আওয়ার ইসলাম : ওয়েবসাইটে কিংবা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মানহানি ও ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেওয়া হলে দুই মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয়দণ্ডের বিধান রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৬’র খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে আইনটি আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইনমন্ত্রীকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘এ ধরণের অপরাধের জন্য সর্বনিম্ন দুই মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে, যা মিথ্যা, অশ্লীল এবং যা মানুষের মনকে বিকৃত ও দূষিত করে, মর্যাদাহানি ঘটায় বা সামাজিকভাব হেয় প্রতিপন্ন করে; অথবা কেউ যদি স্বেচ্ছায় কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার উদ্দেশে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে, যা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পাঠ করলে বা দেখলে বা শুনলে তা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে, তাহলে তিনি দুই মাস থেকে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন অথবা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কেউ অপপ্রচার চালালে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন ও সর্বনিম্ন তিন বছর কারাদণ্ড, একইসঙ্গে এক কোটি টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রেখেও মন্ত্রীসভায় আইন পাশ করা হয়।
মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, ‘নতুন এ আইনে দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির জনকের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা (অপপ্রচার) সাইবার ক্রাইম হিসেবে গণ্য হবে।’ শফিউল আলম বলেন, ‘দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আদালত কর্তৃক মীমাংসিত মুক্তিযুদ্ধের বিষয়াবলি বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রপাগাণ্ডা, প্রচারণা বা তাতে মদদ দেয়া কিংবা কেউ অপ্রপচার চালালে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন ও সর্বনিম্ন তিন বছর কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।’ সচিব জানান, ‘কোনো ব্যক্তি অতিগুরুত্বপূর্ণ তথ্য কাঠামোতে হামলা করলে কিংবা হ্যাক করলে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।’
গোপনীয়তা লংঘন ও আইন শৃঙ্খলার অবনতির জন্য আইনটিতে পৃথক শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, গোপনীয়তা লংঘনের জন্য শাস্তি হিসেবে কোনো ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে জ্ঞাতসারে অন্য কারো অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত ছবি তুলে প্রকাশ করলে কিংবা প্রেরণ করলে দুই বছর কারাদণ্ড দুই লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তাছাড়া আইন শৃঙ্খলার অবনতির জন্য ৭ বছর জেল ও ৭ লাখ টাকা জরিমানা এবং উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।’ ‘নতুন এ আইনে পর্ণোগ্রাফীর জন্য আলাদা শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ সংক্রান্ত অপরাধে দুই বছর থেকে ১০ বছর কারাদণ্ড ১০ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন,’ বলেন সচিব। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নারী ও পুরুষের গোপনাঙ্গের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এই সংজ্ঞা অনুযায়ী গোপনাঙ্গের কতটুকু অংশের ছবি ও ভিডিও গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে তা-ও নির্ধারণ করা হয়েছে। শিশু পর্নোগ্রাফি রোধে কঠোর বিধানের কথাও বলা হয়েছে খসড়া এই আইনে।
প্রস্তাবিত আইনের ১৭ নম্বর ধারার ৪ (গ) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘গোপনীয় অঙ্গ অর্থ নগ্ন বা অন্তর্বাস পরিহিত যৌনাঙ্গ, যৌনাঙ্গের আশপাশ, নিতম্ব বা মহিলার স্তন।’ সাইবার সন্ত্রাসরোধে ১৫ ধারার ৭টি উপধারা রয়েছে বলেও জানান সচিব। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সন্ত্রাসীর জন্য সাজার বিধান রাখা হয়েছে ২ বছর থেকে ১৪ বছর জেল, এককোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ড। বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও বাংলাদেশের জন্য হুমকি ও ক্ষতিকর কিছু, অন্যকোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে কিংবা সম্পদ নষ্ট করে এমন কিছু, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহায়তা, প্ররোচনা ও এমন সংশ্লিষ্ট অপরাধ সাইবার সন্ত্রাস হিসেবে গণ্য হবে এবং উপরোক্ত শাস্তির আওতায় পড়বে।’
সচিব বলেন, ‘আইনের ১১ ধারায় বলা হয়েছে কম্পউটারে কিংবা মোবাইল ফোন সংক্রান্ত প্রতারণা ও হুমকি দেওয়ার জন্য নির্ধারিত শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ ধরণের অপরাধের জন্য একবছর থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ড। তাছাড়া কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ডিভাইস সংক্রান্ত ডিজিটাল জালিয়াতির অপরাধেও একই ধরণের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।’ আইনের ১২ ধারায় প্রতারণা ও শাস্তির বিধান নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রতারণার উদ্দেশ্যে কেউ অন্যের পরিচয় ধারণ করলে কিংবা অন্যের তথ্য নিজের বলে চালালে এই অপরাধের জন্য এক থেকে ৫ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।’ ‘নতুন এ আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রধান হবেন সংস্থাটির মহাপরিচালক। এই এজেন্সি ডিজিটাল সন্ত্রাসরোধে তাৎক্ষণিক যে কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ট্রান্সমিশন বন্ধ করে দিতে পারবে এবং নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে। নির্দেশনা না মানলে জরিমানাও করতে পারবে’, বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তথ্য প্রযুক্তি আইন এখানে আনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন অপর্যাপ্ত, এটি বিস্তারিত আইন। এই আইন পাস হলে আইসিটি আইনের ৫৪, ৫৫ ও ৫৬ ধারা ওই আইন থেকে বাদ পড়বে। তবে আইসিটি আইনে ইতোমধ্যে দায়ের হওয়া মামলাগুলো ওই আইন অনুযায়ী চলবে।’
ওএস