মজলিসে দাওয়াতুল হকের আমির, গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদের খতিব ও যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহতামিম মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান এলাকাবাসীর প্রতি ১০ উপদেশ দিয়েছেন। আসুন বিষয়গুলো জেনে নেই।
আসসালামু আলাইকুম, শ্রদ্ধেয় এবং প্রিয় এলাকাবাসী! আপনারা অত্যন্ত সৌভাগ্যশীল কেননা— (১) কোনো প্রকার কষ্ট এবং যাতনা ব্যাতীতই আপনারা সর্বশ্রেষ্ট নেয়ামত ‘ঈমান’ লাভে ধন্য হয়েছেন।
সাহাবী বিলাল হাবশী এবং সুহাইব রুমীসহ অনেক সাহাবাদের কথা একটু স্মরণ করে দেখুন, তারা কী পরিমাণ নির্যাতন এবং যাতনা সহ্য করে ‘ঈমানের’ নেয়ামত লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সতুরাং এই নেয়ামতের কদর এবং মূল্যায়ন করুন, যাতে অবমূল্যায়নের কারণে এ নেয়ামত ছিনিয়ে নেয়া না হয়।
(২) আপনাদের জন্য শরীয়তের মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা করা অত্যন্ত সহজ। কেননা মাতৃভাষা বাংলায় তাফসীর, হাদীসসহ মাসআলা-মাসায়েলের ছোট-বড় প্রচুর কিতাব এবং বই-পুস্তক ছাপানো রয়েছে। সামান্য মূল্যের বিনিময়ে এই সমস্ত কিতাবাদি, বই-পুস্তক সংগ্রহ করতে পারেন। একটু চেষ্টা করলে বিনা মূল্যেও সংগ্রহ করা যায়।
একটু মনোযোগী হলে পর্যায়ক্রমে জরুরি বই-পুস্তক সংগ্রহ করতঃ অল্প অল্প করে পড়াশোনা করে অনেক কিছু শিক্ষা করতে পারেন।
(৩) আপনাদের এলাকায় আল্লাহর ঘর মসজিদ রয়েছে, পাঁচওয়াক্ত নামাযের সময় আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে মুয়াজ্জিন আপনাদেরকে দৈনিক ডেকে চলছে। নামাযের কথা স্মরণ করাচ্ছে। মসজিদে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করলে পঁচিশ গুণ সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।
নিজে এবং অন্যান্যদেরকে সাথে করে নিয়ে মসজিদের জামায়াতে শরিক হয়ে নামায আদায় করতঃ সৌভাগ্যশীল হতে পারেন। মসজিদ, ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং খাদেমের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহনশীল হোন এবং তাদের সাথে মুহাব্বত ও সুসম্পর্ক স্থাপন করে তাদের নিকট থেকে শরীয়তের মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা করুন।
(৪) আপনাদের এলাকায় বিরাট মাদরাসা বিদ্যমান রয়েছে। সেখানে যোগ্য যোগ্য ওলামা-মাশায়েখ রয়েছে এবং সর্বদা থাকেন। বিভিন্ন শহর এবং গ্রামে হাজার হাজার ছাত্রগণ এই মাদরাসা থেকে দীনি শিক্ষা লাভ করে হাফেজ, ক্বারী, মুফাসসির, মুহাদ্দিস এবং মুফতি ইত্যাদি হয়ে দেশ-বিদেশে দীনের খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছে; আপনারা এবং আপনাদের সন্তান-সন্তুতিগণ এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত কেন?
হাশরের ময়দানে মহান আল্লাহপাকের আদালতে স্বীয় সন্তানদের দীনি হক বিনষ্টের জন্য জবাবদিহি করতে হবে- একথা স্মরণ করে সত্তর নিজ সন্তানদের মাদরাসায় ভর্তি করুন, যাতে সুন্নত তরিকায় আপনার দাফন-কাফন এবং জানাযার নামাযে ইমামতি করতে পারে। আর মৃত্যুর পর আপনাদের মাগফিরাতের জন্য আল্লাহপাকের দরবারে মুনাজাত করতে পারে।
নিজেও সময় করে মাদরাসায় আনুন এবং উস্তাদ-ছাত্রদের সাথে শ্রদ্ধা ও মুহাব্বতের সম্পর্ক স্থাপন করে শরীয়তের মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা এবং বেশি বেশি নেক আমল করুন, যাতে ইহকাল-পরকালে মুক্তি পেতে পারেন এবং সুখী হতে পারেন। মনে রাখবেন, মৃত্যু অনিবার্য। এর কোনো বিকল্প নেই। বুদ্ধিমান সে যে মৃত্যুর পূর্বেই যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে।
(৫) আপনাদের এলাকায় বিশিষ্ট ওলামা-মাশায়েখগণ তাফসীর, দরসে হাদীস, ওয়াজ-নসিহত এবং ইসলাহী মজলিস করে থাকেন, তাদের মজলিসে শরিক হয়ে নফসের পরিশুদ্ধি এবং শরীয়তের মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা করতে পারেন। তাদের সোহবত এবং সান্নিধ্য অবলম্বন করে ইহকাল এবং পরকালের নাজাতের পথ সুগম করতে পারেন।
