আওয়ার ইসলাম: আজ ১২ ভাদ্র, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪০ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৩৯৩ বঙ্গাব্দের এইদিনে তিনি শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪০ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে কবির রূহের মাগফেরাত কামনায় কোরানখানি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সকাল ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত হয়ে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে উপাচার্যের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে গিয়ে পুষ্পার্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পরে সেখানেই উপাচার্যের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
নজরুলের সৃষ্টিকর্ম প্রসঙ্গে নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নজরুল ইতিহাস ও সময়সচেতন মানুষ ছিলেন, যার প্রভাব তার লেখায় স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তার সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেছেন। সেই অসম্ভব সময়ে তিনি ধর্মান্ধ মুসলমানদের পুনর্জাগরণের ডাক দিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল একজন বলিষ্ঠ নেতার মতোই।’
জাতীয় কবি ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। তার বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন।
বাংলা সাহিত্যে ‘অগ্নিবীণা’ হাতে তার প্রবেশ, ‘ধূমকেতু’র মতো তার প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে। বাংলা সাহিত্যে ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক, অভিনেতা, ধর্মজ্ঞ, দার্শনিক, সৈনিক ও বিপ্লবী।
দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া নজরুলের প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স’ানীয় এক মসজিদে মুয়াযযিন হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কৈশোরে নাট্যদলের সাথে কাজ করতে গিয়ে তিনি কবিতা, নাটক ও সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন ‘বিদ্রোহী’ এবং ‘ভাঙার গান’র মতো কবিতা; ‘ধূমকেতু’র মতো সাময়িকী। জেলে বন্দি হবার পর লেখেন ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’, এসব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধর্মীয় বৈষম্য ও লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। বাংলা কাব্যে ইসলামী সঙ্গীত তথা গজলের জন্ম দেন তিনিই। এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সঙ্গীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় তিন হাজার গান রচনা করেন, অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন, যেগুলো এখন ‘নজরুল সঙ্গীত’ নামে পরিচিত।
মধ্যবয়সে কবি পিক্স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একপর্যায়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন।
প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। উনিশশ’একাত্তর সালে তার গান ও কবিতা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসেরও ব্যবস’া করেন। ধানমণ্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন তিনি। ১৯৭৫ সালের জাতির জনক সপরিবারে শহিদ হওয়ার খ্রিস্টাব্দের হিসেবে পরের বছরের শোকাবহ আগস্ট মাসেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন জাতীয় কবি। কবির অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। এখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আমাদের জাতীয় কবি।
এসএস