রকিব মুহাম্মাদ
আওয়ার ইসলাম
বসনিয়ার কসাই হিসেবে কুখ্যাত রাতকো ম্লাদিচকে মুসলিম গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছে নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মুসলিম গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাবেক বসনিয়ান-সার্বিয়ান কমান্ডার রাটকো ম্লাদিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে ।
সারায়েভেো অবরোধ ও ১৯৯৫ সালের স্রেব্রেনিকা গণহত্যার নেতৃত্ব দেন ম্লাদিচ যাতে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ নিহত হয়।
বুধবার সাবেক যুগোস্লাভিয়া (আইসিটিইবি) -এর জন্য গঠিত হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রিজাইডিং বিচারক এই রায় দেন।
১১টি অভিযোগের ১০টিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনাল। রায় পড়ে শোনানোর সময় চিৎকার করার জন্য ম্লাদিচকে আদালত থেকে বের করে দেয়া হয়।
তার আইনজীবীরা উচ্চরক্তচাপের কথা বলে আদালতের কাজ বন্ধ করার আবেদন জানালেও তা গ্রহণ করেনি ট্রাইব্যুনাল।
৭৪ বছর বয়সী এই কসাই জেনারেল স্রেব্রেনিচায় সংঘটিত গণহত্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
স্রেব্রেনিচায় সংঘটিত গণহত্যায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও তরুণকে হত্যা করা হয়েছিল; যেটি পূর্ববর্তী রায়ে বলা হয়েছিল।
বিচারক অলফোনস অরিয়ে তার রায়ে বলেন, স্রেব্রেনিচায় বসবাসরত মুসলমানদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে অপরাধীরা এই অপরাধ সংঘটিত করেছিল।
বিচারক তার রায়ে আরো বলেন যে সারজেভোতে ভয়াবহ গুলিবর্ষণ ও গণহত্যার বিষয়টি রাটকো ম্লাদিক ব্যক্তিগতভাবে তদারক করতেন।
‘বসনিয়ার কসাই’ হিসেবে খ্যাত রাটকো ম্লাদিকের বিরুদ্ধে ১১ অভিযোগ আনা হয়েছিল। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বসনিয়ার এই যুদ্ধে রাটকোর নেতৃত্বে তার বাহিনী এসব অপরাধ সংঘটিত করেন।
তবে, আদালত তার রায়ে বলেছে যে আগের রায়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অন্য ছয় শহরে গণহত্যা অভিযানের বিষয়টি ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’।
রায় ঘোষণার সময় সাবেক এই জেনারেলকে শুরুতে উদ্বেগহীন দেখা গেলেও পরে তিনি উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করতে শুরু করেন। পরে তাকে আদালত থেকে সরিয়ে নেয়া হয়ে।
তার আইনজীবী জানান, উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার জন্য রাটকোকে সাময়িক মুক্তি দেয়া প্রয়োজন।
সাবেক যুগোস্লাভিয়াজুড়ে হাজার হাজার মানুষের কাছে বুধবার রায়টি ছিল বহুল প্রত্যাশিত। এই রায় ঘোষণা উপলক্ষ্যে হেগে আদালতের বাইরে কয়েকজন মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।
তাদের অনেকে গণহত্যায় নিহত প্রিয়জনদের ছবি প্রদর্শন করে ন্যায় বিচার দাবি করেন। এই ঘটনায় এখনো ৭ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ফরমার যুগোস্লাভিয়ায় বিচার চলছে ম্লাদিচের যা এই ট্রাইব্যুনালের শেষ বিচার কাজ।
১৯৯৫ সালের স্রেব্রেনিকা গণহত্যায় ৭ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর নিহত হয়। সারায়েভো অবরোধের সময় নিহত হয় আরো ১০ হাজার মানুষ।
১৯৯৫ সালে যুদ্ধশেষে পালিয়ে যান ম্লাদিচ এবং পরিবার ও সার্ব সেনাবাহিনীর কিছু অংশের সহায়তায় আত্মগোপনে থাকেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ গঠন করা হলেও তাকে গ্রেফতার করা যায়নি।
১৬ বছর পলাতক থাকার পরে সার্বিয়ার উত্তরাঞ্চলে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ২০১১ সালে গ্রেফতার করা হয়। সূত্র: আল জাজিরা