শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

বিশ্ব ইজতেমার বয়ান ০২; ১ম দিন বাদ আসর; মাওলানা আবদুল বারী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জুনাইদ শোয়েব
ইজতেমা মাঠ থেকে

এবারের বিশ্ব ইজতেমার ১ম পর্বের প্রথম দিন বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা বাদুল বারী। বয়ানে তিনি মানুষের মাঝে সবচেয়ে উত্তম মানবের গুনাবলি নিয়ে আলোচনা করেন।

রাসুল সা.এর এক হাদিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরামের প্রশ্নের জবাবে রাসুল সা. বলেছেন আল্লাহ পাক যাকে দীর্ঘ হায়াত দান করেছেন এবং এই দীর্ঘ হায়াত পেয়ে যে আল্লাহর পছন্দনীয় কাজ করেছে এবং সেই পছন্দনীয় কাজ নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে, সমস্ত মানুষের মধ্যে সেই আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান। আর এই মর্যাদাবান ব্যক্তির উপর আল্লাহ পাক তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান।

পছন্দনীয় কাজ করে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে সব সময়ই বড় বড় কাজ করতে হয় না। আল্লাহ তায়ালা ছোট কাজের দ্বারাও সন্তুষ্ট হয়ে যান। উদাহরণ দিয়ে তিনি হাদিস উল্লেখ করেন,

আল্লাহ তায়ালা মিসওয়াক করার কারণেও খুশি হন। এটা রাসুল সা.এর সুন্নত। তিনি সব সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মিসওয়াক করতেন। ঘুমানোর সময় ও ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করতেন। এমনকি ওফাতের সময়ও তিনি মিসওয়াকের দিকে তিনি আগ্রহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন।

হযরত আয়েশা রা. বলেন, তখন আমি মিসওয়াকটি চিবিয়ে নরম করে দিলাম আর রাসুল সা. তা দ্বারা মিসওয়াক করেন এবং তৃপ্তিবোধ করেন।

রাসুল সা. এর সর্বদা পালনীয় সুন্নতের জন্যই আল্লাহ তায়ালা এই আমলটি দ্বারা সন্তুষ্ট হয়েছেন। রাসুল সা. কে আয়েশা রা. জিজ্ঞেস করেছিলেন আপনি এতো বেশি মিসওয়াক করেন কেনো?

রাসুল সা. বলেছিলেন আমার সাথে সবসময় ফেরেস্তাদের কথা হয়। জিবরাইল আ. কুরআন নিয়ে আসেন। ফেরেশতারা মানুষের মুখের দুর্গন্ধে কষ্ট পায়। তাই আমি সর্বদা মুখ পরিষ্কার রেখে ফেরেশতাদের কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকি। আর আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মিসওয়াকের প্রতি যত্নবান থাকি।

ঈমানি দাওয়াতে মেহনত কারিদের গুনাবলী ও গুরুত্ব বর্ণনা করে মাওলানা আবদুল বারী বলেন, ইসলাম শিক্ষা দেয়ার জন্য ঈমানের দাওয়াত দেয়ার জন্য নিজের আমিত্ব ও বড়ত্ব পরিহার করতে হবে।

হজরত ওমর রা. এর একটি ঘটনা উল্লেখ করেন তিনি, একবার ওমর রা. তার খেলাফতকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অসুস্থতা কালে এক যুবক খলিফাকে দেখতে আসে। কুশলাদি শেষ করে যখন যুবক ফিরে যাচ্ছিলো তখন হজরত ওমর রা. তাকে ডাকলেন!

يا اخي ! (হে আমার ভাই) ! ওমর রা. এত্তো বড় একজন খলিফা হয়েও এক সাধারণ যুবককে ভাই বলে সম্বোধন করলেন। তাকে বললেন( ارفع ثيابک !) তোমার টাখনুর নিচে নেমে যাওয়া কাপড় উপরে উঠিয়ে নাও ।

দাওয়াত ও তালিমের ক্ষেত্রে এভাবেই নমনীয়তা অবলম্বন করতে হয়। এভাবে আবু বকর সিদ্দিক রা.। তিনিও ছিলেন খুব বিনয়ী।

দাওয়াতী কাজের জন্য আল্লাহ তায়ালা খুব ভাগ্যবান বান্দাদের নির্বাচিত করেছেন। দোকানি ফল গুছিয়ে রাখার পরও ক্রেতারা যেভাবে খুব সন্তুর্পনে সেখান থেকে ফল বেছে নেয় তেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালা সব মানুষ সৃষ্টির পর দাওয়াতি মেহনতের জন্য কিছু মানুষ বেছে নিয়েছেন।

মহান রাব্বুল আলামিন কুরআনে বলেন, وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ وَيَخْتَارُ ۗ ُ

