শায়খ ড. সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ
(২৭-১০-১৪৪৬ হিজরি মোতাবেক ২৫-০৪-২০২৫ ঈসায়ি তারিখে বাইতুল্লাহ শরীফে প্রদত্ত জুমার খুতবা)
আমি নিজেকে ও তোমাদেরকে তাকওয়া অবলম্বনের উপদেশ দিচ্ছি। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, নিজেদের শরীর পরিষ্কারের আগে অন্তরকে পরিষ্কার করো ও হাতের কাজ ঠিক করার আগে জিভের ব্যবহার ঠিক করো। মানুষের সঙ্গে তাদের কাজ দেখে ব্যবহার করো, শোনা কথা অনুসারে নয়। তোমাদের ভাইদের সম্পর্কে অন্যের কাছ থেকে শোনার আগে সরাসরি তাদের কাছ থেকেই শুনো। তোমাদের ভাইদের প্রতি সুধারণা রাখো ও নিজেদের খারাপ ধারণা থেকে সাবধান থেকো। বিদায়ের সৌজন্য হচ্ছে গোপন বিষয় গোপন রাখা। যে ব্যক্তি তার দরজা তোমাদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে, তার দরজায় নক করো না। নিজেদের সততার মাধ্যমে ভাইদের ভালোবাসা অর্জন করো, কৃত্রিম আচরণের মাধ্যমে নয়। প্রত্যেকেই সে অনুযায়ী প্রতিদান পাবে যেমন আচরণ সে করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقُلۡ لِّعِبَادِیۡ یَقُوۡلُوا الَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ ؕ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ یَنۡزَغُ بَیۡنَہُمۡ ؕ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ کَانَ لِلۡاِنۡسَانِ عَدُوًّا مُّبِیۡنًا
অর্থাৎ, আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বল। নিশ্চয়ই শয়তান এদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়; শয়তান তো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বনী-ইসরাঈল, আয়াত: ৫৩)
ঈমান, ইবাদত, পৃথিবী গড়ে তোলা ও তা সংশোধন করা— এ চারটি জিনিস একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। মহান আল্লাহ বলেন, ؕ ہُوَ اَنۡشَاَکُمۡ مِّنَ الۡاَرۡضِ وَاسۡتَعۡمَرَکُمۡ فِیۡہَا
অর্থাৎ, তিনি তোমাদেরকে মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন ও তাতেই তিনি তোমাদের বসবাস করিয়েছেন। (সূরা হুদ, আয়াত: ৬১)
একজন মুসলমান যখন পৃথিবী গড়ে তোলে, তখন সেটা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে নিজের ও অন্যের উপকারের জন্য করে। তাই মুসলমান সেসব কাজে বিনিয়োগ করে যা মানুষের ও দেশের উপকারে আসে।
ঈমান সবসময় সৎকর্মের সঙ্গে থাকে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে, الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
অর্থাৎ, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে।' পড়াশোনাও আল্লাহর নামে করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন,اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ ۚ
অর্থাৎ, 'পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।' (সূরা আলাক, আয়াত: ০১) আর জ্ঞানও আল্লাহর ভয় বা ভক্তির সঙ্গে যুক্ত। আল কুরআনে বলা হয়েছে, اِنَّمَا یَخۡشَی اللّٰہَ مِنۡ عِبَادِہِ الۡعُلَمٰٓؤُا ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَزِیۡزٌ غَفُوۡرٌ
অর্থাৎ, 'আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই তাঁকে ভয় করে; আল্লাহ পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।' (সূরা ফাতির, আয়াত: ২৮) ঈমান হচ্ছে বুদ্ধির নেতা, যাতে বুদ্ধি অহংকার করে নিজেকে উপাস্য বানিয়ে না ফেলে। ঈমানই জ্ঞানের নিয়ন্ত্রক, যাতে জ্ঞানের নেতিবাচক দিক মানবজাতির পতন ডেকে না আনে।
আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা অতীতের জাতিসমূহের কথা বলেছেন, তারা কত শক্তিশালী, উন্নত ও গৌরবময় হয়েছিল, তারপর কীভাবে ধ্বংস হয়েছিল— এর কারণও বর্ণনা করেছেন, যেন আমরা আল্লাহর নিয়ম বুঝতে পারি। উদাহরণ হিসেবে মহান আল্লাহ ‘আদ’ জাতির গৌরবের কথা বলেছেন, اِرَمَ ذَاتِ الۡعِمَادِ ۪ۙ الَّتِیۡ لَمۡ یُخۡلَقۡ مِثۡلُہَا فِی الۡبِلَادِ ۪ۙ
অর্থাৎ, 'ইরাম গোত্রের প্রতি-যারা অধিকারী ছিল সুউচ্চ প্রাসাদের? যার সমতুল্য কোন দেশে নির্মিত হয় নাই।' (সূরা ফাজর, আয়াত: ৭-৮) এটা তাদের মহিমা, সৌন্দর্য ও উন্নতির প্রমাণ। কিন্তু আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, فَاَمَّا عَادٌ فَاسۡتَکۡبَرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ وَقَالُوۡا مَنۡ اَشَدُّ مِنَّا قُوَّۃً ؕ اَوَلَمۡ یَرَوۡا اَنَّ اللّٰہَ الَّذِیۡ خَلَقَہُمۡ ہُوَ اَشَدُّ مِنۡہُمۡ قُوَّۃً ؕ وَکَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا یَجۡحَدُوۡنَ
অর্থাৎ, 'আর আদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার এই যে, এরা পৃথিবীতে অযথা দম্ভ করত ও বলত, ‘আমাদের অপেক্ষা শক্তিশালী কে আছে?’ এরা কি তবে লক্ষ্য করে নি যে, আল্লাহ, যিনি এদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি এদের অপেক্ষা শক্তিশালী? অথচ এরা আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করত।' (সূরা হা-মীম সিজদা, আয়াত: ১৫)
তাদের শক্তি তাদের ধোঁকায় ফেলেছিল, তারা আল্লাহর রাসুলদের অস্বীকার করেছিল এবং অহংকার ও অবিশ্বাসের কারণে ঈমানের আহ্বান ফিরিয়ে দিয়েছিল। যে কেউ আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও আল্লাহর নিদর্শন অস্বীকার করে, সে অন্ধকারেই নিমজ্জিত থাকে — যত জ্ঞান বা শক্তিই তার থাকুক না কেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, وَالَّذِیۡنَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا صُمٌّ وَّبُکۡمٌ فِی الظُّلُمٰتِ ؕ مَنۡ یَّشَاِ اللّٰہُ یُضۡلِلۡہُ ؕ وَمَنۡ یَّشَاۡ یَجۡعَلۡہُ عَلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ
অর্থাৎ, 'যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তারা বধির ও মূক, অন্ধকারে নিমজ্জিত।' (সূরা আনআম, আয়াত: ৩৯) মহান আল্লাহ তাঁর নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, کِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰہُ اِلَیۡکَ لِتُخۡرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ۬ۙ بِاِذۡنِ رَبِّہِمۡ اِلٰی صِرَاطِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَمِیۡدِ ۙ
অর্থাৎ, 'এই কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে বের করে আনতে পার অন্ধকার হতে আলোকে, তাঁর পথে যিনি পরাক্রমশালী, প্রশংসার্হ।' (সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ০১) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ہُوَ الَّذِیۡ یُنَزِّلُ عَلٰی عَبۡدِہٖۤ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ لِّیُخۡرِجَکُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ؕ وَاِنَّ اللّٰہَ بِکُمۡ لَرَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ
অর্থাৎ, 'তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াত অবতীর্ণ করেন, তোমাদেরকে অন্ধকার হতে আলোকে আনবার জন্যে।' (সূরা হাদীদ, আয়াত: ০৯)
