ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়ত মুভমেন্ট বাংলাদেশের উদ্যোগে ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কাদিয়ানী ধর্ম ও সংখ্যালঘু অধিকার শীর্ষক আলোচনা সেমিনারে জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতী আব্দুল মালেক বলেন, কাদিয়ানিরা সাধারণ কাফের এবং মুনাফিকদের চেওয়েও নিকৃষ্ট যিন্দীক। প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘যারা ইসলাম গ্রহণ করে অথবা ইসলামের মধ্যেই আছে তারা মুসলিম। যারা ইসলাম গ্রহণ করে না অথবা অন্য কোন ধর্ম অনুসরণ করে এবং সেভাবেই নিজেদের পরিচয় দেয় তারা কাফের, অর্থাৎ সাধারণ অমুসলিম। যারা ইসলাম গ্রহণ করে না, ইসলামের মধ্যে থাকেও না, কিন্তু প্রকাশ্যে নিজেদেরকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়, তারা মুনাফিক। (সাধারণ কাফেরের চেয়ে এরা নিকৃষ্ট) আর যারা ইসলাম গ্রহণ করে না কিংবা ইসলামের মধ্যেও থাকে না, কিন্তু নিজেদেরকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয় এবং নিজেদের কুফরিগুলোকে ইসলাম হিসেবে সাব্যস্ত করে, তারা জিন্দিক। (কাফের এবং মুনাফিকের চেয়েও এরা নিকৃষ্ট) খতমে নবুওয়ত অস্বীকারকারী কাদিয়ানীরা শুধু কাফের নয়, তারা প্রথম সারির জিন্দিক; অর্থাৎ নিকৃষ্টতম কাফের। এজন্য খতমে নবুয়তের আকীদার গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং কাদিয়ানীদের কুফরির স্বরূপ সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়ত মুভমেন্ট বাংলাদেশ কর্তৃক আায়োজিত কাদিয়ানী ধর্ম ও সংখ্যালঘু অধিকার শীর্ষক আলোচনা সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনটি আমীর মুফতি শুয়াইব ইবরাহীম। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমীর পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে আগত শায়েখ আব্দুর রঊফ বিন আবদুল হাফিজ মাক্কী এবং কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি মদীনা শরীফ থেকে আগত শায়েখ ড. আহমাদ আলী সিরাজ মাদানী।
প্রবন্ধে বলা হয়- ইসলাম ধর্মের একটি মৌলিক আকীদা হলো খতমে নবুওয়তের বিশ্বাস, যা কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য দলিল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং গোটা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রমাণিত। তবে কাদিয়ানী সম্প্রদায় এই আকীদার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে খতমে নবুওয়তের ধারণাকে অস্বীকার করে এবং নবীজির (সা.) পুনর্জন্মের মতবাদ প্রচার করে। তারা হযরত ঈসা (আ.)-কে মৃত বলে দাবি করে এবং কুরআনের ত্রিশটি আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে। তারা ইসলামের মৌলিক নিদর্শনাবলীকে অসম্মান করে কুফরি আকীদা প্রচার করছে। সেমিনারে কাদিয়ানিদের সর্ম্পকে রাবেতাতুল আলম আল ইসলামী (মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ), ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এর সিদ্ধান্ত ও বিভিন্ন দেশের আদালতের রায়সহ পাকিস্তান ন্যাশনাল এসেম্বলী কর্তৃক কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে সংখ্যালঘু অমুসলিম ঘোষনার বর্ণনা করা হয়।
