ঢাকা : জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ঢাকায় সফররত মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেছেন, ‘রিলিজিয়াস স্পিরিট থেকে নয়, অ্যাডভেঞ্চার থেকেই জঙ্গিরা এসব হামলা চালায়।’
সোমবার বিকেলে (১১ জুলাই) গণভবনে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সহায়তার এই প্রস্তাব দেয়ার সময় নিশা এমন কথা বলেন। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে কারিগরি ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহযোগিতা দিতেও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা জানান তিনি।
বিসওয়াল বলেন, ‘এ ধরনের সন্ত্রাস যেকোনো দেশের জন্যই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এর বিরুদ্ধে আমরা এক সঙ্গে কাজ করতে চাই।’
বিকেল ৫টায় শুরু হয়ে ঘণ্টাব্যাপী চলা এ বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বৈঠকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন নিশা দেশাই। এ সময় জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।’
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজেই সন্ত্রাসী হামলার শিকার। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে গিয়ে কয়েক দফা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি। সরকার সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সচেতন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।’
মানবাধিকার কমিশনগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানবাধিকার সংগঠনগুলো কেউ নিখোঁজ হলেই সরকারের ওপর দোষ চাপাতে চায়। বিষয়গুলো খতিয়ে না দেখেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দোষারোপ করে তারা।’
বৈঠকের সময় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন ঢাকায় সফররত মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক মার্কিন এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের কূটনীতিক পাড়ার অভিজাত এক রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মিকে হত্যা করে। সন্ত্রাসীদের ছোড়া গ্রেনেডে প্রাণ যায় ডিবির এসি রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন খানের।
পরদিন শনিবার (২ জুলাই) সকালে নিরাপত্তা বাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করে এবং পাঁচ জঙ্গির মৃতদেহ পাওয়া যায়।
এ ঘটনার ঠিক ৭ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সকাল সোয়া ৯টার দিকে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ও সন্ত্রাসী আবির নিহত হন। এছাড়া আহত হন আরো অন্তত ৮ জন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ৬ পুলিশ সদস্যকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হয়।
সপ্তাহের ব্যবধানে দুই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ঘটনা তদন্তে তিন দেশের প্রযুক্তি সহায়তা নেয়ার কথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। দেশ তিনটি হচ্ছে- ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর। এরই ধারবাহিকতায় দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রোববার (১১ জুলাই) সকালে ঢাকায় আসেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল।
সাম্প্রতিক হামলায় জড়িতদের বেশিরভাগই দেখা যাচ্ছে অভিজাত পরিবারের সন্তান এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বা সদ্য পাস করে বের হওয়া তরুণ। এরা ধর্ম চর্চা শুরু করেছে খুব সাম্প্রতিক সময়ে। আগে থেকে ধর্মের বিষয়ে তাদের উল্লেখযোগ্য জ্ঞান ছিল বলে কোনো প্রমাণ নেই। ফলে এসব তরুণ কীভাবে কার মাধ্যমে এমন উগ্রবাদী আদর্শে উজ্জীবিত হলো তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
সূত্র : বাংলামেইল