ওয়ালিউল্লাহ সিরাজ; আওয়ার ইসলাম
২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে কওমি সনদের স্বীকৃতির জানানো হয়েছিলো। সে সময়ের চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা আসলেও বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ আর নেয়নি।
এর পর মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে ২০০৮ সালে। তারা কওমি সনদের স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়। আলেম ওলামার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর ২০১২ সালে একটি কমিশনও গঠন করে দেয় আওয়ামী সরকার। কিন্তু বিভিন্ন বাঁধার মুখে পড়ে স্বীকৃতির প্রক্রিয়াটি বারবার বিলম্বিত হতে থাকে।
গত ১১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদরাাসার সনদের স্বীকৃতির আশ্বাস দিলে নতুন করে আলোচনায় আসে বিষয়টি। কওমি অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। আমরা খোঁজ নিয়েছি বিষয়টি নিয়ে আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন।
বিষয়টি নিয়ে আলিয়া মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের মতামত প্রকাশ কারেন।
খাইরুল ইসলাম ঢাকা আলিয়ার ফাজিলের শিক্ষার্থী
কওমি মাদরাসায় অনেক মেধাবী ছাত্র আছে। এমনকি আমার কয়েকজন বন্ধুও আছে যারা এক সময় কওমি মাদরাসায় লেখাপড়া করেছে। তাদের এই মেধার কোন প্রকার মূল্যায়ন হয় না। কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের আমারদের সমাজসহ রাষ্ট্রীয় পর্যয়ের লোক সকল বিষয়ে দূর্বল ভেবে থাকে। এটা একটা দুঃখের বিষয়। আগেও কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এবার প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকে যেহেতু কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির কথা বলেছেন, তিনি এটা দিতে চান তাই বলেছেন। যারা কওমি মাদরাসার উচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এই স্বীকৃতি নেয়াই হবে সময় উপযোগী পদক্ষেপ।
কাউসার আহমাদ ফাজিল, তালিমুল মিল্লাত মাদরাসার (টুঙ্গি শাখা)
একটি দেশের নাগরিক হিসাবে সবারই ভিন্ন ভিন্ন চাওয়া থাকে। আমি এই দেশের একজন নাগরিক, কেউ যদি এই কথা বলে আমরা কিন্তু সাথে সাথে তা বিশ্বাস করি না বরং আমরা তার থেকে এনআইডি কার্ড চাই। এই দেশে থাকার জন্য এই কার্ড কিন্তু আমরা সবাই নিচ্ছি। তো একজন কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী যখন বলবে ‘আমি এই দেশের একজন শিক্ষিত নাগরিক’ তখন সে নগরিকের কার্ড তো দেখাতে পারবে কিন্তু ‘শিক্ষিত’ এর কার্ড কিন্তু সে দেখাতে পারবে না। এই দুইটা কার্ডই তো সরকার দিচ্ছে। এই দেশের নাগরিক এটা প্রমাণ করা যেমন সবার জন্য প্রয়োজন ঠিক শিক্ষিত এটা প্রমাণ করারও প্রয়োজন রয়েছে।
ইমরান হাসান কামিল, তেজগাঁও ইসলামী মিশন আলিয়া মাদরাসার
আমরা সাধারণত দুই কারণে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এক আল্লাহ তথা বিশ্ব জগতকে জানার জন্য আর দ্বিতীয় হচ্ছে এই শিক্ষার মাধ্যমে অর্থ উপাজর্ন করে ভালো ভাবে জীবন-যাপন করার জন্য। কিন্তু আমাদের কওমি মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থায় যারা শিক্ষা গ্রহণ করে তার শুধুই ইলম অর্জন করে এবং নিজেদের মত করে কিছু দ্বীনি খেদমত করে থাকে। এর দ্বারা না তারা ভালোভাবে চলতে পারে আর না কোন কিছু করতে পারে। একজন একজন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীর ও আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় যে মূল্যায়ন আছে একজন কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীর সে মূল্যায়ন নেই। এর মানে যে তারা কম পারে বা কম জানে বিষয়টা এমন নয়। সরকার যেহেতু এখন কওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছে আমার মনে হয় এর মাধ্যমে তাদের জতীয়ভাবে কাজ করার ক্ষেত্র তৈরি হবে।
ইউনুস আলী কামিল, সিরাজগঞ্জ আলিয়া মাদরাসার
প্রত্যেকটা মানুষকেই শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ কুরআনের শিক্ষা। হাদিসে তো এসেছে ইলমে দ্বীন অর্জন করা প্রত্যেকের উপর ফরজ। তাই এই শিক্ষা অবশ্যই আমাদের অর্জন করতে হবে। তবে একটা শিক্ষা ব্যবস্থার সরকারি স্বীকৃতি না থাকলে একটা সময় শিক্ষার্থীদের বেগ পেতে হয়। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় সকল কাজে যারা আছেন তাদের মাঝে দ্বীনের বুঝ তথা দ্বীনের শিক্ষা নেই। যার ফলে তারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ দুর্নীতির মাধ্যমে লুট করে থাকে কিন্তু একজন দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি যখন রাষ্ট্রীয় এই সব কাজের দায়িত্ব পালন করবে তখন এদেশ একটি দুর্নীতি মুক্ত দেশ হবে সাথে সাথে আমাদের দেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিশ্বের দরবারে নতুন করে পরিচয় লাভ করবে। আরেকটি বিষয় স্বীকৃতির ফলে আলিয়া মাদরাসা তার আদর্শ থেকে কিছুটা বিচ্যুত হয়েছে এ কারণে কওমির স্বীকৃতি হওয়া উচিত নয়। এমন অযুহাতের কোনো ভিত্তি আছে বলে মনে হয় না। স্বকীয়তা রক্ষার আন্দোলন স্বীকৃতির পরও সম্ভব।
আরআর