শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ২৮ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাড়িতে বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল নাহিদ মানবতার জন্য আপনিও আসুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে: শায়খ আহমাদুল্লাহ ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার: বিএনপি মাদরাসাছাত্রদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কাজ করছে এনসিপি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর এখন সশস্ত্র ল’ড়াই ফরজ: মুফতি তাকি উসমানি ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান শায়খে চরমোনাই’র নড়াইলে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলায় আ. লীগের ৪৮ নেতাকর্মী কারাগারে বিনা খরচে আরও কর্মী নেবে জাপান, সমঝোতা স্মারক সই সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সেই বিতর্কিত ব্যক্তি আটক জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল, নাম নির্ধারণ

রোহিঙ্গা ইস্যুতে টেকনাফের দুই মাদরাসার ব্যাপারে অভিযোগ কতটা সত্য?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবরার আবদুল্লাহ : শাহ পরীর দ্বীপে অবস্থিত দুটি কওমি মাদরাসা ‘বাহরুল উলুম ও দারুশ শরিয়াহ’ কে সম্পৃক্ত করে গতকাল দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে ‘মানবতার নামে উদ্দেশ্য হাসিল দুই মাদরাসার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যাতে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিষয়ে নানা অভিযোগ তোলা হয়।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, মাদরাসা দুটি দেশি-বিদেশি অনুদান পাওয়ার জন্য নৌকা যোগে সীমানার ওপারে রোহিঙ্গাদের প্রলুব্ধ করে নিয়ে আসছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় দারুশ শরিয়াহ মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফিরোজ আলমকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদক নিজের দাবির পক্ষে কয়েকজনের জবানিও তুলে ধরেছেন তার প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনটি দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে আহত ও বিস্মিত করেছে। আওয়ার ইসলামের বিপুল সংখ্যক পাঠক বিষয়টি যাচাই করার অনুরোধ করার পর আমরা এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি।

এ বিষয়ে ওই রিপোর্টটিতে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ ও চতুরতার প্রমাণ পেয়েছেন আওয়ার ইসলাম প্রতিবেদক।

প্রতিবেদনে মাদরাসা বাহরুল উলুম (বড় মাদরাসা) এর অধ্যক্ষের নাম ‘মাওলানা মোহাম্মদ হোসেন’ উল্লেখ করা হলেও তার প্রকৃত নাম মাওলানা মাওলানা হুসাইন আহমদ

আওয়ার ইসলাম প্রতিবেদক তার বরাতে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বিস্মিত হন এবং বলেন, ‘আমার সঙ্গে কোনো সাংবাদিকের কথা হয় নি। এবং এমন কথা বলার প্রশ্নই আসে না।’

সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার নামে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ এবং তার সত্যতার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করেন।

মাওলানা হুসাইন আহমদ বলেন, ‘আমরা কখনো নৌকা দিয়ে লোক আনি নি। বরং কেউ আনতে চাইলে আমরা বকা দিয়েছি (নিরুৎসাহিত করেছি)।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে কয়েক দিন আমরা মাদরাসায় ডাল ভাতের আয়োজন করেছিলাম। পরবর্তী থেকে বাইরের লোকজন এসে তাদের খাবারের আয়োজন করছে। আমি গতকাল থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ও দিচ্ছি না।’

‘আমি এক পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে চাই নি। তারা (বিজিবি ও কোস্ট গার্ড) আমাদের বলে রাতে রেখে সকালে পাঠিয়ে দিবেন।’ বলেন মাওলানা হোসাইন আহমদ।

মাদরাসার অপর শিক্ষক হাফেজ বদর আহমদ বলেন, ‘বাহরুল উলুমকে সম্পৃক্ত করে যে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিজিবির পক্ষ থেকে আমাদের অনুমতি দেয়া হয়েছিলো। আমরা দুই তিন দিন আশ্রয় দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এরপর বিজিবি আমাদের আশ্রয় এবং কেউ তাদের খাবার দিতে চাইলে তার সুযোগ করে দিতে বলেন।’

নৌকা দিয়ে লোক আনার বিষয়টি কতোটা সত্য? উত্তরে তিনি বলেন, ‘নৌকা তো দূরের কথা আমরা বেড়িবাঁধের উপরও যাই না। যাবো কিভাবে সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধ আছে। রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করার দায়িত্ব বিজিবির।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যা করছি তাতে কোনো লুকোচুরি নেই। আমরা একা কিছুই করি না। আমরা শুধু মজলুম রোহিঙ্গাদের রাতে থাকতে দেই এবং সকালে উঠে তারা চলে যায়। প্রতিরাতে সেখানে কোস্ট গার্ড ও বিজিবি দায়িত্ব পালন করে। তাদের সহযোগিতায় আমরা কাজ করছি। যদি আমরা অর্থ আত্মাসাৎ করতাম তাহলে অবশ্যই তারা বাধা দিতো।’

কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য এবং সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শফিক মিয়ার বিবৃতিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যারা রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের এপারে নিয়ে আসার জন্য এ রকম মরিয়া হয়ে পড়ে তারা কি আসলে মানবিক সহায়তা নাকি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করে যাচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে।’

এ মন্তব্যের ব্যাপারে মো. শফিক মিয়ার মূল্যায়ন হলো, ‘আমার মনে হচ্ছে … পত্রিকা একটু বাড়িয়ে লিখেছে। আমি বলেছিলাম, মাদরাসাগুলোতে মানুষজন এসে খাওয়াচ্ছে। কেনো খাওয়াচ্ছে তা জানা দরকার।’

