আওয়ার ইসলাম: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। এর মধ্যে অনেক আসনের ফল পাওয়া গেছে।
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। তার প্রাপ্ত ভোট দুই লাখ ২৯ হাজার ৫৩৯ ভোট। শেখ হাসিনার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী পেয়েছেন ১২৩ ভোট। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে বেশিরভাগ আসনে বিপুল জয়েরে পথে আওয়ামী লীগ।
এছাড়া, ঢাকা-৬ আসনে ২টি কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ পেয়েছেন ২ হাজার ৩৭৭টি ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী পেয়েছেন ২ হাজার ৭২ ভোট।
ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের সাদেক খান পেয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ১৬১ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আব্দুস সালাম পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৩২ ভোট।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে রংপুর-৩ আসনে ৪০টি কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ২৬ হাজার ৩৫৬ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রিটা রহমান পেয়েছেন ১১ হাজার ১৬৯ ভোট।
জয়পুরহাট-২ আসনের ১০টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন পেয়েছেন ২৩ হাজার ৬৯০টি ভোট এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এ ই এম খলিলুর রহমান পেয়েছেন ২ হাজার ৪১৪ ভোট।
বগুড়া-৬ আসনে ৩টি কেন্দ্রে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৫ হাজার ৪২৪ ভোট পেয়েছে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ওমর লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছে ৫৫৯ ভোট।
খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের শেখ সালাহউদ্দিন পেয়েছেন ১৭ হাজার ৩৯১ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দী বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৬৬ ভোট।
কুষ্টিয়া-১ আসনে আওয়ামী লীগের সারওয়ার জাহান ২ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭৮ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দী বিএনপির রেজা আহম্মেদ পেয়েছেন ৩ হাজার ৪২০ ভোট।
সাতক্ষীরা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মীর মোশতাক আহমেদ রবি পেয়েছেন ৬ হাজার ৮৫৬ ভোট।
এদিকে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবং উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। পাশাপাশি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হওয়ায় সন্তোষ জানিয়েছেন তারা। কিছু স্থানে সহিংসতা হলেও সামগ্রিকভাবে নির্বাচনের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করেন বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা।
প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরের অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের মধ্যে শেষ হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। রাজধানীজুড়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় প্রাণ গেছে অন্তত ষোল জনের। এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন ৩৮ বিদেশি পর্যবেক্ষক।
এরমধ্যে সামগ্রিক নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছেন ওআইসি, সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন ও ভারতের পর্যবেক্ষক দল। পাঁচটি কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের আট সদস্যের প্রতিনিধি দলের কানাডীয় পর্যবেক্ষক তানিয়া ফস্টার জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে।
সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষক ট্যানি ফস্টার বলেন, 'আমি কানাডা থেকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষনে এসেছি। এখানে আমি ৫টি ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নির্বিঘ্নে সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছে। সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।'
৫৭টি ইসলামী দেশের সংস্থা ওআইসির প্রতিনিধি দলের প্রধান জানান, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
ওআইসি সহকারী মহাসচিব হামীদ এ ওপেলয়েরু বলেন, 'সুন্দর ছিল নির্বাচনি পরিবেশ। ইভিএমমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা সামগ্রিক নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।'
একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় সন্তোষ জানিয়েছে ভারতীয় পর্যবেক্ষক দলও।
ভারতীয় পর্যবেক্ষক দলের প্রধান আরিজ আফতাব বলেন, 'এতো বড় একটি নির্বাচন সফলভাবে শেষ করা খুবই চ্যালেঞ্জের। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা ছিল খুবই গোছালো। তারা সবকিছুই দারুণভাবে করেছে।'
ভারতীয় পর্যবেক্ষক ড. গৌতম বলেন, 'মানুষ খুব চমৎকার ভাবে লাইনে দাড়িয়ে ভোট দিচ্ছে। যা খুব স্বতস্ফুর্ত বলেই আমরা মনে করছি। নির্বাচনের সুষ্ঠু ও শান্তি পূর্ন পরিবেশ বলেই আমাদের কাছে বিবেচিত হচ্ছে।'
এবারের নির্বাচন বিদেশি পর্যবেক্ষকদের প্রশংসা পেলেও ভোটে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে বিএনপি।
প্রসঙ্গত, এবারে নিবন্ধিত ৩৯টি দলই তাদের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। দীর্ঘ ১০ বছর পর মুখোমুখি হয়, রাজনীতিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দু’টি দলই জোটবদ্ধভাবে ভোটে অংশ নিয়েছে। একক দল হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা) সব থেকে বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে দলটির ২৯২ জন প্রার্থী রয়েছেন বলে জানা গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৮০০’র বেশি প্রার্থী। এর মধ্যে ৫০ জনের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থী, বাকিরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের।
এবার ৩০০ আসনে মোট ভোটার ছিলো, ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার। নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোট কেন্দ্র ও ২ লাখ ৬ হাজার ৪৭৭টি ভোটকক্ষ খোলা হয়। একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা- ৩ আসনে ভোট স্থগিত করা হয়। ওই আসনে ভোটারের সংখ্যা চার লাখের বেশি।
ইসলামী দলগুলো থেকে যারা দাঁড়িয়েছেন এখনও তারা কোনো আসনে বিজয় লাভ করেননি।
আওয়ামী লীগ ২৬৬, ঐক্যফ্রন্ট ৬, জাতীয় পার্টি ২২, স্বতন্ত্র পেয়েছে ৪, আর ভোট স্থগিত ১ আসনে, মোট ৩০০ আসন।
-এটি