মুফতি আবদুল্লাহ তামিম >
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ [٣١:٦]
একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা লুকমান-৬)
কার্টুনও যেহেতু অবান্তর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের শামিল তাই তা দেখা জায়েজ হবে না।
কুরআনুল কারিমের অন্য জায়গায় আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দার পরিচয়ে বলছেন, মুমিনরা সফলকাম হয়ে গেছে। যারা নামাজে বিনয়ী ও নম্র। যারা অর্থহীন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে। সুরা মুমিন-১-৩
নামাজে বিনয়ী হওয়া আর অর্থহীন কাজ থেকে বিরত থাকা সমমর্যাদার দাবি করছে কোরআন। তাফসিরে মায়ারেফুল কুরআন বলছে, যে কাজ ধর্মীয় কোনো উপকার নেই, বরং ক্ষতির আশঙ্ক রয়েছে এমনাটাই অনর্থক কাজ। অনর্থক কাজ উচ্চস্তরের গোনাহ। এর থেকে থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব।
গেমস কার্টুন খেলা ও দেখা কি খুব উপকারের কাজ? শিশু-কিশোর ও তরুণদের মেধা-সময় কি তখন উপযুক্ত কাজে ব্যয় হচ্ছে?
আমেরিকার শিশু প্রতিদিন সাত ঘন্টা টিভি দেখা, মুম্বাইয়ে শিশু দালান থেকে লাফ দেয়ার চিত্র যে আগামী প্রজন্মকে ল্যাংড়া- লুলা করে প্রস্তুত করছে তা বুঝার জন্য বিজ্ঞানি হওয়ার প্রয়োজন নেই।
তারপরও একটি জরিপে আমরা দেখি, কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানিরা বলছেন, অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখার ফলে শিশুরা মুটিয়ে যাচ্ছে, মারাত্মক রোগের শিকার হচ্ছে।
রক্তে ফ্যাট, হাইপারটেনশন, হাইব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি বিস্তার ঘটছে। এছাড়া ভিডিও গেমসসহ এ জাতীয় অন্যান্য গেমস শিশুদের মস্তিষ্কের বিশেষ একটি অঞ্চলকে উত্তেজিত করে।
গেমস কার্টুনে ডুবে থাকার কাজটি কি কোরআনের অর্থহীন কাজের অন্তর্ভূক্ত নয়? হাদিসে রাসুলের বক্তব্য হলো, কোনো মানুষ যখন অনর্থক কাজ থেকে দূরে থাকে, তার কাজে ইসলামের সুন্দর্য ফোটে ওঠে।
ইসলামি ভাবধারার ভিডিও কার্টুন প্রসঙ্গে বলতে গেলে বলবা এই সব কার্টুনেও বিভিন্ন প্রাণীর ছবি, নারী-পুরুষের ছবি, বিভিন্ন সত্যমিথ্যা ডায়ালগ ইত্যাদি থাকে।
ইতিহাস ভিত্তিক কার্টুনে হজরত মুসা নবি সা. ও ফেরাওনের বিবরনে তাদের কৃত্তিম ছবি আকা হয়। বিবি আসিয়াও এসে হাজির হয়। বাচ্চাদের হজরত মুসা নবির গল্প শিখাতে গিয়ে একজন নবির কৃত্তিম ছবি আকার অনুমোতি ইসলাম আমাকে দিয়েছে কি?
আদম আ. এর ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হাবিল কাবিলের ছবি অঙ্কন ইসলাম আমাকে অনুমতি দেয়? সদকার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে মানুষের ছবি দিয়ে বুঝানো সেখানে নারীর কার্টুন তৈরি করার অনুমতি আমাকে দিয়েছে ইসলাম?
ইসলামের সূতিকাঘর হজরত সাহাবার মুখ থেকে শুনুন। সাঈদ ইবনে আবুল হাসান রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর নিকট উপস্থিত ছিলাম।
এমন সময়ে তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবু আব্বাস! আমি এমন ব্যক্তি যে, আমার জীবিকা হস্তশিল্পে। আমি এসব ছবি তৈরি করি। ইবনে আব্বাস রা. তাঁকে বলেন, এ বিষয় রাসুল সা. কে আমি যা বলতে শুনেছি, তাই তোমাকে শোনাব।
নবিজিকে আমি বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি আঁকবে আল্লাহ তাআলা তাকে শাস্তি দিবেন, যে পর্যন্ত সে ছবিতে প্রাণ দিতে না পারবে।
আর সে ছবিতে কখনোই প্রাণ দিতে পারবে না। এ কথা শুনে লোকটি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। এতে ইবনে আব্বাস রা. বললেন, আক্ষেপ তোমার জন্য! তুমি যদি এ কাজ না-ই ছাড়তে পার, তবে এ গাছপালা এবং যে সকল জিনিসের প্রাণ নেই, তা আঁকতে পার। (সহিহ বুখারি, চতুর্থ খন্ড, হাদিস- ২০৮৪ ইসলামিক ফাউন্ডেশান)
এছাড়াও মা আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সা. তাবুক যুদ্ধের সফর থেকে প্রত্যাগমন করলেন। আমি ঘরে পাতলা কাপড়ের পর্দা টাঙ্গিয়েছিলাম।
তাতে ছিল প্রাণীর অনেকগুলো ছবি। নবীজি সা. যখন এটা দেখলেন, তখন তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, কিয়ামতের সে সব মানুষের সবচেয়ে কঠিন আজাব হবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টি প্রাণীর অনুরূপ ছবি তৈরি করবে। । (সহিহ বুখারি,৯/৫৫৩০ ইফা)
হাদিস শরিফে আছে, আবদুল্লা ইবনে আব্বাস সূত্রে বর্ণিত রাসুল সা. বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি বানায়।( বুখারি-৯/৫৫২৬ ইফা)
ছবি আঁকা ও ছবি বানানোর প্রশ্নে কোরআন সুন্নাহর ভাষ্য যদি এতোটাই কঠিন হয়; তাহলে আমাদের কি অধিকার আছে ইসলামি ভাবধারার ভিডিও বানানোর?
সম্প্রতি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ অ্যানিমেটেড কার্টুনগুলোর বিরুদ্ধে অবৈধের ঘোষণা দিয়েছে।
সুতরাং আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন।
অারো পড়ুন-
সংবর্ধনার দাওয়াত নিয়ে গণভবনে যাচ্ছেন আল্লামা শফী
আমিনুল ইসলাম মামুন; শোলাকিয়া থেকে কোটি হৃদয়ে
যুক্তরাজ্যের স্কুলগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে হিজাব
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আল্লামা আহমদ শফীর সাক্ষাৎ সন্ধ্যায়