মুহাম্মাদ ফজলুল বারী
আলেম ও লেখক
মানুষ মাত্রই মানুষের উপকার করে। যে ব্যক্তি কারো উপকার করে তার জন্য দোয়া বা কল্যাণ কামনা করা প্রত্যেকেরই উচিত। এ বিষয়ে আমরা সাধারণত সতর্ক হই না। অথচ কেউ কারো উপকার পেয়ে এ দোয়া পড়ার পর শ্রবণকারীও দোয়াকারীর জন্য একটি দোয়া করা জরুরি হয়ে পড়ে। যা জানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অতিব জরুরি।
হযরত উসামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার প্রতি যদি কেউ কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তখন যদি তুমি তাকে জাযাকাল্লাহ খাইরান (আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) বল তাহলেই তুমি তার যথাযোগ্য প্রশংসা করলে।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২০৩৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৪১৩
অন্য হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন,. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি তোমাদের সাথে কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তাহলে তোমরাও তার সাথে কৃতজ্ঞতার আচরণ কর। (তাকে কিছু হাদিয়া দাও।) যদি কিছু দিতে না পার অন্তত তার জন্য দুআ কর। যাতে সে বুঝতে পারে যে, তুমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।-সুনানে আবু দাউদ ; আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারী ২১৬
জাযাকাল্লাহু খায়রান অর্থ আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। শুকরানও আরবী শব্দ। এর অর্থ তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। ধন্যবাদ বাংলা শব্দ। এটি প্রশংসাবাদ, সাধুবাদ বা কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপক উক্তি। আর থ্যাংক ইউ ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ তোমাকে ধন্যবাদ, তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এ শব্দগুলোর মধ্যে কোনটা আরবী, বাংলা বা ইংরেজি-এদিকে না তাকিয়ে শুধু এগুলোর অর্থের দিকে লক্ষ্য করলে দেখব, জাযাকাল্লাহু খায়রান বাক্যটি সবচেয়ে সারগর্ভ। কারণ এতে শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ নয়, উপকারীর জন্য কল্যাণের প্রার্থনাও আছে। আর যদি বলা হয়, জাযাকাল্লাহু খায়রান ফিদ দারাইন (আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
কেউ জাযাকাল্লাহ বললে উত্তরে ওয়া ইয়্যাকা বা ওয়া ইয়্যাকুম বলা যায়। অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকেও দান করুন।প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, জাযাকাল্লাহ-এর সাথে ‘খাইরান’ শব্দটি যোগ করতে যেন ভুলে না যাই। ‘খাইরান’ শব্দের অর্থ উত্তম আর ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ অর্থ আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
এক আরব শায়েখের কথা শুনেছি। তাঁকে যদি কেউ শুধু ‘জাযাকাল্লাহ’ বলত তাহলে তিনি নিজে থেকে ‘খাইরান’ শব্দটি যোগ করে নিতেন। কারণ প্রতিদান ভাল হতে পারে আবার মন্দও হতে পারে। তাই আমরা ‘জাযাকাল্লাহু খাইরান’ পুরোটা বলব।
চিন্তা করে দেখুন, কত সুন্দর শিক্ষা আমাদের ছিল, কিন্তু আমরা শুধু অবহেলা করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
কখনো এমন হতে পারে যে, যাকে জাযাকাল্লাহ বলা হল তিনি তা বুঝলেন না। সেক্ষেত্রে আমরা জাযাকাল্লাহর সাথে ধন্যবাদও বলতে পারি।
সর্বশেষ কথা এই যে, আমরা মুসলিম জাতি। আমাদের আছে একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। অথচ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে আস্তে আস্তে আমরা তা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এমনকি জাতীয় জীবনেও এখন বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ হচ্ছে। এটা খুবই ভয়ানক বিষয়। এটা একদিন আকীদা-বিশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলবে; বরং প্রভাব ফেলছে।
আল্লাহ আমাদেরকে সতর্ক হওয়ার তাওফীক দান করুন এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের আদব-কায়েদা রপ্ত করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
এসে গেল যাদুকরী মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার
-আরএম