আওয়ার ইসলাম : রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছে চীন। একইসঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা যেন রাখাইনে ফিরতে পারে, সে জন্য অস্ত্রবিরতিরও আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
সোমবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় অনুষ্ঠিত এশিয়া-ইউরোপের ৫১ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এই প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
ওয়াং ই বলেন, চীন বিশ্বাস করে সমঝোতার ভিত্তিতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ এ সংকটের সমাধান করবে।
তিনি বলেন, ‘প্রথম ধাপে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করতে হবে, যাতে মানুষ শান্তিতে থাকে এবং কোনোভাবেই কেউ যেন পালিয়ে যেতে বাধ্য না হয়।’
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সব পক্ষের কঠোর পরিশ্রমে প্রথম ধাপের লক্ষ্য কার্যত অর্জিত হয়েছে এবং আকস্মিক সহিংসতা, বিশেষ করে, যুদ্ধের আগুন যাতে পুনরায় ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াং বলেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে একটি কার্যকর সমাধান বের করতে হবে। আর শেষ ধাপ হলো দারিদ্র্য নির্মূল করার ভিত্তিতে দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করতে হবে।
এর আগে গত সপ্তাহে মিয়ানমার সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে তিনি নির্যাতনের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানান।
এদিকে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার গত মাসে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। আগামীতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী পরবর্তী পর্যায়ে আলোচনায় অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের ইচ্ছা শরণার্থীদের নতুন আদর্শ গ্রামে স্থানান্তর করা, যেখানে তাদের ঘরবাড়ি এখন রয়েছে সেখানে নেওয়া হবে না। যদিও বিভিন্ন সময় এ উদ্যোগের সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ।
শান্তি প্রতিষ্ঠা, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারকে নাগরিকত্ব ইস্যুরও সমাধান করতে হবে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেছেন, রোহিঙ্গারা কয়েক দশক ধরে রাষ্ট্রহীন অবস্থায় রয়েছে।
উল্লেখ্য, রাখাইনে সেনা অভিযান ও নিপীড়নের মুখে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই সেনা অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
কয়েকটি দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে। রাখাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই রাখাইনে ‘স্থিতিশীলতার জন্য’ মিয়ানমারকে চীন সমর্থন করে আসছে।
এদিকে, সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের স্বাগত জানিয়ে দেওয়া ভাষণে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি সরাসরি রোহিঙ্গাদের কথা উল্লেখ না করে দাবি করেছেন, ‘অবৈধ অভিবাসীরাই সন্ত্রাসবাদ ছড়াচ্ছে এবং সে কারণে বিশ্ব অস্থিতিশীলতা ও সংঘাতের মধ্যে রয়েছে।’
এই ভাষণে মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনোভাবই উঠে এসেছে। দেশটির বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষেরা রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে।
আরএম