শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ২৮ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাড়িতে বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল নাহিদ মানবতার জন্য আপনিও আসুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে: শায়খ আহমাদুল্লাহ ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার: বিএনপি মাদরাসাছাত্রদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কাজ করছে এনসিপি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর এখন সশস্ত্র ল’ড়াই ফরজ: মুফতি তাকি উসমানি ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান শায়খে চরমোনাই’র নড়াইলে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলায় আ. লীগের ৪৮ নেতাকর্মী কারাগারে বিনা খরচে আরও কর্মী নেবে জাপান, সমঝোতা স্মারক সই সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সেই বিতর্কিত ব্যক্তি আটক জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল, নাম নির্ধারণ

সদকায়ে ফিতর: গরিবের ঈদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মাহফুজুর রহমান হোসাইনী

পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের জন্য বিশেষ কিছু আমল রেখেছেন। এর মধ্যে সদকায়ে ফিতর অন্যতম। এটা মুসলিম উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এর মাধ্যমে রোজার ত্রুটিবিচ্যুতি মার্জনা হয়। অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোযার যে ক্ষতি হয়ে থাকে তা পূরণ হয় এবং দরিদ্র মানুষ ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারে। এই সদকা ঈদের নামাজের আগেই আদায় করতে হয়।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে ঈদের সালাতের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বেই সদকায়ে ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেন।(বুখারি, হাদিস নং-১৫০৯)

অনেকেই ঈদের আগে তথা রমজানেই আদায় করে থাকেন। এটা আরো ভালো। ফলে এর দ্বারা গ্রহণকারী ঈদ উদযাপনে তা কাজে লাগাতে পারে। যাকাতের মতো এটিও দরিদ্র মানুষের উপর মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত একটি আমলি সহযোগিতা। সদকায়ে ফিতর হল গরীবের ঈদ। ঈদের দিনে দরিদ্রদের খাবারের জন্য শরিয়তপ্রদত্ত একটি ব্যবস্থাপত্র। যেন তারা অন্যের কাছে চাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। তাই সকলের কর্তব্য হল, আনন্দ চিত্তে এই ইবাদতটি আদায় করা। যাতে আল্লাহর দরিদ্র বান্দাদের খেদমত হয় এবং নিজের রোযার ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ হয়। সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি ইবাদত আদায়ের সৌভাগ্য অর্জিত হয়।

ঈদের দিন সকালবেলায় যিনি সাহেবে নিসাব থাকবেন, তাঁর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের দিনের ফজরের নামাজের আগে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তারও ফিতরা আদায় করা অপরিহার্য। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবারই ফিতরা দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, নারী, বড়, ছোট মুসলমানের উপর এক সা খেজুর কিংবা এক সা যব সদকায়ে ফিতর ফরয (ওয়াজিব) করেছেন। (বুখারি, হাদিস নং-১৫০৩)

ইসলামি শরীয়া মোতাবেক গম, খেজুর, কিশমিশ, পনির ও যব ইত্যাদি পণ্যের যেকোনো একটি দিয়ে ফিতরা দেওয়া যায়। সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে ঈদের দিন এক সা পরিমাণ খাদ্য দিয়ে সদকায়ে ফিতর আদায় করতাম। আবূ সাঈদ রাঃ বলেন, আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর" (বুখারি, হাদিস নং-১৫১০)।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সা পরিমাণ খেজুর বা যব দিয়ে সদকায়ে ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেন। আবদুল্লাহ রাঃ বলেন, অতঃপর লোকেরা যবের সমপরিমাণ হিসেবে দু’মুদ (অর্ধ সা) গম আদায় করতে থাকে। (বুখারি হাদিস নং-১৫০৭)

সদকায়ে ফিতর গম দিয়ে আদায় করলে অর্ধ সা তথা এক কেজি ৬২৮ গ্রাম দিতে হবে। আর বাকি চারটি পণ্য অর্থাৎ খেজুর, জব, পনির ও কিশমিশ দিয়ে আদায় করলে এক সা তথা তিন কেজি ২৫৬ গ্রাম দিতে হবে।

সরাসরি পণ্য না দিয়ে যে কোন এক পণ্যের পরিমাণ অনুযায়ী বাজারমূল্য আদায় করলেও সদকায়ে ফিতর আদায় হয়ে যাবে। সে হিসেবে এই বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন কতৃক নির্ধারিত বাজার মূল্য হল, গমের ক্ষেত্রে ৬৫ টাকা, জবের ক্ষেত্রে ৫৬০ টাকা, কিশমিশের ক্ষেত্রে ১২৫০ টাকা, খেজুরের ক্ষেত্রে ১৬৫০ ও পনিরের ক্ষেত্রে ১৯৮০ টাকা।

এই পণ্যগুলোর স্থানীয় খুচরা বাজারমূল্যের তারতম্য রয়েছে। সে অনুযায়ী স্থানীয় মূল্যে তথা আপনার এলাকার বাজার মূল্যে পরিশোধ করলেও ফিতরা আদায় হবে।

এখানে একটি লক্ষণীয় বিষয় হল, মূল্যের দিক থেকে এই পণ্যগুলোর মধ্যে তফাৎ আছে। কোনোটির দাম বেশি, কোনোটির কম। সর্বনিম্ন পণ্যকে মাপকাঠি ধরে কেউ যদি সদকায়ে ফিতর আদায় করে তাহলেও আদায় হায়ে যাবে। তবে উত্তম হল, নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি মূল্যের পণ্যকে মাপকাঠি ধরে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। এ পর্যন্ত হাদিসের এমন কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি যে সাহাবারা সর্বনিম্ন দামের পণ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করেছেন। বরং তাঁদের সবার আগ্রহ ছিল সর্বাধিক দামি পণ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা।

[ঈদের দিনের ১৩ টি সুন্নত]

আর আমরা বর্তমানে সবাই সর্বনিম্ন দামের পণ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করছি। সম্পদশালী ও মধ্যবিত্ত নির্বিশেষে আধা সা গম বা তার সমপরিমাণ মূল্য দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করা সমীচীন হচ্ছে কি? বরং আমাদের উচিত হল, সামর্থ্য অনুযায়ী এই পাঁচ পণ্যের মধ্য থেকে যত বেশি দামি সম্ভব তা দিয়ে সদকায়ে ফিতর আদায় করা।

অসহায় গরিব, ফকির, মিসকিন তথা যাকাত পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিরাই ফিতরার হকদার। নির্ধারিত পণ্যসামগ্রী বা তার মূল্যে টাকা দেয়া ছাড়াও উক্ত টাকা দিয়ে অন্য কোনো বস্তু কিনে দিলেও আদায় হয়ে যাবে। সমস্ত ফিতরা একজনকে দিলেও হবে, আবার দশ/বিশ টাকা করে একাধিক ব্যক্তিকে দিলেও কোন সমস্যা নেই। গ্রহীতাকে ফিতরা দেয়ার সময় এটা ফিতরার পণ্য, টাকা বা বস্তু, তা উল্লেখ করা জরুরি নয়।

লেখক: উস্তাদুল ইফতা, জামিয়া শায়েখ আবদুল মোমিন মোমেনশাহী।
সহ-সম্পাদক, মাসিক আল ইত্তেফাক


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