পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মীর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তার বাবাকে দেওয়া সম্মাননা স্মারক ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা তার বাবা ওয়ারিস মীরের স্মৃতিকে অসম্মান করেছেন। এই পুরস্কার তাকে দেওয়া হয়নি। এটি তার বাবার মানবতার পক্ষে সোচ্চার হওয়ার সম্মান। এখন হামিদ মীর এই সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন, কোনো রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে।
তিনি নিজ দেশের কোনো গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করতেই প্রয়াত বাবার নীতি ও চেতনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। হামিদ মীরের এই সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণায় এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, হামিদ মীর আইএসআইকে খুশি করতে এবং কোনো বড় স্বার্থ আদায়ে ওয়ারিস মীরের এই অনন্য সম্মাননাকে অপমান করছেন। তারা বলেন, হামিদ মীর এই পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণ করতে যাচ্ছেন, তিনি বাবার সম্মাননা নিজের ক্যারিয়ার গড়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করবেন। তার উচ্চাবিলাস প্রকাশ পেয়েছে। হামিদ মীরের এই প্রতিক্রিয়া আরও একবার প্রমাণ করেছে, পাকিস্তান দেশটি এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি। হামিদ মীর নিজেও যে একজন সাম্প্রদায়িক এবং সুযোগ সন্ধানী এটা তার পুরস্কার নিতে আসার মধ্য দিয়েই বোঝা গেল।
[caption id="" align="aligncenter" width="500"] ২০১৩ সালে প্রধানমনত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা নেয়ার সময় হামিদ মীর[/caption]
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, হামিদ মীর তার বাবাকে অপমান করেছেন এবং তার বাবার বিশ্বাসের প্রতি ঘাতকতা করেছেন। তিনি বলেন, সম্মাননা ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে হামিদ যে যুক্তি তুলে ধরেছেন তা একেবারেই অবান্তর। ওয়ারিস মীর যখন বাংলাদেশের পক্ষে কলম ধরেছেন তখন পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ চলে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। হামিদ মীর নিজের বাবার এই সাহসী পরিচয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও বেশ খ্যাতি পেয়েছেন। পাকিস্তানের অন্য সাংবাদিকদের তুলনায় আন্তর্জাতিকভাবেও তিনি বাবার আদর্শের জন্য এগিয়ে যান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে তার প্রতিবেদন যে শুধুই মিথ্যাচার এটা প্রমাণ হয়েছে।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, সে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। পাকিস্তান সরকারকে খুশি করতে এবং কোনো বড় স্বার্থ আদায়ের জন্য হামিদ মীর এই জঘন্য ঘোষণা দিয়েছে। এই পুরস্কার তিনি নিজে এসে নিয়েছেন। তখনো পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক একই রকম ছিলো। সম্পর্ক ভালো করার জন্য কয়েকজন মুরুব্বিকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি যে অভিযোগ করলেন, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। আরও ১৩ জন পাকিস্তানি নাগরিককে বিদেশি বন্ধু হিসেবে সরকার সম্মাননা দিয়েছে। হামিদ মীরের এই ঘটনা তাদেরকেও বিব্রত করবে। হয়তো তাদেরও রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলার চেষ্টা করবে। সে ছেলে হয়ে তার বাবাকে খাটো করেছে।
মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, হামিদ মীর যখন এই সম্মাননা নিতে এসেছিলেন- তখন তিনি নিজেই বলেছেন, পাকিস্তানেও একদিন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে। তিনি বলেন, এই ঘোষণা দিয়ে হামিদ মীর নিজেই তার অবস্থান স্পষ্ট করলেন। কারণ তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়নি। তার এই পুরস্কার নিতে আসা উচিত হয়নি। একজন মানবতাবাদী সাংবাদিকের সন্তান হিসেবে আমরাও তার প্রতি ইতিবাচক ছিলাম। কিন্তু তিনি পাকিস্তানে বসে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এবং দেশের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা শত্রুদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে তাদের হয়ে কাজ করছে হামিদ মীর। এটা ষড়যন্ত্রের অংশ। কিন্তু তিনি বাবার ইমেজ ক্ষুণœ করে এই কাজ করতে পারেন না।
একাত্তরে বাংলাদেশে দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন পাকিস্তানের সাংবাদিক এবং অধ্যাপক ওয়ারিস মীর। স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানো যে ৬৯ জন বিদেশি বন্ধুকে ২০১৩ সালের মার্চ মাসে সম্মাননা দেওয়া হয়, তার মধ্যে ওয়ারিস মীরসহ ১৩ জন ছিলেন পাকিস্তানি। প্রয়াত ওয়ারিস মীরের ছেলে পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নিজে এসে সেই পুরস্কার গ্রহণ করেন।
[মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা ফিরিয়ে দেবেন হামিদ মীর!]
এসএস/