বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ।। ১৬ মাঘ ১৪৩১ ।। ৩০ রজব ১৪৪৬


শাশিয়ালীর পীর সাহেব রহ.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| সাদ আবদুল্লাহ মামুন ||

স্বপ্নে দেখলাম ছোট মামা ইউসুফ মিজির সঙ্গে কোথা থেকে যেন ফিরছি। মামা গাড়ি চালাচ্ছেন। আমি পাশে বসা। জটিল পথ। গাড়ি চালাতে হচ্ছে বেশ হুঁশ করে। মামার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি শাশিয়ালীর পীর সাহেবকে দেখেছেন? তাঁর সঙ্গে আপনার কোনো স্মৃতি আছে? মামা বললেন, হ্যাঁ।

শাশিয়ালীর পীর সাহেব রহ. চাঁদপুর উজানির হযরত মাওলানা কারী ইবরাহিম রহ.-এর বিশিষ্ট খলিফা। উজানির পীর সাহেব রহ.-এর মাধ্যমে এ দেশের লাখো মানুষ আল্লাহপ্রেমিক হয়েছেন। তিনি আমাদের ফরিদগঞ্জের শাশিয়ালী গ্রামে একাধিকবার আগমন করেছেন। শাশিয়ালী মাদরাসার ভিত্তি তিনি রেখেছেন।

শাশিয়ালীর পীর সাহেব হযরত কারী সফিউল্লাহ রহ. (মৃ. ১৯৮৩ ঈ.)-এর জীবনী সম্পর্কে কিছুটা জানা আছে। তারপরও আরও জানতে ইচ্ছে করে। তাকে নিয়ে বলতে ও লিখতে আগ্রহ জাগে। ছোটকাল থেকেই তাকে আমার আপন-আপন মনে হয়। আমরা তাঁর আত্মীয়ও। আমার ছোট নানা মাওলানা আবদুর রব রহ. তাঁর আদরের জামাতা। আবার আমরা পীর সাহেব রহ.-এর কাছের প্রতিবেশী। একদম পাশাপাশি বাড়ি। তাঁর বাড়ির উত্তর দিকের বাড়িটি আমাদের।

পীর সাহেব রহ.-এর সঙ্গে নানাজান মরহুম সিকানদার আলি মাস্টার ও মরহুম মোকাররম আলি নানার মহব্বতপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। মামাদেরও ছিল তাঁর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা। মাওলানা জাফর আহমাদ ও মাওলানা আবদুল হাই-সহ একাধিক মামা তাঁর শাগরিদ। আমাদের হাজি বাড়ির অনেকে শাশিয়ালী মাদরাসার ছাত্র।

আমার মরহুম নানি জোবায়দা খাতুনের কাছে একবার জানতে চেয়েছি, পীর সাহেব রহ. কি আমাদের বাড়িতে আসতেন? তাঁর মেয়েকে দেখতে? নানি বললেন, আসতেন। অনেক সময় খালের ওপারে দাঁড়িয়েও কথা বলতেন তোমার নানাদের সঙ্গে।

মেজো মামা আবু তালেব মিজি বলেন, পীর সাহেব রহ.-এর মেয়ের সঙ্গে তোমার ছোট নানার (মাওলানা আবদুর রব রহ.-এর) বিয়ের সময় আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি তখন ছোট ছিলাম। পীর সাহেব রহ. ও আমাদের বাড়ির মাঝে খাল থাকার কারণে সব সময় আসতে পারতেন না। কোনো দরকার হলে খালের ওপাড় থেকে আমাদের ডাক দিতেন। অনেক সময় তোমার মাওলানা আবদুল হাই মামার নাম ধরেও ডাক দিতেন।

পীর সাহেব রহ. ও আমাদের বাড়ির মাঝে একটি খাল রয়েছে। এই খাল দিয়ে নৌকা করে উজানির পীর সাহেব রহ., শাশিয়ালী পীর সাহেব রহ.-সহ বুযুর্গানে দীন চলাফেরা করেছেন। আগে সেটি পার হওয়ার সহজ ব্যবস্থা ছিল না। বাঁশের সাঁকো ও কাঠের পুল ছিল। পরে ১৯৯৮ সালের দিকে আমাদের হাজি বাড়ির সামনে ব্রিজ হয়েছে।  

পীর সাহেব রহ.-এর কবর শাশিয়ালী মাদরাসার মাকবারায়। মসজিদ ও হেফযখানার সঙ্গে। রাস্তার পাশে। আমরা স্কুলে যাওয়ার সময় তাঁর কবরটি দেখতাম। আমাদের হাঁটা তখন ধীর হয়ে যেত। পরস্পরে হইচই করা বন্ধ হয়ে যেত। কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শ্রদ্ধার সঙ্গে সালাম দিতাম। অনেকে শ্রদ্ধার কারণে সাইকেল থেকে নেমে সালাম করত।

তাকে ঘিরে এগুলি আমাদের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি। এখন শহরে আটকে যাওয়া জীবনে ফুরসত করে মাঝে মধ্যে যখন বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়, তখন এক-দুবার তাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়াতে; তাঁর কবরটি যিয়ারত করতে মন আনচান করে।

লেখক: মুহাদ্দিস, মুসলিম বাজার মাদরাসা মিরপুর-১২, ঢাকা

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