শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ২৮ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাড়িতে বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল নাহিদ মানবতার জন্য আপনিও আসুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে: শায়খ আহমাদুল্লাহ ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার: বিএনপি মাদরাসাছাত্রদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কাজ করছে এনসিপি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর এখন সশস্ত্র ল’ড়াই ফরজ: মুফতি তাকি উসমানি ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান শায়খে চরমোনাই’র নড়াইলে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলায় আ. লীগের ৪৮ নেতাকর্মী কারাগারে বিনা খরচে আরও কর্মী নেবে জাপান, সমঝোতা স্মারক সই সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সেই বিতর্কিত ব্যক্তি আটক জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল, নাম নির্ধারণ

হিজড়াদের নামাজ; ইসলাম কী বলে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী আব্দুল্লাহ বিন রফিক

namaj_hijraনারী নয় আবার পুরুষও নয়- এমন এক বিশেষ শ্রেণিই সমাজে হিজড়া নামে পরিচিত। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু এক্স-এক্স প্যাটার্নে কন্যা আর এক্স-ওয়াই প্যাটার্নে পুত্র শিশু জন্ম গ্রহণ করে বলে প্রমাণিত। কিন্তু অনেক সময় জরায়ুতে ভ্রুণের বিকাশ হওয়ার সময় মায়েদের বিভিন্ন প্রকার শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। আর তখন একটু ব্যতিক্রমী এক্স-এক্স-ওয়াই(xxy),  অথবা  এক্স-ওয়াই-ওয়াই(xyy) এর প্যাটার্নে ছেলে বা মেয়ে হয়ে থাকে। এরপর জেনেটিক পরির্বতনের ফলে ক্রমান্বয়ে এরাই একসময় হিজড়ায় পরিণত হয়।

আর দশটা নারী ও পুরুষের মতো আমাদের সমাজে হিজড়া সম্প্রদায় খুব একটা স্বাভাবিক জীবন ধারণ করতে পারে না। এটা অবশ্য আমাদের সমাজের স্থূল দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তব ও নিদারুণ এক উদাহরণও বটে। ইসলাম নারী ও পুরুষের অধিকার যেমন সুনিশ্চিত করেছে তেমনি হিজড়াদেরও অধিকার থেকে বঞ্চিত করেনি। তাদের জন্য মহান আল্লাহ মানবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ বিধান দিয়েছেন। তারা মহান রবের ইবাদত-আরাধনা ও বন্দনা করবে। আল্লাহর কাছে নিজকে সমর্পিত করবে। তারাও অন্যদের মতো রীতিমত নামাজ, রোজা, জাকাত ইত্যাদি ইবাদাত পালন করবে। অন্যরাও যেমন পূণ্য লাভ করে তারাও সেভাবে লাভ করবে। তারাও কল্যাণে-অকল্যাণে সমান অংশীদার।

পড়ুন: পাকিস্তানে হিজড়াদের জন্য প্রথম মসজিদ

ইবাদত ও আরাধনার ক্ষেত্রে এখন প্রশ্ন উঠছে, ইবাদত-আরাধনা করার জন্য তারা কী মসজিদে যেতে পারবে? নাকি ঘরে বসেই নামাজ আদায় করা জরুরি? সম্প্রতি পাকিস্তানে হিজড়া সংগঠনের উদ্যোগে একটি মসজিদ নির্মাণের খবর বিষয়টিকে আরো জরুরি করে তুলেছে।

বিষয়টি সুরাহার আগে কিছু বিষয় আমাদের জানা দরকার।

প্রথম কথা হলো, হিজড়াদের ওপর জামাতে নামাজ আদায় করা ওয়াজিব নয়। তাই তারা ঘরেই নামাজ আদায় করবে। মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আশ-শরহুল মুমতি /১৪০

তবে মসজিদে গিয়ে যদি তারা নামাজ আদায় করে ফেলে তাদের নামাজ আদায় হয়ে যাবে। মওসুআতুল ফিকহ ২৫/২০

