আওয়ার ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি মেনে নিয়ে পারেননি মাদরাসা শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। আর তাই বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা।
ড. আবুল বারাকাত বলেছেন, মাদরাসা শিক্ষা পশ্চাৎপদ। এ নিয়ে দ্বিধার কোনো কারণ নেই। শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক বানাতে এ শিক্ষা ব্যর্থ।
আবুল বারাকাত মাদরাসা শিক্ষাকে জঙ্গি উৎপাদনেও উর্বর বলেও মন্তব্য করেন। অথচ বিষয়টি নিয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অভিমত, এ পর্যন্ত যত শিক্ষার্থী জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন অধিকাংশই স্কুল ভার্সিটির।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষার রাজনৈতিক অর্থনীতি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং ‘বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষা বনাম শিক্ষাবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম’ শীর্ষক আলোচনা মাদরাসা শিক্ষাকে কটাক্ষ করেন ড. আবুল বারাকাত।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন ও প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন আবুল বারকাত। এএলআরডি এ সভার আয়োজন করে। মানবাধিকার কর্মী ও এএলআরডির চেয়ারপারসন খুশী কবিরের সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান, অধ্যাপক এম এম আকাশ।
বক্তব্যে ড. আবুল বারকাত আরও বলেন, দেশে প্রতি তিনজন ছাত্রের একজন মাদরাসা শিক্ষার্থী। এটি সামগ্রিক শিক্ষার জন্য ভীতিকর। ২০০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, তখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় এক কোটি। এদের অর্ধেক কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী, যেখানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা হস্তক্ষেপ নেই।
২০০৮ সালে এই কওমি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল ৫২ লাখ। এখন এটি ৭২ লাখে এসে পৌঁছেছে। আর এখন মোট মাদরাসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় কোটি। মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষকের সংখ্যাও সাধারণ শিক্ষায় পাঠদানরত শিক্ষকের এক-তৃতীয়াংশ।
তিনি বলেন, মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে যারা রয়েছেন তাদের ৯২ শতাংশ নিজেদের সন্তানকে মাদরাসায় পড়ান না। তিনি বলেন, মাদরাসায় অধ্যয়ন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯২ শতাংশ দরিদ্র পরিবার থেকে আসে।
এদিকে ড. আবুল বারকাত কর্তৃক ‘অসাম্প্রদায়িক বানাতে মাদরাসা শিক্ষা ব্যর্থ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, জঙ্গিত্ব উৎপাদনে এ শিক্ষা উর্বর’ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ।
আজ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ড. আবুল বারাকাত মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে যে মন্তব্য করেছেন তা মিথ্যা, অবাস্তব, উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং ইসলাম ও উলামায়ে কেরামের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত। তিনি সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়াতে ও সাম্রাজ্যবাদের নিমক হালাল করতেই এই প্রপাগাণ্ডা লিপ্ত হয়েছেন।
মুফতী ফয়জুল্লাহ বলেন, এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কওমি মাদরাসা শিক্ষিতদের অবদান অনেক। চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসাসহ বিভিন্ন কওমি মাদরাসার পাশেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির রয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেসব মন্দিরে কোন হামলা কিংবা দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেনি।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালগুদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলায়ও মাদরাসা শিক্ষিতদের প্রমাণ মেলেনি। ঘুরে ফিরে এমন ব্যক্তিদের নামই এসেছে যারা কোন দিন মাদরাসার আঙ্গিনায়ও পা রাখেনি। তাহলে কোন যুক্তিতে কাকে খুশি করার জন্য জনাব আবুল বারাকাত মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে এই মন্তব্য করলেন, তা এদেশের মানুষ ভাল করেই বুঝে।
মুফতী ফয়জুল্লাহ আরো বলেন, মাদরাসা শিক্ষা পশ্চাদপদ নয়, বরং অগ্রগামী ও নৈতিকতা শিক্ষার মানদণ্ড। এই শিক্ষা নিয়ে যারা বাজে মন্তব্য করে, তারাই পশ্চাদপদ ও নিম্নমুখি। তাদের জ্ঞানের পরিধি প্রশ্নবিদ্ধ।
বিবৃতিতে তিনি মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দেশের আলেম-উলামা ও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
‘সাধারণ শিক্ষিত বেকার ২ কোটি; কওমি মাদরাসার কেউ বেকার নেই’