|| আহমদ যাকারিয়া ||
নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের অযৌক্তিকতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ধার্মিক মেয়েরা পর্যন্ত সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ভয়েস পৌঁছে দিচ্ছে সমাজের কাছে। তাদের ভোকাল ব্যবহার করে সঙ্গতি-অসঙ্গতি তুলে ধরছে। অথচ এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগামী ভূমিকা রাখার কথা ছিল আমাদের কওমি মহিলা মাদরাসাপড়ুয়া মেয়েদের। তাদের দিকনির্দেশনা করে সংবাদ সম্মেলনের ব্যবস্থা করে দিয়ে আন্দোলনটাকে আরও গণমুখী করতে পারতাম আমরা। আর এই সুযোগে মহিলা মাদরাসার মেয়েদের যে শুধু প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল পড়ানোয় সীমাবদ্ধ না রেখে বৈশ্বিক রাজনীতি ও উম্মাহর সঠিক নেতৃত্ব তৈরি করা হচ্ছে এর একটা ম্যাসেজ সমাজকে স্মার্টলি দিতে পারতাম আমরা।
চাইলেই নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে পর্দানশীন শিক্ষিতা মহিলাদের সমন্বয়ে একটা সেমিনার বা সংবাদ সম্মেলন করা যেত মহিলা মাদরাসার শিক্ষার্থী, শিক্ষিকাকে সামনে রেখে। সংবাদ সম্মেলনে তিন-চারজন শিক্ষিকা নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার আপত্তি, ভিন্নতা, সমস্যা, সংকট, আশঙ্কা নিয়ে আলোচনা করলেন পয়েন্ট আকারে।
কেননা বিষয়টা যেহেতু নারী বিষয়ক, তাই প্রস্তাব, আপত্তি সবকিছুই আসতে হবে নারীদের পক্ষ থেকে। নারী বিষয়ে ইসলামপন্থী পুরুষদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসায় এটাকে নারীবাদী সংগঠন, বিভিন্ন এনজিও এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া নারীবিদ্বেষের ট্যাগ লাগিয়ে এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজের স্বার্থ বলে উপস্থাপন করে এক ধরনের বাইনারি তৈরি করে ফেলেছে ইতোমধ্যে।
সুতরাং ধর্ম, সমাজ ব্যবস্থা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচার, সংস্কৃতিকে সামনে রেখে সমাধান কোন পথে হতে পারে? এটার একটা স্থায়ী প্রস্তাব দেওয়া যেত প্রতিটি বিভাগে যদি মহিলা মাদরাসার ব্যানারে বা নতুন কোনো সামাজিক নাম ব্যবহার করে সংবাদ সম্মেলন করার মাধ্যমে।
কেননা নারী অধিকারের জায়গাটাকে পরিকল্পিতভাবে ইসলামের প্রতিপক্ষ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে। সেই জায়গা থেকে এটাকে ডিল করতে হবে খুবই সতর্কতার সাথে। নারীর অধিকার বা ন্যায্যতা যে ইসলামের প্রতিপক্ষ নয় বরং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে নারী তার প্রাপ্য অধিকার, নায্যতা ও হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এটাকে হাইলাইটস করতে হবে যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে।
এনজিওর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, নারী অধিকার এর পেছনের রহস্য, ইসলামকে জেনারালাইজ করে ইচ্ছে করে নারীর প্রতিপক্ষ কারা এবং কেন দাঁড় করাচ্ছে এর বিস্তারিত আলাপের পাশাপাশি শ্যাডো আইন বাস্তবায়ন হলে নারীর প্রাপ্য অধিকার সমুন্নত থাকবে নাকি সামাজিক অবক্ষয়ের দরজা উন্মুক্ত হবে সেটার বিস্তারিত আলাপ তুলে আনতে হবে নারীদের মধ্য থেকে। আর এটার নেতৃত্ব দিতে পারত দেশের হাজারও কওমি মহিলা মাদরাসা।
কিন্তু আমরা হতাশ হচ্ছি দেশের এত বড় সমস্যায় তাদেরকে অভিভাবক, মুহতামিম, শিক্ষকগণ সঠিক সময়ে সঠিক কাজে ব্যবহার করতে না পেরে।
তারা আছেন কীভাবে মহিলা মাদরাসায় পুরুষ উস্তাদ থেকে মহিলা উস্তাদকে অর্ধেক বেতন দেওয়া যায় সেই চিন্তায়।
লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট
এমএইচ/