ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ: বেফাক পরীক্ষার ফলাফর প্রকাশের পরিচিত এক ছেলেকে ফোন দিলাম। ওর পরীক্ষার ফলাফলটা জানার জন্য। প্রথমে বলল আমাদের এই মফস¦ল শহওে ইন্টারনেটের অনেক প্রবলেম তাই ফলাফলটা এখনও দেখতে পারিনি। বললাম তোমার রোল নম্বার আমাকে দাও। আমি দেখে দিচ্ছি। এবার বলল ভাইয়া আমি তো আমার কোর্ড নম¦ারটা ভুলে গেছি।
পরিচিত এই ছেলেটি ঢাকার বড় একটি নামকরা মাদরাসায় লেখাপড়া করে। কথায় কথায় তার কাছে আরো জানতে পারলাম সে মেশকাত জামাতে পড়া শেষ করে বাড়ি যাওয়ার সময়ই দাওরা হাদিসে ভর্তিও কাজ সেরে ফেলেছে। সুতরাং বেফাকের ফলাফলটা তার জানার প্রয়োজন খুব একটা নেই।
বেফাকের ৩৯ তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল। পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৭২ দশমিক ২৯ শতাংশ। মুমতায (স্টার মার্ক) হয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ১১ হাজার ২৭৭ জন। জায়্যিদ জিদ্দান (প্রথম বিভাগ) হয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৩ জন শিক্ষার্থী। কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ ক্লাস তাকমিলে (স্নাতকোত্তর ডিগ্রি) এবারের পরীক্ষায় পাসের হার ছাত্রদের ৭৪ শতাংশ, ছাত্রীদের ৬৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ফযিলত (স্নাতক ডিগ্রি) ছাত্রদের পাসের হার ৬৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং ছাত্রীদের ৬২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সানাবিয়্যাহ (উচ্চ মাধ্যমিক) ছাত্রদের পাসের হার ৬৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং ছাত্রীদের ৫৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। মুতাওয়াসসিতাহ (নিম্নমাধ্যমিক) ছাত্রদের পাসের হার ৮১ দশমিক ১০ শতাংশ, ছাত্রীদের ৬৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ইবতিদাইয়্যাহ (প্রাইমারি) ছাত্রদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৪৬ শতাংশ ও ছাত্রীদের ৬১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এবারের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৭২ দশমিক ২৯ শতাংশ। এর বাইরে একটা বড় অংশ রয়ে গেছে যারা পাশ করতে পারেনি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এই ফেল করা ছাত্ররাও দিব্যি উপরের ক্লাসে উঠে যাচ্ছে। ফেল করলেও তাদের আগের ক্লাসে দ্বিতীয়বার থাকতে হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে- বেফাকে পাস করার তাহলে অর্থ কী?
এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছিল কয়েকজন ছাত্রের কাছে। তবে তারা কেউ নিজেদের নাম প্রকাশ করার শর্তে মতামত দেননি। নাম গোপন রাখার শর্তে তাদের অধিকাংশ জনই বলেছেন, কওমি মাদরাসার যেহেতু সরকারি সার্টিফিকেট নেই এ কারণে ফেল করলেও একজন ছাত্রকে উপরে তুলে দেয়া হয়। কেননা একই ক্লাসে দুইবার পড়তে বাধ্য করা হলে হয়তো বা সে মাদরাসা ছেড়ে চলে যাবে। কিংবা আর মাদরাসায়ই পড়বে না।
এই বিষয়ে কথা হয় বিশিষ্ট মুহাদ্দিস লেখক ও গবেষক মাওলানা মুহাম্মাদ যাইনুল আবিদিনের সঙ্গে। তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, এ ব্যাপারে বেফাককে দোষ দেয়ার কিছু নেই। স্কুল কলেজেও অনেক ছাত্র আছে যারা লেখাপড়া করছে কখনো পরীক্ষা দিচ্ছে আবার কখনো পরীক্ষা দিচ্ছে না। আবার যারা পরীক্ষায় ফেল করেছে তাদের কোথাও ভর্তি করা না হলে প্রশ্ন উঠবে আমরা মেধার অবমূল্যায়ন করছি।
একই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় বারিধারা মাদরাসার ভাইস পিন্সিপাল নাজমুল হাসানের কাছে। তিনি আওয়াল ইসলামকে বলেন, বেফক জাতীয় বা সরকারনিয়ন্ত্রিত কোন প্রতিষ্ঠান না তাই এই ক্ষেত্রে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। এ ছাড়াও বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠান বেফাকের অন্তরভুক্ত না। তাই এটা কার্যকর করা সম্ভব না। এ ছাড়া আমরা সনদের চেয়ে মেধা রমূল্যায়ন বেশি করি।
তবে মেধার পরিচয় যেহেতু পরীক্ষাতেই পাওয়া যায় পুরোপুরি সে কারণে, পরীক্ষা পাশের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার দাবি অনেক ছাত্রের। মালিবাগের ছাত্র আবদুল আলিম জানিয়েছেন, পাস ফেলের বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। যারা ফেল করেছে তাদেরও যদি পরের জামাতে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয় তবে ভবিষ্যতে এই পরীক্ষাগুলো গুরুত্ব হারাতে থাকবে। ছাত্ররা পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহী হয়ে উঠবে। এ কারণে পরীক্ষায় পাশ হারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ারও কথা বলেন তিনি।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর