আওয়ার ইসলাম: আল-হাইআতুল উলইয়া বাংলাদেশ-এর কো- চেয়ারম্যান ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী বলেন, কওমি মাদরাসায় যারা পড়ালেখা করে, তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কারণ, তারা কুরআন-হাদিসের ইলম হাসিল করে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পড়ালেখা করে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেল ৩টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাসের কনফারেন্স হলে ঢাকাস্থ জামালপুর জেলা উলামা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত আল-হাইআতুল উলইয়া বাংলাদেশ ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ জামালপুর জেলার মেধাবী ছাত্রদের পুরস্কার প্রদান ও আলোচনা সভায় প্রধান মেহমানের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আল্লামা আশরাফ আলী বলেন, মাদরাসার ছাত্ররা ইলম অর্জন করে ইসলামের খেদমত করার জন্য, নিজের জীবনকে কুরআনের আলোয় আলোকিত করার জন্য। এখানেই তাদের শ্রেষ্ঠত্ব। একজন মাদরাসার ছাত্র কোনদিন দূর্নীতি করতে পারে না, ঘুষের টাকায় বাড়ি-গাড়ি করতে পারে না। এজন্য আপনাদের সন্তানকে মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন। তাদের জীবনকে আলোকিত করুন।
উক্ত সভায় ঢাকাস্থ জামালপুর জেলা উলামা পরিষদের সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুফতি কাজী মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী।
তিনি বলেন, ওলামায়ে কেরামের অন্যতম চাহিদা তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। সমাজের মানুষের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে তাদের মাঝেও ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেওয়া। আজ যারা পুরস্কার গ্রহণ করেছে তারা একদিন বড় আলেম হবে। তারাও ইসলামের জন্য, দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। এটা তাদের দায়িত্ব।
তিনি ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, বর্তমানে তোমাদের অন্যতম দায়িত্ব ঠিকঠাক পড়ালেখা করা। আর পুরষ্কার পাওয়ার পর সেই দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। সুতরাং, তোমাদের প্রতি আমার আবেদন, তোমরা মনযোগ দিয়ে পড়ালেখা করবে এবং আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব একদিন নিজেদের কাঁদে তুলে নেবে।
[caption id="" align="aligncenter" width="960"] বক্তব্য দিচ্ছেস ঢাকাস্থ জামালপুর জেলা উলামা পরিষদের সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুফতি কাজী মাহমুদুল হাসান[/caption]
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী, জামালপুর-৪ আসনের এমপি ডা. মুরাদ হাসান প্রধান অথিতির বক্তব্যে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য কাজ করে গেছেন। তাবলিগ জামাতের জন্য কাকরাইলে মসজিদ স্থাপন, বিশ্ব ইজতেমার জন্য তুরাগ নদীর তীরে জায়গার ব্যবস্থা করা, ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে ওআইসির অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি ধর্মীয় কাজে জাতির জনক সবসময় সবার আগে থাকতেন। বর্তমানে তার সুযোগ্য কন্যা তার বাবার পথ ধরে ওলামায়ে কেরামকে সঙ্গে নিয়ে সেইসব কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমাদেগর নেত্রী লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করে প্রতিটি উপজেলায় মসজিদ স্থাপন, কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্স সমমান মর্যাদা প্রদান করেছেন। আমি নিজেও আওয়ামী লীগের কর্মী, আমার পিতাও আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। আমি দেশ , জাতি ও ইসলামের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত আছি।
তিনি আরও বলেন, জামালপুর জেলা উলামা পরিষদের উদ্যোগে আল হাইয়াতুল উলইয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া (২০১৯) পরীক্ষায় জামালপুর জেলার উর্ত্তীণ শিক্ষার্থীদের পুরস্কার দেওয়ার এ মহৎ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। আমি সবসময়য় আপনাদের পাশে থাকব এবং ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ মোতাবেক আপনারাও সংগঠনটি এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আমার প্রত্যাশা।
বিশেষ অথিতির বক্তব্যে জামালপুর-৫ আসনের এম. পি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার মনে একটি ধারনা ছিল যে কওমি মাদরাসা থেকে জঙ্গিবাদ তৈরি হচ্ছে, কিন্তু নিকট অতীতের বাস্তবতা থেকে আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি, আমার ধারনাটি সম্পূর্ণ ভুল ছিল। কওমি মাদারাসায় যোগ্য আলেম তৈরি করা হয়। এখানে আল্লাহর রাসুলের সুন্নতের আমল শেখানো হয়। তারা ইসলাম ও দেশের জন্য কাজ করে।
এসময় তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলামের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, ঐক্যের বিকল্প কোনকিছু নেই। আমি ব্যক্তিহতভাবে ওলামায়ে কেরামের জন্য, তাদের কর্মসংস্থান তৈরির জন্য কাজ করে যাব। কারণ, তাদের জন্য কাজ করলে আল্লাহর জন্য কাজ করা হয় এবং তিনি খুশি হন।
[caption id="" align="aligncenter" width="960"] অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতার একাংশ[/caption]
বিশেষ অথিতির বক্তব্যে এম.পি জামালপুর-২ আসনের এমপি মুহা. ফরিদুল হক খান দুলাল বলেন, আমাদের নেত্রী ওলামায়ে কেরামকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন, কওমি মাদরাসার ছাত্রদের স্নেহ করেন। বিনা আন্দোলেন, ওলামা মাশায়েখদের তার বাড়িতে ডেকে স্বীকৃতি প্রদান করে এ কথা তিনি প্রমাণ করেছেন। মাননীয় নেত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, কওমি মাদরাসায় কোন জঙ্গিবাদের শিক্ষা দেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, আমি নিজেও কয়েকটি মাদরাসা সঙ্গে জড়িত, সেখানে কোনদিন কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা আমার নজরে পড়েনি। তারা হকের পথে চলে এবং অন্যদের সেই পথ অনুসরণ করার কথা বলে। আসুন, আমরা সকলে এক হয়ে দেশ, জাতি ও উম্মাহর কল্যাণার্থে সেই কাজ করে যাই।
মাওলানা জিয়াউল আশরাফের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা হাসান জামিল, বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আতিকুল্লাহ, জামালপুর জেলা কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি মাওলানা আবুল কাসেম, মুফতি আব্দুল্লাহ, মুফতি শামছুদ্দীন, মুফতি মনিরুজ্জামান, মাওলানা হাসান আলী, মুফতি মাহবুবুর রহমান, মাওলানা মেরাজুর রহমান, মাওলানা মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
উক্ত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ জামালপুর জেলা উলামা পরিষদের পক্ষ থেকে জামালপুর জেলা থেকে আল-হাইআতুল উলইয়া বাংলাদেশ ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পরীক্ষার মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ ৩৬ ছাত্রকে সম্মননা ক্রেস্ট, মূল্যবান বই ও পাঞ্জাবী-পায়জামা উপহার দেওয়া হয়। এছাড়া গরীব মেধাবী ছাত্রদের পড়ালেখার সুবিধার্থে বিশেষ বৃত্তি প্রদান করা হবে বলেও জানানো হয়। সবশেষ প্রধান মেহমান আল্লামা আশরাফ আলীর মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
আরএম/