সুতরাং, শক্তি ও সম্মান আসে ঈমান ও তাকওয়ার মাধ্যমে। জয় ও টিকে থাকা আসে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মর্যাদা দেওয়ার মাধ্যমে। জ্ঞান যত উন্নত হোক, শিল্পকলা যত উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কার করুক — এগুলো একা মানুষের প্রকৃত সুখ বা শান্তি এনে দিতে পারে না। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে, وَلَعَبۡدٌ مُّؤۡمِنٌ خَیۡرٌ مِّنۡ مُّشۡرِکٍ وَّلَوۡ اَعۡجَبَکُمۡ ؕ
অর্থাৎ, 'মুশরিক পুরুষ তোমাদেরকে মুগ্ধ করলেও, মুমিন ক্রীতদাস তা অপেক্ষা উত্তম।' (সূরা বাকারা, আয়াত: ২২১) এটা কুরআন কর্তৃক বিজ্ঞানের, আবিষ্কারের বা শিল্পকলা ও তাদের উন্নতির অবমূল্যায়ন নয়, বরং এটি মনে করিয়ে দেয় যে, মানুষের আত্মা পরিশুদ্ধ করতে ও মানবজাতির পথনির্দেশের জন্য আল্লাহর ওহির আলো অবশ্যই প্রয়োজন।
জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ধারাবাহিক উন্নতির ফলেই আজ মাটির কুঁড়েঘর ও কাদামাটির ঘর থেকে শুরু করে আকাশছোঁয়া অট্টালিকা ও সুউচ্চ ভবন নির্মাণে পৌঁছেছে। যানবাহনের ক্ষেত্রেও যুগের পর যুগ পরিবর্তন হয়েছে — আগে পশুপালন ও চড়ার জন্য গাধা, ঘোড়া, উট ছিল; এরপর এসেছে গাড়ি, ট্রেন ও উড়োজাহাজ।
পত্র যোগাযোগের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন ঘটেছে — আগে পায়ে হেঁটে বা পায়রা দিয়ে চিঠি পাঠানো হতো, এখন তা রূপ নিয়েছে ডিজিটাল মেইলে।
এসব আবিষ্কার ও উন্নতি নিঃসন্দেহে দারুণ সুন্দর, উপকারী ও ব্যবহারে অনেক আরামদায়ক, তবে সব কিছু সত্ত্বেও এগুলো কখনো ঈমানের বিকল্প হতে পারেনি। এগুলো আত্মার পরিশুদ্ধি ও মানুষের মর্যাদার বিকল্পও হতে পারেনি। আপনারা খেয়াল করে দেখুন! আজও নৈতিকতা, মানবাধিকার, যুদ্ধের ভয়াবহতা, শরণার্থী সমস্যা, গৃহচ্যুতি, দারিদ্র্য, অত্যাচার, স্বৈরশাসন ও নীতিমালার বিশৃঙ্খলার মতো বিষয়গুলো কীভাবে মানুষের জীবনকে তছনছ করে দিচ্ছে। মনে রাখতে হবে, প্রকৃত সম্মান আল্লাহর, তাঁর রাসুলের ও মুমিনদের জন্যই।
আল্লাহর ওহির আলোই সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বোচ্চ ও সর্বমূল্যবান আলো।
একজন মুমিনের উচিত এই আলোর মূল্য, মর্যাদা ও শক্তিকে জানা।
কখনো মুমিন যেন বস্তুগত উন্নতির সামনে নিজেকে ছোট মনে না করে বা লজ্জিত না হয়। মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন, کِتٰبٌ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ فَلَا یَکُنۡ فِیۡ صَدۡرِکَ حَرَجٌ مِّنۡہُ لِتُنۡذِرَ بِہٖ وَذِکۡرٰی لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ
অর্থাৎ, 'তোমার নিকট কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, তোমার মনে যেন এর সম্পর্কে কোন সঙ্কোচ না থাকে এর মাধ্যমে সতর্কীকরণের ব্যাপারে। আর মুমিনদের জন্যে এটা উপদেশ।' (সূরা আরাফ, আয়াত: ২)
ঈমানই হচ্ছে বুদ্ধির নেতা ও জ্ঞানের রক্ষক। যখন বুদ্ধি ঈমান থেকে আলাদা হয়ে যায়, তখন মানবসভ্যতার উন্নতি ধ্বংস হয়ে যায়।
আর যখন বুদ্ধি জ্ঞানের সঙ্গে খেলা করে, তখন সত্য-মিথ্যা, ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। নীতিমালা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। রাজনীতি নীতির ওপর নয়, স্বার্থের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু যদি জ্ঞান ও ঈমান একত্রে থাকে, তাহলে সমাজের উন্নতি সঠিক পথে হয়, উন্নতি টেকসই হয়। তখন উন্নয়নের রেলগাড়ি সঠিক লাইনে চলে।
মহান আল্লাহ বলেন, وَاللّٰہُ غَالِبٌ عَلٰۤی اَمۡرِہٖ وَلٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ
অর্থাৎ, 'আল্লাহ তাঁর কার্য সম্পাদনে অপ্রতিহত; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।' (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ২১) আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন,
وَکَذٰلِکَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ رُوۡحًا مِّنۡ اَمۡرِنَا ؕ مَا کُنۡتَ تَدۡرِیۡ مَا الۡکِتٰبُ وَلَا الۡاِیۡمَانُ وَلٰکِنۡ جَعَلۡنٰہُ نُوۡرًا نَّہۡدِیۡ بِہٖ مَنۡ نَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِنَا ؕ وَاِنَّکَ لَتَہۡدِیۡۤ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ۙصِرَاطِ اللّٰہِ الَّذِیۡ لَہٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَمَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ اَلَاۤ اِلَی اللّٰہِ تَصِیۡرُ الۡاُمُوۡرُ
অর্থাৎ, 'এইভাবে আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি রূহ তথা আমার নির্দেশ; তুমি তো জানতে না কিতাব কী ও ঈমান কী। পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো যা দিয়ে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করি। তুমি তো প্রদর্শন কর কেবল সরল পথ। সেই আল্লাহর পথ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার মালিক। জেনে রাখ, সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তন করে।' (সূরা শুরা, আয়াত: ৫২-৫৩)
মানবসভ্যতার গড়া ও ভাঙা — দুটোই মানুষের হাতে। আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি করেছেন যেন তারা পৃথিবী গড়ে তোলে। তাই সমাজের উন্নতি বা অবনতি — সবই মানুষের নিজের ওপর নির্ভর করে।
বাইরের পরিবর্তন তখনই সম্ভব যখন মানুষের ভেতরকার পরিবর্তন ঘটে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, اِنَّ اللّٰہَ لَا یُغَیِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتّٰی یُغَیِّرُوۡا مَا بِاَنۡفُسِہِمۡ ؕ
অর্থাৎ, 'আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না এরা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে।' (সূরা রাদ, আয়াত: ১১) আল্লাহর নিয়ম হলো, যে জিনিস মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে, সেটাই টিকে থাকে। আর যেটা মানুষের কোনো উপকার করে না, সেটা বিলীন হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, فَاَمَّا الزَّبَدُ فَیَذۡہَبُ جُفَآءً ۚ وَاَمَّا مَا یَنۡفَعُ النَّاسَ فَیَمۡکُثُ فِی الۡاَرۡضِ
অর্থাৎ, 'যা আবর্জনা তা ফেলে দেওয়া হয় ও যা মানুষের উপকারে আসে তা জমিতে থেকে যায়।' (সূরা রাদ, আয়াত: ১৭) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, وَاِنۡ تَتَوَلَّوۡا یَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَیۡرَکُمۡ ۙ ثُمَّ لَا یَکُوۡنُوۡۤا اَمۡثَالَکُمۡ
অর্থাৎ, 'যদি তোমরা বিমুখ হও, তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন; তারা তোমাদের মত হবে না।' (সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৮) সুতরাং, আল্লাহকে ভয় করুন ও জেনে রাখুন, প্রকৃত সফলতা আসে বিশুদ্ধ ঈমান থেকেই। বিশুদ্ধ ঈমানই মানুষের চরিত্রে সত্যবাদিতা, আন্তরিকতা, বিশ্বস্ততা, পবিত্রতা, আত্মসমালোচনা, প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ, সত্যকে প্রাধান্য দেওয়া, সুদূরদর্শিতা, উচ্চ মানসিকতা, উদারতা, আত্মত্যাগ, বিনয়, ন্যায়পরায়ণতা, পরিমিতিবোধ, শ্রবণ, আনুগত্য ও শৃঙ্খলা পালনের গুণাবলি সৃষ্টি করে।
অনুবাদ: আবদুল কাইয়ুম শেখ, মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, পোস্তা, চকবাজার, ঢাকা-১২১১
এমএইচ/