যেসব হিজড়ার মধ্যে নারী বা পুরুষের আলামত সুস্পষ্ট, যে বুঝতে পারে সে নারী নাকি পুরুষ, এমন শ্রেণির হিজড়া নারী হলে নারীদের বিধান এবং পুরুষ হলে পুরুষের বিধান প্রযোজ্য হবে।

আর যাদের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায় না তারা দু’ধরনের।

এক. নারী-পুরুষ উভয় আলামত বিদ্যমান। তবে কোনোটাকে প্রাধান্য দেওয়া যায় না।

দুই. আরেক শ্রেণি যাদের কোনো আলামত নেই।

এ ক্ষেত্রে মূলণীতি হলো, তাদের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে। এমন কোনো বিধান আরোপ করা যাবে না যার ভিত্তি রচিত হয় সন্দেহের ওপর।

এই মূলনীতিগুলো সামনে রেখে এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক।

পৃথিবীতে সচরাচর চার ধরনের হিজড়া দেখা যায়।

ক. পুরুষ (তবে নারীর বেশে চলে) তাদের আকুয়া বলা হয়। এরা মেয়েদের বিয়ে করতে পারবে।

খ. নারী (বেশভূষায়ও তাই, তবে দাড়ি-মোঁচ আছে) ইসলামের পরিভাষায় এই শ্রেণিকে জেনানা বলা হয়। তারা চাইলে পুরুষের কাছে বিয়ে বসতে পারে।

গ. লিঙ্গহীন (বেশে যাই হোক)। শরিয়তের দৃষ্টিতে তাদের ‘খুনসায়ে মুশকিলা’ বলা হয়। তবে এই শ্রেণির হিজড়া আসলে কারা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন বিজ্ঞ আদালত ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ।

ঘ. কৃত্তিমভাবে যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে বানানো হিজড়া। এদের বলা হয় খোঁজা। যৌন অক্ষমতার ফলে তারা বিয়ে করতে পারে না বা বসতেও পারে না।

হিজড়া কারা কিংবা কীভাবে নির্ধারিত হবে তার একটা তালিকা দেওয়া আছে হাদিসে।  হজরত আলি রা. রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে প্রসূত বাচ্চা পুরুষ-নারী নির্ধারণ করতে না পারলে তার বিধান কি-তা জানতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সা. জবাব দিলেন, ‘সে মিরাস পাবে যেভাবে প্রস্রাব করে।’

সুনানে বায়হাকি কুবরা, হাদিস ১২৯৪;  কানজুল উম্মাল, হাদিস ৩০৪০৩;  মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, হাদিস ১৯২০৪

আরেকটি কথা যখন ফিকহের সাধারণ গ্রন্থাবলীতে খুনসা তথা হিজড়া শব্দ প্রয়োগ করা হয় তখন বুঝতে হবে এর দ্বারা খুনসায়ে মুশকিলকেই বোঝানো হচ্ছে।

সাধারণভাবে হিজড়ারা ঘরে নামাজ পড়বে। যদি মসজিদে পড়তেই হয় তাহলে পুরুষ ও শিশুদের পেছন কাতার করে দাঁড়াবে। সামনের কাতারে দাঁড়াবে না।

মাওসুআতুল ফিকহ ২০/২৩

হিজড়া ইমাম হতে পারবে না। এমনকি হিজড়াদের জামাতেও তারা ইমামতি করতে পারবে না। ইমাম হবেন পুরুষ। মওসুআতুল ফিকহ, ৬/২০৪

সর্বোপরি কথা হলো, নারীদের মতো হিজরাদের জন্যও ঘরে নামাজ পড়া উত্তম। মসজিদে যেয়ে নামাজ আদায় করা তাদের ওপর ওয়াজিব নয়।

আর এর দ্বারা বুঝতে পারি হিজড়াদের জন্য আলাদা মসজিদ করার কোনো প্রয়োজন নেই বা শরিয়তে এর ভিত্তি নেই। সুতরাং এর থেকে বেঁচে থাকাই ভালো।

আরআর


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