আরবি বাংলা ও ইংরেজি বছরের প্রথম দিনকে আমরা আমাদের মতো করে বরণ করি, শুদ্ধ সংস্কৃতি, অশুদ্ধ সংস্কৃতির তোয়াক্কা করি না। এ বিষয়ে বিশ্ব বরেণ্য দায়ী মাওলানা তারিক জামিলের বার্তা আওয়ার ইসলাম পাঠকদের জন্য তুলে ধরছেন রোকন হারুন
আমাদের জীবন থেকে একটি বছর চলে গেল। এক বছর মৃত্যুর কাছাকাছি চলে আসলাম। দুনিয়া থেকে এক বছর দূরে চলে গেলাম। আমাদের অনেক সাথী, প্রিয়জনরা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন, আমরা এখনও বেঁচে আছি, আল্লাহর শোকর!
সময় খুবই মূল্যবান সম্পদ, আল্লাহ তায়ালা আমাদের এ নতুন বছর দান করলেন, এর কদর আমাদের করতে হবে। নতুন বছরে আমরা সাধ্যনুযায়ী নেক কাজ করব।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনের মধ্যে ‘সময়কে’ মূল্যবান বলে ঘোষণা করেছেন এবং সময়ের কসম খেয়েছেন; ‘ওয়াল আ’ছর’ বিশেষ করে আসরের সময়ের কসম! এটি কুরআনের শেষ দিকের সুরা, যেখানে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কসম খেয়েছেন।
কুরআনে কারীম খতম করার মুহূর্তে কসম খাওয়ার কারণটা এমন মনে হচ্ছে: দিনের শেষ ভাগে আসর। আসরের পর কম সময়ই বাকি থাকে সূর্য ডোবার, দিন শেষ হবার। আল্লাহ পাক বলছেন, আসরের সময়ের কসম! আসরের পর যেমন বেশি সময় বাকি থাকে না, তদ্রুপ এ দুনিয়ার জীবনও অতি সামান্য।
তোমাদের জীবনের সময়ও খুব সামান্য পরিমাণ। তাই অতি অল্প সময়ে যা করার করে আসো। গাফলাতির চাদর থেকে বের হয়ে আসো।
আল্লাহ তায়ালা আসরের কসম খেয়ে চারটি কথা বলেছেন। এক. ঈমান গ্রহণ কর ‘ইল্লাল্লাজিনা আমানুু’ সুতরং যারা ঈমান এনেছে।
দুই. ওয়া আমিলুস সালিহাত’ নেক কাজ করো। কবিরা গুনা থেকে বেঁচে থাকো। যদি গুনাহ হয়ে যায় তাৎক্ষণিক তাওবা করে নাও। তিন. ‘ওতাওয়া ছাওবিল হাক্ক’ নিজেদের মধ্যে হক সম্পর্কে আলোচনা করা।
চার. ‘ওতাওয়া ছাওবিছ-ছবর’ পরস্পর ছবরের দাওয়াত দাও।
আল্লাহ তায়ালা সময়কে মহামূল্যবান সম্পদ হিসেবে স্থির করেছেন, তিনি কসম খেয়েছেন আসরের, কসম খেয়েছেন চাশতের, কসম খেয়েছেন রাতের, সুবহে ছাদিকের, ফজরের।
‘ওলায়ালিন আ’শর’ তিনি কসম খেয়েছেন দশ রাতের, (হজের পূর্ব দশ রাত) ‘ওয়াশ-শাফয়ী ওয়াল ওতর’ নয় ও দশ তারিখের কসম খেয়েছেন। বারবার কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তায়ালা সময়ের উল্লেখ করে করে কসম খেয়েছেন।
চাঁদ, সূর্য ও তারকারাজি কসম খেয়েছেন। সময়ের নির্ধারণ হয় এই চাঁদ সূর্য তারকারাজির মাধ্যমে এবং সময়ের পরিবর্তন হয় দিন-রাত, রাত-দিনের অতিক্রান্তের, আল্লাহ তায়ালা এই সবকিছুর কসম খেয়েছেন পৃথক পৃথকভাবে। সময়ের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য, প্রতি ‘মুহূর্ত’ সময়ের মূল্য অনুধাবনের জন্য।
অতএব হে আমার প্রিয় ভাইবোন! সময়ের মর্ম বুঝে আমরা নেক কাজ করব। নেক কাজ করার সুযোগ না হলে অন্তত গুনাহর কাজ থেকে আমরা বিরত থাকার চেষ্টা করব। আর যদি কখনও গুনাহ হয়ে যায় তাহলে সাথে সাথে তাওবা করে নেব, ইনশাল্লাহ আল্লাহ মেহেরবান অনুগ্রহপূর্বক মাফ করে দিবেন ।
