মুফতি তারিক মাসুদ
মুসলিম স্কলার ও দাঈ, পাকিস্তান
বর্তমানে আমাদের সমাজে কুফু না দেখেই বিয়ে শাদি হয়। অথচ, কুফু - গাইরে কুফুর বিয়ে করানো ভুল। হ্যাঁ জায়েজ আছে, তবে শরিয়তের অপছন্দনীয় কাজ। কোনো সময় বাধ্যবাধকতার কারণে কিছু বিষয় জায়েজ হয়। সেটা হয়তো কুফু খোঁজে না পাওয়ার কারণে কিংবা কুফু না মিললে হয়ে থাকে।
কুফু বলা হয়, 'ছেলে যে হবে সে মেয়ের ছয় জিনিসের সমপর্যায়ের বা উঁচু হবে। নিচু হতে পারবে না।'
কোন গাইরে কুফুর সঙ্গে কন্যার বিয়ে দেওয়া বাবার জন্য অনেক বড় ভুল। চার মাযহাব এ ব্যাপারে একমত। কেননা মহিলা স্বামীর অধীনে হয়। সুতরাং যার অধীনে থাকবে তার স্থান অবশ্যই অধীনস্থ থেকে উঁচু হওয়া জরুরি। কারণ আকল এ কথাই বলে, নিচের লোকেরা উপরের লোকদের অনুসরণ করবে। নিচের লোকদের নয়।
আর যদি নিচু লেভেলের কোনো পুরুষের সাথে উচু লেভেলের কোনো নারীর বিয়ে হয়ে যায়, তাহলে পরস্পরে তাদের জোড়া মিলে না। কারণ ইসলাম হলো দীনে ফেতরাত। আর দীনে ফেতরাত ঐটায় বয়ান করে যেটা উপযোগী হয়। অনুপযোগী কোনো বিষয় দীনে ফেতরাত বয়ান করে না।
ফুকাহায়ে কেরাম ছয় জিনিসের মাঝে কুফু ঠিক রাখার কথা বলেছেন। এ ছয় জিনিসের মাঝে কুফু ঠিক থাকা আবশ্যক। এ ছয় জিনিস পুরুষের জন্য নয়। পুরুষ নিজের চেয়ে নিচু জায়গায় বিয়ে করলেও শরীয়াতে তাকে অনুমতি দেয়। পুরুষ নিচু থেকে নিচুতে শাদি করতে পারবেন। কিন্তু মেয়ে পারবে না। বরং মেয়ের বেলায় কুফু তার সমপর্যায়ের হবে বা উঁচু হবে। তাহলে বিয়ে সফল হবে। অন্যথা সফল হবে না।
ছয়টি জিনিস নিম্মরুপ :
ক) বংশ: নারীর চেয়ে নিচু বংশের কারো সাথে কুফু হবে না। বরং সমপর্যায়ের বা উঁচু হতে হবে।
খ) পেশা: পেশায় নারীর চেয়ে নিচু হলে চলবে না। উঁচু বা সমপর্যায়ের লাগবে।
গ) দৌলত: এ দৌলত দ্বারা টাকা পয়সা কিংবা ব্যাংক ব্যালেন্স উদ্দেশ্য নয়। টাকা পয়সাতো আসে যায়। কখনো আছে। কখনো নাই। দেখা যায় আজ গরীব। কাল ধনী। তাই শরীয়ত কখনো টাকা পয়সাকে দৌলতমন্দ বলেনি। বরং কারো যদি দু'হাত ও দু'পা থাকে তাহলে শরিয়ত তাকে ধনী হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। কেননা সে সম্পদ উপার্জন করতে পারবে। এখানে দৌলত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এতটুকু পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া যতটুকু হলে মেয়ের মহরের টাকা দিতে পারে।
ঘ) ইসলাম: মুসলমান কন্যাকে মুসলমানের কাছেই বিয়ে দিতে হবে। কোনো ঈসায়ীর কাছে দিলে হবে না। তবে কোনো পুরুষের জন্য ঈসায়ীকে বিয়ে করা জায়েজ।
ঙ) দীনদারী: দীনদারী দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মেয়ে দীনদার। আর ছেলে কোন ধরণের কবীরা গুনাহে লিপ্ত। তাহলে সেও এই মেয়ের উপযুক্ত নয়। দীনদার নারীকে ফাসেকের কাছে বিয়ে দিলে বাবাকে কেয়ামাতের দিন জবাবদিহি করতে হবে।
চ) আলেমা: কোনো সত্যিকারের আলেমা মেয়ের কুফু গায়রে আলেম হতে পারবে না। সব মহিলা মাদরাসার ছাত্রীরা ভালো আলেমা হয় না এটা সবার আগে মনে রাখতে হবে। তবে ভালো মজবুত যোগ্যতাসম্পন্ন আলেমা মেয়ের বিয়ে গাইরে আলেমের কাছে দিতে পারবে না। তবে আলেম ছেলে আলেমা ও গায়রে আলেমা সবাইকে বিয়ে করতে পারবে।
এই ছয়টি বিষয় বিয়ের সময় পিতার দেখা জরুরি। কিন্তু আজকাল সমাজে কুফু মিলানো অনেক কঠিন। যদি বাবা এসব দেখা শুরু করে তাহলে সবদিক দিয়ে মিলানো মুশকিল।
তাই ফুকাহায়ে কেরাম এর একটি সুরত বের করেছেন। সেটা হলো, 'কোনো কুফুওয়ালা ছেলের দ্বিতীয় স্ত্রী বানিয়ে দেয়া। কেননা কোনো গাইরে কুফুর কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়ার চেয়ে কুফুওয়ালা ছেলের দ্বিতীয় স্ত্রী বানানো উত্তম। এর মাঝে দাম্পত্যজীবন সুখী হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি।
গাইরে কুফুওয়ালার কাছে দাম্পত্যজীবন সফল হওয়ার সুযোগ অনেক কম। এর মাঝে সারাজীবন দুঃখিনী মহিলা কষ্ট পেতে থাকে। একটা সময় এসে বিয়ে ভেঙ্গে যায়। অশান্তি দেখা দেয়। তাই পরিবারে শান্তির জন্য কুফু দেখে বিয়ে দেয়া জরুরি।
(উর্দু থেকে অনুবাদ করেছেন মুফতি মোস্তফা ওয়াদুদ কাসেমী)
এমএম/