এ আয়াত তেলাওয়াত করে আলোচক বলেন আল্লাহ তায়ালা যাকে যেভাবে ইচ্ছা মনোনীত করেন।

দেশে এই প্রথম আধুনিক চিকিৎসার সমন্বয়ে নববি চিকিৎসা হিজামা

যেভাবে আল্লাহ তায়ালা জমিনকে বাছাই করেছেন মানবজাতির জন্য, মানবজাতিকে বেছে নিয়েছেন ঈমানের জন্য, মক্কা নগরী বেছে নিয়েছেন কাবার জন্য, সপ্তম আসমানের উপর জান্নাতুল ফেরদাউসকে নির্বাচিত করেছেন নবীদের জন্য।

তেমনিভাবে পছন্দনীয় বিশেষ বান্দাদের তিনি সৃষ্টি করেছেন ঈমানের দাওয়াত প্রচারের জন্য।

আল্লাহ তায়ালা নবীদের বাছাই করেছেন ঈমান প্রচারের জন্য, আর উম্মতে মুহাম্মদিকে নির্বাচিত করেছেন সেই নবী আ. এর রেখে যাওয়া কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য।

এমনকি যখন এই কাজ স্তিমিত হয়ে আসবে তখন আল্লাহ তায়ালা নবী হজরত ইসা আ. কে উম্মতে মুহাম্মদের মর্যাদা দিয়ে আসমান থেকে নামিয়ে আনবেন ঈমানের দাওয়াতের জন্য।

তাই যারা উম্মতে মুহাম্মদি হয়ে সম্মানিত হয়েছি সবারই এই দাওয়াতি মেহনতে কাজ পরিপূর্ণভাবে কাজ করতে হবে এবং দাওয়াতি সাথীদের গুনাবলী অর্জন করে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি হাসিল করতে হবে।

তিনি তার মূল আলোচনায় বলেন, দীনের পূর্ণতা আসে দাওয়াতের দ্বারা। আর দাওয়াতের পূর্ণতা আসে ইজতেমায়ি ও ইনফেরাদি আমালের সমন্বয়ে।

দাওয়াত তালিম ইবাদত খেদমত মানুষের সাথে করা সামাজিক কাজ এগুলো ইজতিমায়ী আমল। আর ইনফিরাদি আমল হলো, তাহাজ্জুদ-ইশরাক, চাশত-আওয়াবিন, যিকির-তেলাওয়াত, সুন্নাহর পাবন্দি, রোনাজারি ইত্যাদি।

যেগুলো প্রত্যেক উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য পালন করা উচিত। এইসব ইজতেমায়ি বা ইনফেরাদি আমলের ঘাটতি হলে দাওয়াত পরিপূর্ণতা আসে না। অন্যদিকে কোন আমলই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পূর্ণতা পায় না! আর আমলের পরিপূর্ণতা ছাড়া আল্লাহর সাহায্যও পাওয়া যায় না।

তাই দাওয়াত ও দীনের পরিপূর্ণতার জন্য আমলের পূর্ণতা নিশ্চিত করতে হবে। আর আমলে পূর্ণতা আসলেই আল্লাহর সাহায্য আসবে।

ইসা আ. সম্পর্কে খৃস্টানরা বলে তাকে শুলিতে চড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলেন তাকে হত্যা করা হয়নি। তাকে আমি নিজ হেফাজতে আসমানে তুলে নিয়েছি। তিনি আসমানে আছেন। এই নবীর উম্মত হয়ে তিনি আগমন করবেন।

এই নবীর উম্মতের মধ্যে যখন দাওয়াতের মেহনত কমে যাবে তখন তাদের নিয়ে দাওয়াতি মেহনত বৃদ্ধি করতে তিনি আসবেন। তিনি দাওয়াতি কাজ নিয়েই আসবেন তবে এই নবীর উম্মত হিসেবে।

নবীর কাজ আর শান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ* قُمْ فَأَنذِرْ *

‘হে নবী আপনি রাতে আমার দরবারে কিয়াম করুন। আর দিনে মানুষকে আমার প্রতি সতর্ক করেন।’

নবীর এক কাজ দিনে আরেক শান রাতে। দিনে নবী দাওয়াতি কাজ নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যান। মানুষের ঈমানি দাওয়াত নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

আর রাতে যাদের ঈমানের দাওয়াত দেয়া হয়েছে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে রোনাজারি করেন। এ আয়াত নাজিলের পর রাসুল সা. দীর্ঘ দিন সারারাত কেদে কেদে কাটাতেন। সারা রাত নামাজ আদায় করতেন। একদমই ঘুমাইতেন না।

তখন কাফিররা বলতে লাগলো মুহাম্মদের উপর কেমন কিতাব নাজিল হলো? যে কিতাবের হুকুম মুহাম্মদের নাওয়া খাওয়া সব বন্ধ করে দিলো?

তখন আল্লাহ তায়ালা নবী সা. এর কাছে আবার অহি নাজিল করলেন ﻃﻪ * ﻣَﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻟِﺘَﺸْﻘَﻰ * *

আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আমি আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য কিতাব নাজিল করিনি। কাফিররা আপনার তিরষ্কার করবে এজন্য কিতাব নাজিল করিনি!’

يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ. قُمِ اللَّيْلَ إِلاَّ قَلِيلا. نِصْفَهُ أَوِ انقُصْ مِنْهُ قَلِيلا. أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ .

আপনি রাতের কিছু অংশে জাগেন। অর্ধেক রাত জাগেন, বেশি রাত জাগেন, যতোটুকু শরীরে কুলানো যায় ততোটুকুই জাগেন!

নবীজির দিনের কাজ আর রাতের শান ছিলো দীনের দাওয়াতি কাজ আর রাতে আল্লাহর কাছে রোনাজারি।
আল্লাহ তায়ালা রাতের রোনাজারি এজন্যও গুরুত্ব দিয়েছেন যাতে করে উম্মতের মুহাম্মদি গুনাহমুক্ত থাকতে পারে। আল্লাহ তায়ালার কাছে কৃত গোনাহের জন্য ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করে দেন।

এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন لا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ *

এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা নবীদের কাজের সম্মানও দিলেন সাথে নবীদের মতো গুনাহ মুক্ত থাকার সুযোগও করে দিলেন।

তাই রাসুল সা. এর উম্মতের উপরে এটা বিশেষ সম্মানিত কাজ যা নবীগণের মতো করেই দাওয়াতি কাজ করে যাওয়া।

নবী সা. যেভাবে দিনে দাওয়াত, রাতে রোনাজারি করতেন সেভাবে আমল করা। ফলে আল্লাহ তায়ালা নবীগণকে যে শান দিয়েছিলেন; মুহাম্মদ সা. এর উম্মতদেরও সে মর্যাদা দেয়া হবে।

এই দীন ও দাওয়াতি কাজ পরিপূর্ণতা আসবে ইনফিরাদি ও ইজতিমায়ি কাজের সমন্বয়ে।

দাওয়াত তালিম ইবাদত খেদমত জিকির তিলাওয়াত মুয়ামালাত ইত্যাদি এগুলো ইজতিমায়ি আমল। আর ইনফিরাদি আমল হলো তাহাজ্জুদ ইশরাক চাশত আওয়াবিন যিকির তেলাওয়াত ইত্যাদি।

উভয় প্রকারের আমল পালন করা প্রত্যেক উম্মতে মুহাম্মাদির উপর জরুরি । এইসব ইজতেমায়ি বা ইনফেরাদি আমলের ঘটতি হলে দাওয়াত পরিপূর্ণ হয় না। আর দাওয়াত পরিপূর্ণ না হলে দীনেরও পূর্ণতা আসে না।

কারণ কোন কাজই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পূর্ণতা পায় না! আর দ্বীনের পরিপূর্ণতা আল্লাহর সাহায্যও পাওয়া যায় না। তাই দাওয়াত ও দীনের পরিপূর্ণতার জন্য আমলের পূর্ণতা নিশ্চিত করতে হবে।

দ্বীনের পূর্ণতা পেলেই তখন আল্লাহ তায়ালা তার ওয়াদাকৃত সাহায্য পাঠাবেন। إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الْأَشْهَادُ *

‘নিশ্চয় আমি আমার রাসুলকে সাহায্য করবো দুনিয়াতে এবং যারা ইমান এনেছে তাদের সাহায্য করবো এবং কিয়ামতের দিনও তাদের সাহায্য করা হবে।’

এইজন্য আমাদের যে জিম্মাদারী দেয়া হয়েছে তা পালন করতে হবে। এ জিম্মাদারী দু প্রকার প্রথমত ব্যাক্তিগত
(ذاتي) জিমাদারী পুরা করা দ্বিতীয়ত ইজতেমায়ি জিম্মাদারি।

তাহলো মানুষের মাঝে দাওয়াত ও তালিম এবং উম্মতকে আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক গভীর করে দেয়া।

আমরা এই মাঠে একত্রিত হয়েছি দাওয়াতি মেহনত শিখতে বুঝতে এবং মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য।
জীবনের শেষ পর্যন্ত এই দাওয়াতি মেহনত আমরা ধরে রাখবো বলে সকলেই রাজি আছি তো ইনশাআল্লাহ।

এই কাজের মাধ্যমেই আল্লাহর সাহায্য মিলবে, দীন পরিপালনে পূর্ণতা আসবে, নবীদের কাজের মর্যাদা প্রাপ্তি হবে, এবং এ কাজগুলোই আল্লাহ তায়ালার কাছে পছন্দনীয় হয়ে তার সন্তুষ্টি অর্জন হবে। ইনশাআল্লাহ

মাগরিব পূর্ব মুহূর্তে দুয়া কবুলের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এবং সকলকে দূরুদ ও দুয়া'র প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তার আলোচনা শেষ করেন ।

বিশ্ব ইজতেমার বয়ান ০১; শায়খ ওমর খতিব


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