আওয়ার ইসলাম: টানা ছয় বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্দে বিধ্বস্ত সিরিয়া। এখানে কে কোথায় কার পক্ষে যুদ্ধ করছে বোঝা মুশকিল। গোটা বিশ্বই এই সিরিয়াকে ফুটবল খেলছে। সবার ভিন্ন ভিন্ন সার্থ। যার ফলে সিরিয়ার প্রতি ইঞ্চি মাটিতে পড়েছে বোমা। প্রতিটি ইটেই লেগেছে আগুন।
এ অবস্থায় দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভরভ সমঝোতায় পৌঁছান।
বৈঠক শেষে জন কেরি বলেন, ‘আজ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করছে, যা সিরিয়ায় সহিংসতা কমাবে, দুর্ভোগ কমাবে এবং আলোচনার মাধ্যমে দেশটিতে কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়, পালাবদল হয় তার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
বৈঠকের আগে ধারণা করা হয়েছিল চুক্তি হবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অন্তত আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত। পরে ওয়াশিংটন থেকে কেরি অনুমোদন পাওয়ার পাঁচ ঘণ্টা পর জানানো হয় উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে।
বৈঠকের পর দুই পক্ষের সংবাদ সম্মেলনের জন্য অপেক্ষার মধ্যে লাভরভ হঠাৎ সাংবাদিকদের কাছে চলে এসে বলেন, তিনি ধৈর্য ধরার চেষ্টা করছেন এবং তিনি তখনো জন কেরির কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাননি। এর মধ্যে ভিডিও যোগাযোগের মাধ্যমে কেরি ওয়াশিংটন থেকে অনুমোদন নিচ্ছিলেন।
লাভরভ বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যাচাই করা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমি দেরির জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আমি আশা করি, ওয়াশিংটন ঘুমে যাওয়ার আগে আমরা কিছু সংবাদ পেতে পারি।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রে আনুভূমিক অনুমোদন কখনো কখনো কঠিন।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সামনে এসে বলেন, ‘আজকের আলোচিত প্রস্তাবগুলো নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি যুক্তরাষ্ট্রের আন্তসংস্থার সঙ্গে কথা বলছেন।’
গত কয়েক মাস ধরে কেরি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করছেন সিরিয়া ইস্যুতে।
কেরি ও লাভরভ যে চুক্তিতে পৌঁছালেন, তার ফলে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিরোধী পক্ষ এবং রাশিয়া সমর্থিত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনী ও ইরানি মিত্রশক্তির মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ হবে। এখন বিশেষ করে আলেপ্পোর অবরুদ্ধ শহরের পাশে মানবিক ত্রাণ সহায়তা সরবরাহ করা সহজ হবে।
এই অস্ত্রবিরতি যদি চলে তাহলে সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের ওপর রাশিয়ার সঙ্গে সমন্বিতভাবে বিমান হামলা চালানোর ব্যাপার রাজি যুক্তরাষ্ট্র।
অবশ্য এখনো স্পষ্ট নয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ বিষয়ে জেনেছেন কিনা। লাভরভ সাংবাদিকদের সামনে আসার ঘণ্টা খানেক আগে তিনি হোয়াইট হাউস ছেড়ে জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজে গেছেন গলফ খেলতে।
এর আগে গত ২৭ আগস্ট জেনেভাতেই অনুষ্ঠিত বৈঠকে কেরি ও লাভরভ সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হন। গত সপ্তাহে চীনে জি-২০ বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। এ ছাড়া বারাক ওবামা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকেও ফল আসেনি।
যেখানে এত মন এত দ্বিধা এত দ্বন্দ্ব সেখানে অস্ত্রবিরতিতে আদৌ শান্তি ফিরে আসবে কিনা সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
আরআর