শামিম খান : জুন ১১, ২০১৬ দুই দিনের ঝটিকা সফরে ভারতে এসেছিলেন ফ্রান্সের কিংবদন্তি ফুটবলার জিনেদিন জিদান। মুম্বাইয়ের একটি রিয়েল এস্টেট গ্রুপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হতেই জিদানের এই ভারত সফর। ভারতে তাঁকে যেভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে তাতে তিনি মুগ্ধ।
জিদান খেলোয়াড় হিসেবে ছিলেন সফল, এখন কোচ হিসেবেও। তাঁর অধীনেই চ্যাম্পিয়নস লিগের একাদশ শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপের শিরোপা উপহার দেয়া এই ফুটবলার নিজেকে এখনই ভালো কোচ ভাবতে নারাজ। ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের প্রতি তাঁর এই মূল্যায়ন। সাক্ষাৎকারটির চৌম্বক অংশ তুলে হলো।
প্রথম দিকে ভারত সম্পর্কে আপনার ধারণা কেমন ছিল?
জিদান: ভারত সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল এটি একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। কিন্তু মুম্বাইয়ে পৌঁছানোর পর এখানকার মানুষকে দেখে বিস্মিত হয়েছি। এটি ব্যস্ত একটি শহর। আমাকে এভাবে বরণ করে নেয়া হবে আমি কল্পনাও করিনি। রিয়ালে খেলোয়াড় হিসেবে সফল ছিলেন, এখন এই দলেরই কোচ। কোচিং ক্যারিয়ারেওসফলতার পথ ধরেই এগুচ্ছেন। নিজের অভিষেক আসরেই দলকে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা উপহার দিয়েছেন।
এত সহজে এত কিছু কীভাবে সম্ভব হল?
জিদান: রিয়ালে আমি খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম। কিন্তু নিজেকে এখনো ভালো কোচ বিবেচনা করি না। আমি উন্নতির চেষ্টা করছি। তবে মাত্র ৫ মাসের মধ্যেই চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতব তা স্বপ্নেও ভাবিনি। কোচিং পেশাটা আমার কাছে খুবই জটিল মনে হচ্ছে। কারণ, কোচ হিসেবে আমি এখনও নবীন। আমার পরিচয় প্রথমত আমি একজন খেলোয়াড়। তবে সাফল্যের ধারা ধরে রাখাই এখন আমার লক্ষ্য। বেনেতিজকে সরিয়ে যখন আপনাকে রিয়ালের কোচ করা হল তখন দলের অবস্থা ছিল নাজুক।
আপনি খেলোয়াড়দের কী বলে উৎসাহিত করলেন যে, এত কম সময়ে রিয়াল ঘুরে দাঁড়াল?
জিদান: সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমার লক্ষ্য ছিল শুধু কাজ, কাজ এবং কাজ। বেনেতেজের অধীনে ওঁরা সঠিক পথেই ছিল। আমি শুধু আমার ২০ বছরের অর্জিত অভিজ্ঞতা ওদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম। এবং ওদেরকে একই ছাতার নীচে আনতে চেয়েছিলাম। কাজের প্রতিই আমার বেশি মনোযোগ ছিল। আমি সবমসয় ভাবতাম, আমার দলে বিশ্বের সেরা সব খেলোয়াড় রয়েছে। আমাদের শুধু কঠোর প্ররিশ্রম ও এর প্রতি মনোনিবেশ করা দরকার। কোনো কিংবদন্তি দলের কোচ হলে খেলোয়াড়দের মধ্যে অনেক সময় এক ধরনের ভীতি কাজ করে থাকে।
রিয়ালের কোনো খেলোয়াড়ের মধ্যে এ রকম কিছু দেখেছেন কি?
জিদান: আমি খেলোয়াড়দের মধ্যে আমার অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। শুরুর দিকে কয়েকজনের মধ্যে এরকম ভীতি লক্ষ্য করেছিলাম। কিন্তু আমি দলের সব খেলোয়াড়কে এক কাতারে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমার ব্যক্তিত্বকে মাঠে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি এবং এগুলো সঠিকভাবে কাজও করেছে।
খেলোয়াড়ি জীবনে কোন কোচ আপনাকে বেশি উৎসাহ জুগিয়েছেন?
জিদান: আমি বহু গুনী কোচের অধীনে খেলেছি। তাঁদের থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তবে আমার নিজস্ব ব্যক্তিস্বত্ত্বা আছে। আমি তাঁদের একজনের কাছ থেকে একেক বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আমি তিন বছর রিয়ালের সহযোগী কোচের দায়িত্ব পালন করেছি। সে সময় আমার অর্জিত সব অভিজ্ঞতাই ব্যাবহারের চেষ্টা করেছি। একজন ভালো কোচ হতে আমি প্রচুর কাজ করেছি। এবং ভালো কোচ হতে হলে এই প্ররিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এখনও হয়ে উঠতে পারিনি (হেসে)।
রিয়ালে একসময় বিশ্বের সেরা সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে মাঠ মাতিয়েছেন। তাঁদের একজন ব্রাজিলিয়ানতারকা রোনালদো। তাঁর সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা কেমন ছিল?
জিদান: আমি পৃথিবীর অন্যতম সেরা ফুটবলারের সঙ্গে খেলেছি। শুধু রিয়াল নয়, অন্য দলে থাকলেও রোনালদো ভালো খেলতো। সে কঠোর অনুশীলন করতো। প্রত্যেক ম্যাচের আগে আমাকে সে বলতো, ‘দেখো আজ আমি তোমার জন্য দু’টি গোলের সুযোগ তৈরি করে দেব।’ এবং সে তা করেও দেখাতো। ইউরো শুরু হয়ে গেছে। ১৯৯৮ আসরে আপনার একটা দারুণ স্মৃতি ছিল। ওই দলের অধিনায়ক এখন ফ্রান্সের কোচ। দিদিয়ের দেশম কি পারবেন ফরাসি জনগণকে আরেকটা উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দিতে? জিদান: ইউরো এবং বিশ্বকাপ দু’টোতেই তাঁর শিরোপা জয়ের অভিজ্ঞতা আছে। ফ্রান্সকে আরেকটি মৌলিক শিরোপা উপহার দেয়ার জন্য তিনিই আদর্শ ব্যক্তি।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /এআর