(৬) মনে রাখবেন, গোনাহ এবং পাপ ইহকাল এবং পরকালের জন্য সর্বনাশের কারণ। তাই সর্বপ্রকার গোনাহ থেকে সম্পূর্ণভাবে বেঁচে থাকুন।
বিশেষকরে গীবত-পরনিন্দা, অপপ্রচার, দোষচর্চা, কুটনামি, মিথ্যা, কানকথা, গালাগালি, ঝগড়া-কলহ, সিনেমা, যাত্রা, টিভি, ভিসিআর, ডিশ-এ্যান্টিনা, মদ, জুয়া, ঘুষ, অর্থলোভ, অন্যায়ভাবে অপরের সহায়-সম্পদ এবং জমিন দখল করা, মানুষকে কষ্ট দেয়া, ঠকানো, চিটারি করা, ধোকা দেয়া ইত্যাদি মন্দকাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকুন।
অন্যথায় ইহকাল এবং পরকাল উভয় জগতে আল্লাহপাকের কঠোর আজাবে আক্রান্ত হতে হবে।
(৭) মনে রাখবেন, আপনাদের পাশাপাশি মসজিদ এবং বিরাট মাদরাসা বিদ্যমান রয়েছে, যেখানে অসংখ্য মুসল্লিগণ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে থাকেন। হাজার হাজার ছাত্রগণ রাত-দিন পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত এবং মুখস্ত করায় নিমগ্ন আছে, তারা পবিত্র কুরআন-হাদীস গবেষণা এবং চর্চা করে থাকেন।
এমন কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকুন, যে কর্মকান্ডের কারণে তাদের পড়াশোনায় ক্ষতি না হয়। যারা দোকানে, বাসা-বাড়িতে, বিবাহ-শাদী এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, উচ্চৈস্বরে মাইক বাজিয়ে থাকেন, তাতে নামাযি এবং ছাত্রদের পড়াশোনার কতটুকু অসুবিধা হয়, তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন?
সতর্ক হোন, অতীত কর্মের জন্য আল্লাহপাকের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা এবং খাঁটি মনে তওবা করুন। আর ভবিষ্যতে এরূপ কর্মকাÐ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকুন, বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করুন।
(৮) আপনারা মুসলমান, মুসলমান হিসেবে আপনাদের ওপর যে সমস্ত কর্তব্য এবং দায়িত্ব রয়েছে, তা সঠিকভাবে আদায় করুন, পরিবার-পরিজন এবং অধীনস্থদের মধ্যে শরীয়তের আমল চালু করুন।
সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন তাদেরকে দীনের তালীম দান করুন। বই-পুস্তক পড়ে পড়ে শরীয়তের মাসআলা-মাসায়েল এবং কবর, হাশর, পুলসিরাত ও আখেরাতের কথা শুনানোর ব্যবস্থা করুন। বাসার পরিবেশ গোনাহমুক্ত করুন। তেলাওয়াত, যিকির, নামায এবং ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তুলুন।
(৯) আপনারা শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত। তাঁর শাফাআতই নাজাতের একমাত্র উপায়। সতুরাং তার হক আদায় করুন, তাঁর সুন্নতের পুরোপুরি অনুকরণ এবং অনুসরণ করুন। বিদআত, কুফুরি, শিরকি থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
অসৎ লোকের সং¯্রব থেকে দূরে থাকুন। আপনাদের কারণে যেন কোনো মানুষ বিদআত, শিরক, গোমরাহি তথা শরীয়ত বিরোধী গোনাহের কাজে লিপ্ত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
(১০) দৈনিক শোয়ার পূর্বে মুহাসাবা (কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ) ও মুরাকাবা (ধ্যান-মগ্ন) এবং তওবা-ইস্তেগফার করুন। অর্থাৎ যদি এখনই মৃত্যু হয়, তাহলে আখেরাতের মুক্তি এবং শান্তির জন্য আপনাদের নিকট কী পরিমাণ নেক আমল আছে, আমলের হিসাব-নিকাশ গ্রহণ করুন।
যদি নেক আমল করে থাকেন, তাহলে আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করুন, কেননা তিনিই তাওফিক দিয়েছেন। আর গোনাহ করে থাকলে খাঁটি মনে তওবা করুন, কাল থেকে গোনাহ থেকে বিরত থাকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করুন।
সর্বাবস্থায় অধিক পরিমাণ তওবা এবং ইস্তেগফার করতে থাকুন এবং যাতে সীরাতুল মুস্তাকীমের ওপর সুদৃঢ় থেকে ঈমানী মৃত্যু এবং জান্নাত নসীব হয়, সেজন্যে আল্লাহপাকের দরবারে বেশি বেশি মোনাজাত করতে থাকুন, আল্লাহপাক আমাকে আপনাদেরকে এবং সমস্ত মুসলমানকে নেক আমলের তাওফিক দান করুন। আমীন।
আরআর