আওয়ার ইসলাম: জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন বিলুপ্ত করে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করা নারী সাংসদ, সংশ্লিষ্ট নারীবাদি সংগঠন গুলোর দীর্ঘদিনের দাবি।
বর্তমানে সংসদে নারীদের জন্য ৫০ টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। আগামী বছর পর্যন্ত সময় ছিলো সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ। মেয়াদ শেষ হলে বিলুপ্ত হয়ে যেতো সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না। বৃদ্ধি করা হচ্ছে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ।
এ নিয়ে নারী আন্দোলনের কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেকটা আকস্মিকভাবে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ আরও ২০ বছর বাড়ানোর জন্য সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে।
নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো সংসদ নির্বাচনে নারীদের জন্য সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করার দাবি করে আসছে কয়েক দশক ধরে।
তারা সাধারণ আসনের জন্য দলগুলো থেকে নারীর মনোনয়ন বাড়ানো এবং সরাসরি দলের নেতৃত্বে আনারও দাবি করছে।
এসব দাবি বিবেচনায় না নিয়ে আবারও সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবে অবাক হয়েছেন নারী নেত্রীদের অনেকেই।
মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বের শীর্ষ স্তরে যাওয়ার সুযোগ না করে শুধু সংরক্ষিত আসন বাড়িয়ে নারীর সত্যিকারের ক্ষমতায়ন হবে না।
নারীর ক্ষমতায়ণের যে কথা বলা হয়, তার সাথে এই সিদ্ধান্ত পরস্পর বিরোধী। কারণ আমরা ক্ষমতায়ণ বলতে কি বুঝি কয়েকজন অনুগ্রহের পাত্রী হবেন? এবং এই প্রতিনিধি ঠিক করার ইনডিকেটরটা কী? সুতরাং এই পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যে অসম্পূর্ণতা আছে, সেখানেই সমস্যা।
সংসদ নির্বাচনে যে দল যত আসন পায়, সেই সংখ্যার আনুপাতিকহারে সংরক্ষিত আসনের বন্টনের ব্যবস্থা করা হলেও মূলতঃ ক্ষমতাসীনদলই এতে লাভবান হয় বেশি।
ফলে সংরক্ষিত নারী আসনের এমন ব্যবস্থা বহাল রাখার পেছনে বড় দলগুলোর স্বার্থের চিন্তা কাজ করে বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন।
অন্যদিকে যদিও দলগুলো তাদের তৃণমুল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত সব পর্যায়ে এক-তৃতীয়াংশ নারী নেতৃত্ব আনার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন দলগুলোকে কয়েকবার তাগাদাও দিয়েছে।
কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি - বড় এই দল দু'টি এখনও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি।
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি মনে করেন, প্রধান দুই দলের নেতা নারী হলেও রাজনীতি এখনও পুরুষতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আর সেকারণেই সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ বারবার বাড়ানো হচ্ছে।
কোটা সিস্টেমে যে নারীরা আসছেন, তারা কিন্তু রিয়েল অর্থে পলিটিশিয়ান না। অনুগত কিছু নারীকে বা প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক পরিবারের কিছু নারীকে এই কোটা সিস্টেমে আনা হচ্ছে। এখানে একটা পুরুষতান্ত্রিকতাকে রক্ষা করা যাচ্ছে। আসলে নারীর ক্ষমতায়ণ হচ্ছে না।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ছিল ১৫টি। এই আসন সংখ্যা কয়েক দফা বাড়িয়ে এখন তা ৫০ এ দাঁড়িয়েছে। আর প্রায় ৪৭ বছর ধরে এই ব্যবস্থা রয়েছে।
এখন এই আসনের মেয়াদ আরও ২০ বছর বাড়ানো হলে প্রায় ৭০ বছর ধরে ব্যবস্থাটিকে টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে।
এ পর্যন্ত এই ব্যবস্থায় যে নারীরা সংসদে এসেছিলেন, তাদের বেশিরভাগই রাজনীতির মূল ধারায় বা নেতৃত্বে আসতে পারেননি বলে নারী সংগঠনগুলো মনে করে।
এমন পরিস্থিতির জন্য বড় দলগুলো ব্যর্থতা দায়ী না-কি তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে, এসব প্রশ্নও করছেন অনেকে।
তবে সরকার মনে করছে, সংসদে নারীদের আসন সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা থেকে এখনও বেরিয়ে আসার সময় হয়নি।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নারীদের সরাসরি নির্বাচন করতে যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো এখনও সম্পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব হয়নি। সে কারণেই আমরা মনে করি যে এই ব্যবস্থা আরও ২০ বছর থাকলে ভালো।
আইনমন্ত্রী উল্লেখ করেন, এখন ২২জন নারী সরাসরি সাধারণ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদে এসেছেন। পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। এরপরও সরকার মনে করে যে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা আরও কিছুটা সময় বহাল রাখা প্রয়োজন।
এসএস/