেশিবেশি ইস্তেগফার করা সুন্নত। মহান আল্লাহ বলেন,যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্থকে আহার করাও। (সূরা হজ,আয়াত:২৮)
অধিকাংশ উলামায়েকেরাম বলেছেন, নির্দিষ্ট দিনগুলো দ্বারা জিলহজের প্রথম দশকই উদ্দেশ্য। হাদিসে এসেছে মহানবী স. বলেছেন, ঐ দশটি দিনে (জিলহজ মাসের প্রথম দশক) আমল করার চেয়ে আলাহর নিকট অধিক প্রিয় এবং মর্যাদার কোন দিন নেই, সুতরাং তোমরা এই দিনগুলোতে অধিক পরিমাণে তাসবীহ-তাহলীল,হামদ এবং আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা করো। (মুসনাদে আহমদ ৭ম খন্ড,হাদীস নং ২২৪)
আরএম/