রকিব মুহাম্মাদ
আওয়ার ইসলাম
সম্প্রতি স্যোশাল মিডিয়ায় একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, রাউতনগর তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের স্টেজে বক্তা এবং সভাপতির পাশে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছেন মহিলা অথিতি।
ঝাপসা হয়ে আসা পোস্টার থেকে জানা গেল তার নাম সেলিনা জাহান লিটা। পদবিটা ক্লিয়ার নয়। পোস্টারটি ঝাপসা হওয়া এটি কোন জেলার মাহফিল আয়োজক কারা তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
সাধারণত কুরআন হাদিসের আলোচনার মাহফিলগুলোতে এ দৃশ্য বিরল। স্বভাবতই এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম। অনেকে ট্রল করছেন আবার অনেকে তীব্র কটাক্ষবাণ।
মুহাম্মাদ আসাদুর রহমান নামের একজনের ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি শেয়ার করে লেখা হয়, ‘ওয়াজের মাহফিলে মহিলা, কিয়ামত অতি নিকটে। নাউযুবিল্লাহ।’
আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, আজব কারবার! ওয়াজ মাহফিলে মহিলা। আয়োজকরা কতই না বুদ্ধিমান, মাহফিল কি স্বার্থক..?
শুধু সমালোচনা নয়, অনেকে এমন কর্মকাণ্ডের জন্য মাহফিল কমিটির দিকে আঙুল তুলছে। এমন কাজ করলে ভবিষ্যতে মাহফিলের প্রতি মানুষের আবেগ এবং ভালোবাসা উঠে যাবে বলেও ধারণা করছেন কেউ কেউ।
আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী মিযানুর রহমান সৈকত লেখেন, কিয়ামতের আর কতো দেরী, পাঞ্জেরী! ওয়াজ মাহফিলে মহিলা আর মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে ব্যান্ড সংগীত আল্লাহ তুমি মাফ করো।
এর আগে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আরেকটি ছবি ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের এক বিদ্যালয় মাঠে বার্ষিক মিলাদ ও দোয়ার মাহফিলের স্টেজে এক নারী শিল্পী গান গাইছে এবং একদল বাদক বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছে।
হালে প্রায়ই এরকম ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ইদানীং নারী বক্তাদের মাইকে লাগিয়ে নারীদের মাহফিলও করতে দেখা যায়। রেকর্ড করে ইউটিউবে শেয়ারও করা হয় সে ওয়াজ।
অথচ, ইসলাম নারীদের পর্দার বিধান দিয়েছে। সেখানে ওয়াজ মাহফিলগুলোতে তাদের এমন উপস্থিত কতটা কাম্য। সমালোচকরা ভেবে দেখার অনুরোধ করেছে মাহফিল আয়োজকদের।
মাহফিলে নারীদের পর্দাহীন উপস্থিতি কতটা যৌক্তিক এবিষয়ে কথা হয় উত্তরার বায়তুল মুমিন মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও মাহফিল আলোচক মুফতি নিয়ামতুল্লাহ আমিনের সঙ্গে।
আওয়ার ইসলামকে তিনি বলেন, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি দেখেছি। আমার মনে হয় রাজনৈতিক চাপে পড়ে আয়োজকরা বাধ্য হয়েছেন তাকে মাহফিলে রাখতে। কিন্তু ওই নারীর চিন্তা করা উচিত ছিল আলেমদের সঙ্গে কিভাবে তিনি পর্দাহীনভাবে অতিথির আসনে বসলেন।
সাধারণ অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলোতে নারী পুরুষের উপস্থিতি দেখে যায়। এগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্নও নেই। কিন্তু মাহফিলের প্রসঙ্গটি ভিন্ন। তাই এটা আমাদের কাছে অস্বাভাবিকভাবে ধরা পড়ছে।
তিনি বলেন, দেশের মাহফিলগুলোতে ইসলামের বাণী প্রচার হয়। কুরআন হাদিসের আলোচনা হয়। সেখানে যদি কুরআনের একটি বিধান লঙ্ঘন করা হয় ধীরে ধীরে মাহফিলের ঐতিহ্য নষ্ট হবে। আর এটি এক সময় রসুমেও পরিণত হবে।
তাই প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের অনুরোধ থাকবে আলেম উলামাদের মাহফিলে এধরনের অনুষঙ্গ রাখবেন না। এতে নারী অতিথিরা বিব্রত না হলেও আলেমগণ বিব্রত হন।
আর ছবিটা দেখে অনেকেই বক্তাকে গালি দিচ্ছেন আমি বলবো, এখানে বক্তারও হয়তো দোষ নেই। কারণ তিনি হয়তো বাধ্য হয়েছিলেন ওই স্টেজে এভাবে বসতে।
আজই নিয়ে নিন আপনার টিকিট
একই বিষয়ে কথা হয় রাজধানীর জামিয়া দীনিয়া ইসলামিয়ার মুহাদ্দিস ও বক্তা মাওলানা আবদুল্লাহ নাটোরীর সঙ্গে।
আওয়ার ইসলামকে তিনি বলেন, এ ধরনের কাজ কাম্য নয়। প্রথমত জ্ঞানের স্বল্পতা, পর্দার প্রতি গুরুত্বহীনতা এবং পরকালের উদাসীনতা থেকে তারা এমনটা করছে। এটি আদৌ উচিত নয়। কারণ ইসলাম নারীকে পর্দা করে চলার বিধান দিয়েছে আর সে বিষয়ে আলোচনার স্থানে পর্দাহীন নারী ও দোয়া মাহফিলের স্টেজে গানের আয়োজন বিকৃত মানসিকতা।
এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, আলেম-ওলামা তাদের আলোচনার মাধ্যমে এবং ইসলাম সচেতন জনগণ সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে তাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়া এবং সবাইকে সচেতন করার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ সম্ভব।
‘আলিয়া’র এক প্রিন্সিপালও চাকরি ছেড়ে নুরানী শিক্ষায় যুক্ত হয়েছেন’