প্রবন্ধকার সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে দেশের সংখ্যাগুরু নাগরিকদের জোর দাবি হল- মুসলিম বিশ্বের আদালতসমূহের রায় এবং আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ ইসলামী সংস্থা ''ওআইসির'' সদস্যদেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারেরও উচিৎ অবিলম্বে কাদীয়ানিদেরকে সরকারীভাবে ''সংখ্যালঘু অমুসলিম' ঘোষনা করা এবং তাদের জন্য ইসলামী পরিভাষাসমূহের ব্যাবহার নিষিদ্ধ করা । আর যদি সরকারীভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করে তাদেরকে পৃথক একটি ধর্মাবলম্বী দল হিসাবে চিহ্নিত করা না হয়, তাতে মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে বহুবিধ সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং হতে থাকবে। যেমন—
১. তারা মুসলমান পরিচয়ে নিজেদের মতবাদ প্রচার করলে সাধারণ মুসলমান প্রতারিত ও বিভ্রান্ত হয়ে নিজেদের সবচেয়ে বড় সম্পদ ঈমান হারিয়ে ফেলে।
২. কাদিয়ানিরা তাদের উপাসনালয়কে মসজিদের মতো বানায় এবং মসজিদ দাবি করে। আর সাধারণ মুসলমান মসজিদ মনে করে সেখানে নামায পড়লে ঈমানের পরে সর্বোচ্চ ইবাদত তার নামায নষ্ট হয়।
৩. কাদিয়ানি ধর্মমতের অনুসারী কোনো ব্যক্তি মুসলমানের মসজিদের ইমাম সেজে তাদের ঈমান— আমল নষ্ট করতে পারে।
৪. তাদের রচিত ও প্রকাশিত বইপত্রকে মুসলমানদের লেখা বই— পুস্তকের মত মনে করে পাঠ করে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং ঈমান হারিয়ে বসে।
৫. তারা মুসলমান নামে পরিচিত হওয়ার কারণে সাধারণ মুসলমানরা তাদের সাথে মুসলনামানের মত আচার— আচরণ ও চলাফেরা করে। অথচ তাদের সাথে মুসলমানের সম্পর্ক সাধারণ অমুসলিমদের মত হওয়া উচিত।
৬. অনেক সাধারণ মুসলমান তাদেরকে মুসলমান মনে করে নিজেদের বিবাহের উপযুক্তা মেয়েদের কাদিয়ানি ছেলের সঙ্গে বিবাহ দিয়ে অমুসলিমদের হাতে নিজেদের কন্যা তুলে দেয় এবং মুসলিম পাত্রের জন্য কাদিয়ানি ধর্মাবলম্বী লোকের মেয়েকে মুসলমান না করে বধু হিসেবে বরণ করে। ফলে এরূপ দম্পতি আজীবন ব্যভিচারের গুনাহে লিপ্ত থাকে।
৭. যে কোনো কাফের তথা অমুসলিমের জন্য হারাম শরীফে (মক্কা মদীনায়) ঢোকা নিষেধ। অথচ কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের লোকেরা মুসলিম পরিচয় দিয়ে হজ্ব ও চাকরি— বাকরির নামে সৌদি আরবে গিয়ে হারাম শরীফে প্রবেশ করে তার পবিত্রতা নষ্ট করার সুযোগ পায়।
৮. কোনো সম্পদশালী মুসলমান কোনো কাদিয়ানি ধর্মাবলম্বী গরীবকে যাকাত দিলে তার ফরয যাকাত আদায় হয় না।
আলোচনা সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী মহাসচিব, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ ও মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া সভাপতি, খতমে নবুওয়ত পরিষদ বাংলাদেশ। আমন্ত্রিত সুধীবৃন্দ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক দেশের কণ্ঠ ও দি ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকার সম্পাদক মোঃ আলমগীর হোসেন, বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিক ও সিনিয়র সাংবাদিক নাসির আহমেদ, খানগ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ এনামুল কবীর খাঁন।
ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়ত মুভমেন্ট বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুফতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে আরও আলোচনা করেছেন- হযরত মাওলানা মুফতি মোহাম্মাদ আলী মুহতামিম-আফতাবনগর মাদরাসা, হযরত মাওলানা মুফতি বশীরুল্লাহ শাইখুল হাদীস- মাদানীনগর মাদরাসা, ড. মাওলানা এ টি এম ফখরুদ্দীন প্রফেসর- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক আলেম শরীফ মুহাম্মাদ, মুফতি মুহিব্বুল হক শাইখুল হাদীস- ইসলামপুর মাদরাসা, গোপালগঞ্জ ও মুফতি আব্দুল মাজীদ শিক্ষক।
কেএল/