আওয়ার ইসলাম: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আমীর আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী বলেছেন, পৃথিবীতে শান্তি, নিরাপত্তা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা, মানুষের জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি অর্জন এবং সকল প্রকার অশান্তি, অরাজকতা ও দুর্ভোগ থেকে আমরা সকলেই মুক্তির জন্য ও দুনিয়া-আখিরাতের কামিয়াবীর জন্য কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন গড়ার কোনো বিকল্প নেই।
রাসুলের আদর্শে আমাদের জীবনকে সাজাতে হবে। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে চট্টগ্রামে লালদীঘি মাঠে আয়োজিত দু’দিন-ব্যাপী শা’নে রেসালত সম্মেলনের সমাপনী দিবসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।
আহমদ শফী বলেন, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ। এই ফরজ পাঁচ স্তম্ভ যথাযথভাবে না মানলে মুসলমানদের ঈমান-আকিদা দুর্বল হয়ে পড়ে। ঈমান-আকিদা রক্ষার প্রচেষ্টা ও এর চর্চা অব্যাহত না থাকলে জনগণকে নানামুখী খোদায়ী আজাব ও গজবে পতিত হতে হয়। আর যারা নাস্তিকতার নামে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ এবং ইসলামী মূল্যবোধ ও কোরআন-সুন্নাহের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কথা বলে, তারাই হচ্ছে ইসলামবিদ্বেষী। এরাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা.-এর নামে জঘন্য ভাষায় কুৎসা ও মিথ্যাচার রটনা করতে দ্বিধা করে না।
মূলত এইসব হীন ও স্থুল নাস্তিকতা চর্চাকারী ইসলামবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধেই আমরা আন্দোলন ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেছি। আগামীতেও যে কোন ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডে বিরুদ্ধে আ্ন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি সারাদেশের সর্বশ্রেণীর মানুষের উদ্দেশে বলেন আপনারা আজ থেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল প্রকারের পাপ, অনাচার, দুর্নীত, চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা, অন্যের অধিকার হরণ ও জুলুম করবো না, শিরক, বিদআত ও ধর্মবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকবো। আল্লাহর হুকুম ও রাসুলের তরিকা মেনে চললে গোটা পৃথিবীর মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। সমাজে শান্তির সুবাতাস বইবে ইনশাআল্লাহ।
তিন অধিবেশনে বিভক্ত শানে রেসালত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে-মাওলানা সালাহুদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলাম, মাওলানা শিহাবুদ্দিন ইউনুছিয়া ।
দ্বিতীয় দিন তথা সমাপনী দিনে সম্মেলনে বয়ান করেন, আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী, মাওলানা হাফেজ নুরুল ইসলাম, মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা ড. আ.ফ.ম খালিদ হোসাইন, মাওলানা লোকমান হাকীম, মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন লালবাগ, মাওলানা রহিমুল্লাহ ফেনী, মুফতি মাহমুদুল হাসান গুনবী, মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা ইয়াছিন হাবিব, মাওলানা ইসহাক মেহরিয়া, মাওলানা মুজাম্মেল হক। সম্মেলন পরিচালনা করেন মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, আনম আহমদুল্লাহ, হাফেজ ফায়সাল।
আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, কওমী মাদ্রাসা নিয়ে দেশে ষড়যন্ত্র চলছে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য একটি চিহ্নিত ইসলামবিদ্বেষী চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। দেশের যুবসমাজকে ধর্মহীন করে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামবিরোধী হিসেবে গড়ে তোলার চক্রান্ত চলছে। তাদের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
এইসব ইসলামবিরোধী ও দেশবিরোধী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় দেশবাসীকে সজাগ হয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ঈমান-আকিদা রক্ষায় গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হেফাজতে ইসলাম বদ্ধপরিকর।
আহমদিয়া মুসলিম জামাআত নামধারী বিশ্বনবীর খতম নবুওয়ত অস্বীকারকারী কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আন্তর্জতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা কাদিয়ানীদের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তার বিরুদ্ধে নই।
অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মতো তারাও সংখ্যালঘু জনগণ হিসেবে এদেশে বসবাস করবে কিন্তু ইসলামের লেবেল ব্যবহার করে সর্বশেষ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহকে শেষ নবী স্বীকার না করে মুসলমানদের ঈমান হরনের কোনো অধিকার তাদের নেই।
সরকার যদি তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করে তাহলে মানুষ তাদের মুসলমান মনে করে বিভ্রান্ত হবে না। এ বাস্তবতা মেনে নিয়ে পৃথিবীর বহু মুসলিম দেশে কাদিয়ানীদেরকে সরকারিভাবে অমুসলমি ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশেও করতে হবে।
আরআর