মুফতি জাকারিয়া হারুন
ইফতার। রমজানের অন্যতম অনুষঙ্গ। আমরা ইফতার করি হরেক রকমের। অথচ আমার পাশেই দরিদ্র পরিবারটি ইফতারের জন্য কতো কষ্ট করছে! সেদিকে ফিরে তাকানোর ফুরসত নেই। বড়ই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যকে ইফতার করানোর বহু ফজিলত বয়ান করেছেন। যেন আমরা অসহায়,দরিদ্র রোজাদারের খোঁজ রাখি।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক নারী সাহাবি তাকে ইফতারের জন্য দাওয়াত করলো, তিনি তাতে সাড়া দিয়ে বললেন, ‘আমি তোমাকে বলছি, যে গৃহবাসী কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তাদের জন্য তার অনুরূপ সওয়াব হবে।
ঐ নারী বলল, আমি চাই আপনি ইফতারের জন্য আমার কাছে কিছুক্ষণ অবস্থান করুন বা এ জাতীয় কিছু বলেছে। তিনি বললেন, আমি চাই এ সাওয়াব আমার পরিবারও হাসিল করুক। (মুসান্নাফ ইবনে আব্দুর রাজ্জাক)।
হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করালো, সে রোজাদারের ন্যায় সাওয়াব পাবে, তবে রোজাদারের সাওয়াব বিন্দু মাত্র কমানো হবে না। (সুনানে তিরমিজি, সুনানে ইবনে মাজাহ, সুনানে নাসাঈ)
অন্য একটি হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ হবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে এবং সে ওই রোজাদারের সমান সাওয়াব পাবে। এতে ওই রোজাদারের সাওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না।
সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসল! আমাদের সবার তো আর রোজাদারকে ইফতার করানোর মতো সামর্থ্য নেই।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে খেজুর, পানি অথবা সামান্য দুধ দিয়ে ইফতার করাবে; মহান আল্লাহ তাকেও এই সাওয়াব দেবেন। (ইবনে খুজায়মা, সুনানে বায়হাকি)
এই হাদিস আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। কারণ এই হাদিসের আলোকে, আমরা সবাই রোজাদারকে ইফতার করানোর সাওয়াব অর্জন করতে পারি।
কারো জন্য এই সাওয়াব অর্জন করা কঠিন বিষয় নয়। এটা শুধু সামর্থ্যবানদের জন্যই নয়, বরং ধনী-গরীব সকলের জন্য এটা সহজ নেকি। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার। ইচ্ছা করলেই আমরা এই সাওয়াব অর্জন করতে পারি।
মহান আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ যে, তিনি বান্দার কল্যাণের নানা দিক উন্মুক্ত করেছেন। যেভাবে তিনি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করার আহবান জানিয়ে মহান সাওয়াবের ঘোষণা দিয়েছেন। যা এই রোজাদারকে ইফতার করানোর মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। এটা মহান আল্লাহর পরম অনুগ্রহ।
রোজাদারকে ইফতার করালে মহান আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তাঁর মহা পুরস্কার প্রদান করবেন। যদি কেউ ইফতার করার জন্য গরিবকে টাকা দেয় ; তাও ইফতার করানোর হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হবে। সে আর্থিকভাবে উপকৃত হলো।
মহান আল্লাহ আমাদের মানব কল্যাণের ও সাওয়াবের কাজে এগিয়ে যাওয়ার মহান সুযোগ রোজাদারকে ইফতার করানোর মাধ্যমে পালন করার তাওফিক দান করুক। আমিন। ইয়া রাব্বাল আলামিন।
আরো পড়ুন- রোজাদারদের মাঝে প্রচলিত ১০ টি ভুল চিন্তা ও কাজ