বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বাদ জুমা দেশব্যাপী রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদে হেফাজতের বিক্ষোভ সফল করুন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও মগদস্যু কর্তৃক রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা, বর্বরকায়দায় অমানবিক নির্যাতন এবং লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে বাস্তু-ভিটা থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের ডাকে দেশব্যাপী বাদ জুমা আজকের বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচীতে শামিল হওয়ার জন্য দলমত নির্বিশেষে সকল দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী।

গতকাল (১৪ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে তিনি এই আহবান জানান।

তিনি বলেন, বিক্ষোভ মিছিল, মানব বন্ধন, মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাওসহ নানা প্রতিবাদ কর্মসূচীর মাধ্যমে মিয়ানমারের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ব্যাপক গণমত তৈরির পাশাপশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ ও বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি মিয়ানমারের নৃশংসতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ, প্রতিরোধসহ সম্ভাব্য সকল উপায়ে শক্তিশালী অবস্থান নেয়, সেই বিষয়েও আমরা সরকারের প্রতি জোরালো আহবান জানাই।

বিবৃতিতে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও মগদস্যুরা বর্বরতার সকল সীমা অতিক্রম করে নিপীড়ন চালাচ্ছে। নিরীহ মুসলমানদেরকে যেরকম বর্বর কায়দায় কুপিয়ে ও আগুন ধরিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, মা-বোনদের গণহারে ধর্ষণ করে হত্যা করা হচ্ছে, অঙ্গহানী ঘটাচ্ছে, মুসলমানদের বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে, শিশুদেরকে কুপিয়ে ও আগুনে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হচ্ছে, তার রোমহর্ষক দৃশ্য সহ্য করার মতো নয়।

এমনকি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নৃশংসতাকেও বহুলাংশে মিয়ানমারের বর্বরতা হার মানাবে। তিনি বলেন, এমন নৃশংসতার বিরুদ্ধে ওআইসিভুক্ত মুসলিম দেশ সকলসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশসমূহের তৎপরতা হতাশাজনক। বিশেষ করে আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত ও চীন সরকারের মিয়ানমারের নৃশংস ভূমিকার পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়াটা শুধু দুঃখজনকই নয়, বরং গভীর উদ্বেগ তৈরি করে। বস্তুতঃ ভারত ও চীন মানবতার বিপরীতে নৃশংসতাকে বেছে নিয়েছে। এটা দেশ দু’টির জন্য কলংকময় ইতিহাস হয়ে থাকবে।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের আপতঃকালীন আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সরেজমিনে দেখে আসাসহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের স্বার্থে ইতিবাচক বক্তব্য এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে পদক্ষেপ শুরু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে বলেন, মিয়ানমারের পৈচাশিক আগ্রাসনে শুধু লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান নয়, বরং বাংলাদেশও প্রত্যক্ষভাবে বহুমুখী ক্ষতি ও হুমকির শিকার। আমরা চাই মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারও যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সম্ভাব্য সকল উপায় অবলম্বন করে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। পাশাপাশি ওআইসির সম্মেলন আহবান এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করুক। সরকার এমন কায্যকর পদক্ষেপ নিলে, হেফাজতে ইসলামের সর্বাত্মক সমর্থন থাকবে।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, আমরা চাই, রাষ্ট্রীয় নৃশংসতার প্রতিবাদ-প্রতিরোধের দায়িত্বটা সরকারই পালন করুক। দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্যই এমনটা জরুরী।

তিনি সতর্ক করে বলেন, মিয়ানমারের মানবতা বিরোধী নৃশংসতার বিরুদ্ধে যে হারে জনক্ষোভের দাবানল জ্বলে উঠছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সরকারের যে কোন নির্লিপ্ততা বা প্রয়োজনীয় প্রতিবাদি ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব ঘটলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। যেটা দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মোটেও সহায়ক হবে না। দেশবিরোধী আন্তর্জাতিক শত্রুরা চাচ্ছে সরকারের নির্লিপ্ততাকে সমর্থন দিয়ে জনবিক্ষোভকে উস্কে দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে। দেশ, জনগণ ও মানবতার স্বার্থে এটা সরকারকেই বুঝতে হবে। তিনি এ পর্যাতয়ে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, দেরীতে হলেও মিয়ানমারের নৃশংসতার বিরুদ্ধে বিশ্বের দেশে দেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় আমাদেরকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদের আওয়াজ আরো জোরালো করতে হবে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ শুরু হয়ে গেলে বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করে মিয়ানমার বিশ্বসমাজে কোনভাবেই টিকে থাকতে পারবে না। এভাবেই মিয়ানমারকে নৃশংসতা বন্ধে বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে অর্থনৈতিক অবরোধসহ সামরিক ব্যবস্থাগ্রহণের দিকটিও বাংলাদেশ সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি এবং ত্রাণ নিয়ে রাজনীতি না করার আহবান জানিয়ে বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবিক এই বিপর্যয় নিয়ে অমানবিক খেলা বন্ধ করুন। তিনি রোহিঙ্গা দুঃস্থদের জন্য সরকারী সহযোগিতা ও ত্রাণ বিতরণকে অত্যন্ত অপ্রতুল উল্লেখ করে বলেন, প্রয়োজনে সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য পয়োঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা, সুপেয় পানির জন্য নলকূপ স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় ক্যাম্প নির্মাণ ও খাদ্যসরবরাহে জাতিসংঘের কাছে ত্রাণ সহযোগিতা চাওয়াসহ মুসলিম বিশ্বের কাছেও সহযোগিতা চাইতে পারে।

বিবৃতিতে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী সর্বাত্মকভাবে হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত আজকের বিক্ষোভ মিছিল পালন শেষে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অবস্থিত মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও, ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ এবং ওআইসি বরাবর স্বারকলিপি প্রদানের কর্মসূচিও সফলভাবে পালন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, অসহায় মানবতার পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব ।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