নতুন বছরের শুরু হওয়া দরকার আল্লাহ তায়ালার বিশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপনের মাধ্যমে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, পশ্চিমাদেশের অসভ্য সংস্কৃতি আমাদের অন্ধ বানিয়ে দিয়েছে! তাদের অনুস্মরণ করে হুবহু তাদের মতো করেই আমরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাই।
তারাতো জান্নাত জাহান্নাম সম্পর্কে কিছুই জানে না। কেউ তাদের কাছে জান্নাত জাহান্নাম আখেরাতের দাওয়াত নিয়ে যায়নি, এ হিসেবে তারা মা’যুর! কোনরকম এই দুনিয়াকেই তারা জান্নাত বানানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে।
আর আজ আমরা জান্নাত জাহান্নাম আখেরাত সবকিছু জেনেও তাদের মতো সংস্কৃতি উদযাপন করছি। হায় আফসোস!!
পশ্চিমারা নতুন বছরকে কীভাবে স্বাগত জানায় আমি দেখেছি। যখন রাত বারটা বাজে ঠিক তখনই তারা আল্লাহর নাফরামানি কর্মকাণ্ড শুরু করে। এভাবেই তারা নতুন বছরকে স্বাগত জানায়।
আজ সম্মানিত মুসলিমগণও এরকম নাফরমানি কাজের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়! এভাবেই যদি চলতে থাকে আমাদের কুসংস্কৃতির (অন্ধ-অনুস্মরণ), তাহলে আমাদের পরবর্তি বংশধররা কী শিখবে আমাদের থেকে, কোন পথে চলবে তারা?
৩১ তারিখ রাত বারটা বাজে উঠি। অজু করি। নফলের নিয়তে জায়নামাযে দাঁড়িয়ে যাই। মাথা ঝুঁকিয়ে দিই মালিকের পায়ে। মেহেরবান আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে কৃত পাপের ক্ষমা চাই। সাথে সাথে এ কথাও বলি- হে আল্লাহ, এই গভীর রাতে তোমার প্রিয় উম্মতের যতো যুবক-যুবতি, ছোট-বড় (বান্দা-বান্দিরা), তোমার নাফরমানিতে ডুবে আছে তাদের সবাইকে মাফ করে দিন।
আমার দায়িত্ব ছিল তাদের সবার কাছে আপনার দাওয়াত পৌঁছে দেয়া, তাদের বুঝানো, কিন্তু আমি পারিনি, দিইনি। আমি গুনাহগার, আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করে দিন, তাদের সাথে আমাকেও।
আমরা যারা দ্বীনের অনুসারী, দ্বীন বুঝি, দ্বীন মানি, তারা দূর থেকে তাদের এমন নাফরমানি কাজকর্মের কারণে তাদেরকে ঘৃণা করি। তাদের কাছে যাই না, দ্বীনের দাওয়াত দিই না। শয়তান আমাদের ও তাদের মাঝে একটা ঘৃণার আবারণ দিয়ে রেখেছে।
তারাও মুসলিমদের ঘৃণা করে। ঘৃণা করা তো খুব সহজ কাজ। কিন্তু তাদের জন্য দিলে ব্যথা অনুভব করা, চোখের পানি ঝরানো বড় কঠিন।
আজ আপনাদের কাছে আমার একটি আবেদন, যারাই আমার কথাগুলো শুনছেন; ছোট-বড় যেই হোন না কেন, সারা বছর আল্লাহর নাফরমানি থেকে একান্তভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করব।বছরের প্রথম দিন থেকে নিয়ে বছরের শেষ দিন পর্যন্ত নিষ্পাপ থাকার প্রয়াস করব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কবুল করুন।
আরআর