মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫ ।। ৯ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬


সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে পারে ইসলামপন্থীদের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশেষ প্রতিনিধি,

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বতী সরকারের সঙ্গে দেশের ইসলামপন্থীদের বোঝাপড়া শুরু থেকেই বেশ ভালো। শুরুর দিন থেকেই সরকারের পাশে জোরালোভাবে দাঁড়িয়েছে ইসলামি দলগুলো। নানা সংকটে সরকারকে সাপোর্ট করেছে ইসলামিস্টরা।

তবে এবার নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে স্পষ্ট বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে ইসলামপন্থীদের। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা না নিলে এই বিরোধ আরও বাড়তে পারে। এমনকি সাংঘর্ষিক রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো সামনের আসার সঙ্গে সঙ্গে ইসলামপন্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এর বেশ কিছু ধারা সরাসরি কোরআন-হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এমনকি কোনো কোনো ধারা বিশ্বাস করলে তার ঈমান থাকবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ আলেমরা।তাছাড়া এই সুপারিশগুলোর সঙ্গে এদেশের চিরায়ত সংস্কৃতি এবং সাধারণ বাঙালি নারীদের জীবনধারার কোনো মিল নেই বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।

গত তিন দিন ধরে ইসলামপন্থীদের পক্ষ থেকে এই ইস্যুতে নানাভাবে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়েছে। এদেশের দীনদার মুসলমানদের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সংবাদ সম্মেলন করে এই সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পুরো কমিশন বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছে।

হেফাজতের পক্ষ থেকে আগামী ৩ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। সেখানে যে পাঁচ দাবিতে এই মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে এর মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এই ইস্যুটাকে। ৩ মের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে হেফাজতের পক্ষ থেকে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

শুধু হেফাজতে ইসলামই নয়, জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের প্রায় সব ইসলামি দলের পক্ষ থেকে নারী কমিশনের সুপারিশের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। অনেকে পয়েন্ট ধরে ধরে কোনটা কীভাবে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সেটা জানিয়েছে। সচেতন আলেমদের একটি অংশ কমিশনের সুপারিশ পুরোটা সংগ্রহ করে খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ছে। শিগগির এ ব্যাপারে পয়েন্ট ধরে ধরে ইসলামবিরোধী ধারাগুলো জনসম্মুখে তুলে ধরা হবে।আগামী শুক্রবার প্রতিটি মসজিদের মিম্বর থেকে এ বিষয়ে আওয়াজ তোলার প্রস্তুতি চলছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় সংগঠন সেদিন বিক্ষোভ করবে বলেও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইসলামপন্থীদের পক্ষ থেকে নানা আপত্তি, প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হলেও এখনো সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এই ইস্যুতে সরকারের মধ্যে অস্বাভাবিক নীরবতা কাজ করছে। এটাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না দেশের আলেম-উলামা ও তৌহিদি জনতা।তারা বলছেন, সরকারকে পেছন থেকে কেউ চালাচ্ছে। এটা বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া সংস্কার। এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কখনো এই সংস্কার মেনে নেবে না।

তারা আরও বলছেন, এই বিতর্কিত সংস্কারের কারণে সরকারে সামগ্রিক সংস্কারের সদিচ্ছার গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। যারা দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলছেন তাদের দাবিকেই জোরালো করবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বৃহৎ ইসলামি শক্তিকে ক্ষেপিয়ে সরকার এই সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারবে না। উল্টো সরকার তার বন্ধু হারাবে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যখন সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে চাপ দিচ্ছে, পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ যখন ফিরে আসার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন ইসলামপন্থীদের একটি বড় অংশ জোরালোভাবে সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ায় সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে। আরও বেশ কিছু কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাব করেছে। কোথাও ইসলামপন্থীরা বিরোধিতা করেনি।যেহেতু নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ইসলামপন্থীরা আপত্তি জানিয়েছে সুতরাং এ ব্যাপারে সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।

অনেকে সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের ওপর ভর করে ক্ষমতার মসনদে বসলেও দিন দিন বৃহৎ জনগোষ্ঠী সরকারের ওপর থেকে তাদের সমর্থন ও সহায়তা তুলে নিচ্ছে। ইসলামপন্থীরাও সরকারের ওপর থেকে তাদের সমর্থন তুলে নিলে সরকারের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। এজন্য কোনো মহলের ইশারায় সরকার এ ব্যাপারে গোয়ার্তুমি করবে না বলেই প্রত্যাশা করছেন ইসলামপন্থীরা। না হলে সরকার নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারবে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