আওয়ার ইসলাম তার কাছে জানতে চায়, মাদরাসা দুটি কি আদৌ নৌকা দিয়ে লোক আনছে? তিনি বলেন, ‘মাদরাসাগুলো আনে না। তারা এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তবে বাইরের থেকে কিছু হুজুর এসে মাদরাসায় থাকছে।’

রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করে বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে মো. শফিক মিয়া আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধরা যে অত্যাচার করেছে, তাতে বলা ঠিক নয়; তবে আমরা স্থানীয়ভাবে সন্দেহ করছি পুরাতন রোহিঙ্গারা এবং আরসা লোকজন তাদের বাংলাদেশে আসতে উৎসাহিত করছে।’

মাদরাসা বাহরুল উলুমের বারান্দায় এরকম হাজারও রোহিঙ্গা একবেলা খেয়েছেন, আহতরা সেবা পেয়েছেন। 

মাদরাসা দারুশ শরিয়াহ-এর শিক্ষক মাওলানা শহিদুল ইসলাম আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘আমরা তাদের আনতে কখনো যাই নি। রোহিঙ্গারা নিজ গরজে আসছে। তাদের আশ্রয় ও খাবার দেয়ার সময় বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সাথে ছিলো। কোস্ট গার্ড সদস্যরা আমাদের মাদরাসায় এসে ত্রাণ বিতরণও করেছেন।’

তিনি জানান গত এক সপ্তাহ যাবৎ দারুশ শরিয়াহ মাদরাসায় কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে না।

মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফিরোজ আলমের আটক হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তার আটক হওয়ার সঙ্গে মাদরাসার কোনো সম্পর্ক নেই। তাকে আটক করা হয় তার বাড়ি টেকনাফ থেকে। তিনি বাড়িতে কয়েকজন রোহিঙ্গাকে জায়গা দিয়েছিলেন এজন্য তাকে আটক করা হয়েছে।’

তবে এ বিষয়ে বাহরুল উলুম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হুসাইন আহমদ বলেন ভিন্নকথা। তার বক্তব্য অনুযায়ী ‘মাওলানা ফিরোজ আলমের ভাই রোহিঙ্গাদের কাছ অর্থ আদায়ের জন্য বাড়িতে কয়েকজনকে আটকে রাখেন। তিনি ও তার ভাই একই বাড়িতে থাকেন। এ সুযোগে একদল মানুষ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকেও জড়িয়েছে। ফলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।’

রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকে টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপে কাজ করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতী দেলোয়ার হোসাইন সাকী। তিনিও পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করে জানান, ‘রোহিঙ্গাদের গ্রহণ ও রাত্রীযাপনের পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে কোস্টগার্ড। তারা ঠিক করে দেন কারা কোথায় অবস্থান করবে। নৌকাগুলোও তাদের নিয়ন্ত্রণে। সুতরাং রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করে নিয়ে আসার সুযোগ সাধারণ মানুষের নেই।’

মুফতি সাকী আরও বলেন, ‘কোস্টগার্ড ও বিজিবি সদস্যদের অনুরোধে মাদরাসা দুটি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। দেশি-বিদেশি অনুদান পাওয়ার জন্য নয়। কোস্টগার্ড মাদরাসা দুটিকে বলেছে, আপনাদের আশ্রয় দেয়ার সুযোগ আছে আপনারা আশ্রয় দেন। রোহিঙ্গারা এক সঙ্গে থাকলে তাদের নিরাপত্তা ও এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের জন্য সহজ হবে।’

টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক প্রচার সম্পাদক মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আরমান আওয়ার ইসলামকে বলেন, শাহপরীর দ্বীপে সরকারি যে ব্যবস্থাপনা তার মধ্য দিয়ে নিজস্ব নৌকায় রোহিঙ্গাদের আনার সুযোগ নেই। সুতরাং অভিযোগটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

দ্বিতীয়ত, আমরা বাহরুল উলুম মাদরাসায় অর্থ সহায়তা দিয়েছিলাম তারা সেটা রেখে রশিদ দিয়েছেন এবং খরচের খাত দেখিয়েছেন। সুতরাং আমার কাছে মনে হয় তাদের ব্যবস্থাপনা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হচ্ছে।

স্থানীয়দের ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ উল্লেখ করে মাওলানা আরমান বলেন, মাদরাসা ও আলেম ওলামাদের কারণে অনেকের অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে তারা আলেমদের কাজ নিয়ে ক্ষুব্ধ হতে পারে।

তিনি মাদরাসা বাহরুল উলুমের কাজের প্রশংসা করে বলেন, এ পর্যন্ত অগণিত শরনার্থীদের খাইয়েছে বাহরুল উলুম সেগুলোর হিসাব না করে উদ্দেশ্য খোঁজাটা আমাদের এক ধরনের নেতিবাচক মানসিকতা। যা পরিহার করা জরুরি।

তবে ফেসবুকে ওই নিউজটি প্রকাশের পর অনেক আলেম পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। অর্থ আয় ব্যয়ের হিসাবগুলো স্বচ্ছ করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও অভিযোগ অন্যরা তুলতে পারে।

প্রশ্নবাণে সুন্দরী প্রতিযোগিতা; সন্মান রক্ষায় নারীরাই জ্বলে উঠুক আগে

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেভাবে কাজ করছেন আলেমরা


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