মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের নগরী। এদেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। বর্তমানে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মুসলিম নারীদের অনেককেই পড়াশুনা, চাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে ঘরের বাইরে অবস্থান করতে হয়।
তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, কোনো ধর্মপ্রাণ নারী তার স্বামী, সন্তান, পিতা বা ভাইয়ের সাথে কেনাকাটা করতে বা কোথাও বেড়াতে বের হয়ে থাকেন। এসকল অবস্থায় পুরুষরা নিকটবর্তী মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারলেও নারীদের জন্য পৃথক কোনো নামাজের জায়গা না থাকায় প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা নামাজ আদায় করতে পারছেন না।
এজন্য তারা তীব্র মনোকষ্টে ভোগেন। তাই মসজিদে মসজিদে নারীদের জন্য পৃথক নামাজের জায়গা থাকা জরুরি মনে করছি।
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ফরজ। যদিও নারীদের জন্য তাদের নিজ নিজ গৃহের অভ্যন্তরেই নামাজ আদায় করা উত্তম বলে মহানবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, তবুও বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীরা কোনো প্রয়োজনে বাইরে বের হলে তার ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য পৃথক নামাজের জায়গা প্রয়োজন।
তাই সময়ের প্রয়োজনে নারীদের নামাজের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে। যাতে তারা প্রয়োজনে বাইরে গেলেও তাদের সুবিধা মতো নামাজ আদায় করে নিতে পারেন।
তাই আমরা আশা করবো, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, শিল্প কারখানা, শপিং সেন্টার, বাস স্টেশন, রেল স্টেশন, লঞ্চ ঘাট, যানবাহন-যাত্রাপথ, পর্যটন এলাকা, বিনোদন কেন্দ্র, হোটেল-মোটেলসহ সব জায়গায়ই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যেন শরিয়ত সম্মতভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন সে ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবেন।
কেননা আমাদের দেশে এসব স্থানে পুরুষের পাশাপাশি প্রচুর নারীও বিভিন্ন প্রয়োজনে চলাচল করে থাকেন। নামাজের ওয়াক্ত হলে পুরুষরা ঠিকই নামাজ আদায় করতে পারলেও সুযোগের অভাবে প্রতিদিন নামাজ কাজা হচ্ছে অসংখ্য নারীর।
আলহামদুলিল্লাহ! আশার কথা হলো, বর্তমানে ঢাকা শহরের বেশ কিছু এলাকায় নারীদের জন্য নামাজ আদায় করার পৃথক জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ করে অনেক মসজিদ, শপিং সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে এ ব্যবস্থা রয়েছে।
মসজিদের মধ্যে রয়েছে, বায়তুল মোকাররম মসজিদের নিচ তলায়, সোবহানবাগ জামে মসজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ, ধানমন্ডি ১২/এ লেকের সঙ্গেই অবস্থিত বায়তুত তাকওয়া মসজিদ, সায়েন্স ল্যাবের বায়তুল মামুর জামে মসজিদের ২য় তলায়, মিরপুর-১-এর ফেরদৌসী মসজিদ, ধানমন্ডি ৮-এর বায়তুল আমান জামে মসজিদ, উত্তরা ৪নং, ৬নং ও ৭নং সেক্টর মসজিদ, রমনা থানা জামে মসজিদ।
‘পশ্চিমাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীদের বেপর্দা চলাফেরা বিপদ ডেকে আনছে’
এছাড়াও মোহাম্মদপুর স্যার সৈয়দ রোডের আল আমিন মসজিদ, গুলশান-২-এর আজাদ মসজিদ, ঢাকা কলেজের পেছনে অবস্থিত নায়েম ভবন মসজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাটাবন মসজিদ, ফার্মগেট এয়ারপোর্ট রোডের বায়তুশ শরফ মসজিদ, মহাখালী টি বি গেটের মসজিদ-ই-গাউসুল আজম।
যেসব এলাকার শপিং সেন্টারগুলোতেও নারীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে, ঢাকা নিউ মার্কেট মসজিদ, জিগাতলার সীমান্ত স্কয়ার, ইস্টার্ন মল্লিকার ছাদে, মিরপুর রোডের রাপা প্লাজার ৫ম তলায় ও জয়ীতা শোরুমে, গাউছিয়া মার্কেটের নিচ তলায়, চাঁদনি চকের ৩য় তলায়, যমুনা ফিউচার পার্কের ৫ম তলায়।
এছাড়াও রয়েছে আবদুল্লাহপুরের পলওয়েল কারনেশন সেন্টারে, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের ৪র্থ তলায়, মৌচাক মার্কেটের ৪র্থ তলায়, ধানমন্ডি ২৭-এর জেনেটিক প্লাজার ১ম তলায়, গুলশান-১-এর ডিসিসি সুপার মার্কেট, টুইন টাওয়ার শপিং সেন্টারের ৪র্থ তলায়, পিংক সিটির বেইজমেন্টে, এবং উত্তরার নর্থ টাওয়ার মার্কেটের ৮ম তলায়।
বেশ কিছু হাসপাতালেও নারীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন স্কয়ার হসপিটাল, ইউনাইটেড হসপিটালের ৩য় তলায়, অ্যাপোলো হসপিটালের ৫ম তলায়, কল্যাণপুরের ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজে, ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক হসপিটালের ১.৫ তলায় এবং ধানমন্ডির ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেইজমেন্টে।
পরিশেষে বলবো, বাংলাদেশের নারীরা সাধারণত তাদের বাসা-বাড়িতেই নামাজ আদায় করে থাকে। কিন্তু যখন তারা ঘরের বাইরে কোনো কাজে বের হয়, তখনতো তাদের ফরজ নামাজ মাফ করে দেয়া হয়নি।
সেজন্য দেশের প্রতিটি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবং বড় বড় মসজিদগুলোতে নারীদের জন্য নামাজ পড়ার পৃথক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। কেননা সুযোগের অভাবে কারো নামাজ কাজা হয়ে গেলে তার দায়-দায়িত্ব পুরো জাতির উপরই পড়বে।
ভিক্ষাবৃত্তি, অকর্মণ্যতা পছন্দ করে না ইসলাম
এসএস