আওয়ার ইসলাম
দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ায় অনেকটা দিশেহারা বিএনপি। এই চরম সংকটময় মুহূর্তে খালেদার মুক্তি এবং নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য আন্তর্জাতিক মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের ক‚টনীতিকদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। বিশেষ করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর এ তৎপরতা বেড়েছে। বিএনপির আন্তর্জাতিক সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষনেতারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ক‚টনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তারা বাংলাদেশের রাজনীতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি ক‚টনীতিকদের সামনে তুলে ধরছেন। রাজনৈতিক এবং আইনগত পদক্ষেপের পাশাপাশি ক‚টনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে খালেদা জিয়ার জামিন এবং আপিল প্রক্রিয়া দ্রুত করার চেষ্টা চালাচ্ছে দলটি। এছাড়া বিদেশে অবস্থানরত বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন দেশে দলটির প্রবাসী শাখার নেতারাও এ লক্ষ্যে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দলের পক্ষে কাজ করা দক্ষ ক‚টনীতিক রিয়াজ রহমানের ওপর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে হামলার পর বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। এরপর গ্রেপ্তার হন দলের আরেক কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী। একপর্যায়ে তিনি দল ছাড়লে ক‚টনৈতিক উইংয়ে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি গ্রেপ্তার হন শফিক রেহমান। কারামুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি বিশ্রামে রয়েছেন। আরেক কূটনীতিক নেতা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়ি গুলশানে জ্বালিয়ে দেয়ার পর তিনিও এখন অনেক সতর্ক। এভাবেই ভেঙে পড়ে বিএনপির কূটনৈতিক উইং।
এ পরিস্থিতিতে গোপনীয়তা রক্ষা করে বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক অ্যাডভাইজরি কমিটি ঢেলে সাজানো হয়। কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। তার নেতৃত্বে দলটির আন্তর্জাতিক সেলে কাজ করছেন অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টু, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক এহছানুল হক মিলন, মাহিদুর রহমান, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, কেন্দ্রীয় নেতা তাবিথ আওয়াল, এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, নজরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, এডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
সূত্র জানায়, উন্নয়ন সহযোগিতায় বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে বেশি যোাগযোগ করছে বিএনপি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যসহ শক্তিধর দেশগুলোর কূটনীতিকদের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। অন্যদিকে ওইসব দেশে অবস্থানরত বিএনপির প্রবাসী নেতারা দেশের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরে সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সে দেশের সরকারের সামনে তারা বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরছেন।
সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য আন্তর্জাতিক জনমত নিজেদের পক্ষে নেয়ার জন্য স্বাভাবিক গতিতে কাজ করছিল বিএনপির আন্তর্জাতিক সেল। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাজা হওয়ার পর নতুন মিশন শুরু করেছে দলটি। এ মিশনের অংশ হিসেবে ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের ক‚টনীতিক এবং বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করে দেশের রাজনৈতিক এবং খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে অবহিত করছে। এছাড়া ১০০টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং ২০টি বিদেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে চিঠির মাধ্যমে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করেছে বিএনপি।
বিদেশিদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি সাংগঠনিক কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বিএনপির নেতারা। ঘরোয়া পার্টি, ব্যক্তিগত আড্ডায় কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘গণতন্ত্রবিরোধী’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন। পাশাপাশি আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়ার জামিন এবং দণ্ডাদেশ স্থগিতের পথে সরকার যেন কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য সহযোগিতা চাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, বিএনপির আন্তর্জাতিক কোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা প্রতিদিনই কূটনীতিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করছেন। গত শুক্রবার রাজধানী ঢাকার অন্তত তিনটি স্থানে একাধিক দেশের ক‚টনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজনসহ তিনজন নেতা। গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে ৯ দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন সাবেক মন্ত্রী বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। উত্তরার একটি হোটেলে কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির একজন আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। গুলশানে নিজের বাসায় ৫ দেশের ক‚টনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির আরেক নেতা।
সূত্র জানায়, ক‚টনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার অংশ হিসেবে বিএনপি ভারতের সঙ্গেও নতুন করে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। এ জন্য ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছে দলটি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিএনপির প্রবাসী নেতারা ওই সব দেশের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে লবিং করে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ক‚টনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছে বিএনপি। দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বিদেশি কূটনীতিকরা আগামীতে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চান। এ লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন। খালেদা জিয়ার সাজা পরবর্তী সরকারের কার্যক্রম এবং সব দলের অংশগ্রহণে যাতে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ হয় সে জন্যও তারা সুপারিশ তৈরি করছেন।
/এটি